ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

একজিমা

প্রকাশিত: ০৬:১৫, ১৩ মার্চ ২০১৮

 একজিমা

একজিমা কি? একজিমা একটি চর্মের প্রদাহজনিত রোগ। যা একটি নির্দিষ্ট স্থানে প্রথমে ত্বক লালাভারণ ধারণ করে, তারপর সেখানটা একটু ফুলে উঠে এবং পরে ছোট ছোট দানা ও ফোস্কা বেরোয়। ফোস্কা ফেটে গিয়ে রস ঝরতে থাকে বা সেখানে জীবাণু দূষণের ফলে পুজ দেখা দেয়। কখনও আবার ছোট গুটিগুলো মিশে ত্বক পুরু ও শক্ত হয়ে যায়। একে বলে লাইকেনিফিকেসান। লাইকেনিফিকেসান দীর্ঘস্থায়ী হলে চামড়া খুবই পুরু ও শক্ত হয়ে ওঠে এবং বায়ুতে আর্দ্রতা কম থাকলে ফেটে চৌচির হয়, বড় বড় খোসা ওঠে, আর সেই সঙ্গে থাকে তীব্র চুলকানীর অনুভূতি মনে হয়, চুলকাতে চুলকাতে চামড়া ছিঁড়ে ফেললে বুঝি আরাম পাওয়া যাবে এবং অনেকে তা করেও ফেলেন। এই যে বিশেষ চর্মপ্রদাহ একেই বলা হয় একজিমা। একজিমা কয় ধরনের হয়ে তাকে? একজিমা দুই ধরনের হয়ে থাকে। ১। অভ্যন্তর এজিমা। যেগুলোর কারণ শরীরের অভ্যন্তরে নিহিত তাদের বলা হয় অভ্যন্তর একজিমা। অভ্যন্তর একজিমা আবার বিভিন্ন রকমের হতে পারে। যেমন- এ্যাটোপিক একজিমা লাইকেন সিমপ্লেক্স একজিমা সেবোরিক একজিমা পস্ফোলিক্স ক) হাতে খ) পায়ে পিটিরিয়াসিস এ্যালবা একজিমা ইড ইরাপশান একজিমা ভেরিকোজে একজিমা এক্সফোসিয়েটিভ একজিমা নামুলার একজিমা লাইকেন স্ট্রায়েটার অটো-ইমিউন প্রোজেস্টেরন ডার্মটাইটিস মানসিক চাপজণিত একজিমা। ২। বাহির একজিমা। যেসব একজিমার কারণ শরীরের বাইরে তাকে বাহির একজিমা বলে। বাহির একজিমা আবার বিভিন্ন শ্রেণীর হয়। যেমন- সংস্পর্শ একজিমা ক) উত্তেজনা প্রসূত খ) এ্যালার্জিজনিত জীবানু ঘটিত একজিমা স্ক্যবিয়াস একজিমা গাছপালা ও আলোকজনিত একজিমা অপুষ্টিজনিত একজিমা শীতের একজিমা ওষুধের এ্যালার্জি বা বিক্রিয়াজনিত একজিমা লাগানোর ওষুধের সংস্পর্শে একজিমা চর্ম প্রদাহ একজিমার কারণ কি? একজিমা হওয়ার কারণ বা প্রবণতা কিছুটা বংশগত। শরীরের ভিতরের গোলমালে একজিমা হতে পারে। বাইরের অনেক পদার্থ শরীরের সংস্পর্শে এসে একজিমা সৃষ্টি করে। একজিমার জন্য ত্বকের যে প্রদাহ তার একটা নির্দিষ্ট গতি আছে, তবে সব ক্ষেত্রে সেটি পুরোপুরি স্পষ্ট নাও হতে পারে। হয়ত কোন অবস্থা বেশি এবং কোনটি কম প্রকাশিত হলো, কোন অবস্থা একেবারেই বাদ গেল একই রোগীর ত্বকে বিভিন্ন পর্যায়ের একজিমা এক সঙ্গে দেখা দিতে পারে। যেমন রস গড়ানো একজিমা, লাইকেনিফায়েড একজিমা বা জীবাণু দূষিত একজিমা। কোন কোন ক্ষেত্রে এ্যালার্জির খোঁজ নাও পাওয়া যেতে পারে। হবাইরের কোন বিশেষ বস্তুতে এ্যালার্জির ফলেও একজিমা হতে পারে। হঅন্য কিছু রোগের সঙ্গেও একজিমা থাকতে পারে যেমন থাইরয়েড হরমোনজনিত সমস্যার সঙ্গেও একজিমা হতে পারে। শরীরের কোন কোন অংশে একজিমা হতে পারে? শরীরের বিভিন্ন অংশে একজিমা হতে পারে। যেমন- কানের এজিমা হাতের কুনইতে একজিমা চোখের পাতায় একজিমা স্তনের একজিমা শিশুদের ডায়াপার একজিমা হাতে, পায়ে একজিমা বিশেষ করে গৃহবধূর হাতে একজিমা। একজিমা কি বংশগত রোগ? কিছু কিছু একজিমা যেমন এ্যাটোপিক একজিমা লাইকেন সিমপ্লেকস বংশগত। তবে বাবা-মায়ের কারও থাকলে সব সন্তানেরই যে এ রোগ হবে এমন কোন বধ্যবাধকতা নেই। সংস্পর্শ একজিমা, স্ক্যবিয়াস একজিমা বা ছত্রাকজনিত একজিমার সঙ্গে সাধারণত বংশগত কোন সম্পর্ক পাওয়া যায় না। একজিমা কি ভাল হয় না? অবশ্যই ভাল হয়। সঠিক চিকিৎসা এবং যে কারণে একজিমা হচ্ছে তা পরিহার করতে পারলে বাইরের একজিমা প্রায় সব ক্ষেত্রেই নির্মূল হয়। অন্তর একজিমার অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রায় সব সময়ই সেরে যায়। তবে তার চিকিৎসা একটু দীর্ঘ স্থায়ী। অন্তর এ্যাকজিমা বার বার হওয়ার প্রবণতা অবশ্য কিছুটা থাকেই। একজিমা হলে কি লাগানো উচিত আর কি লাগানো উচিত নয়? একজিমা হলে নিমপাতার পানি বা ডেটল পানি দিয়ে কখনই পরিষ্কার করা উচিত নয়। একজিমার জায়গাটুকু শুধু পরিষ্কার ফুটানো ঠা-া পানি কিংবা ডাক্তারের পরামর্শ মতো লোশন দিয়ে ধোওয়া যেতে পারে। নিমপাতা বা অন্য গাছ গাছড়া, ডেটল, সাবান ইত্যাদি কখনও লাগানো উচিত নয় এতে একজিমা আরও বেড়ে যেতে পারে। খুব কম ক্ষার যুক্ত সাবান- যেমন গ্লিসারিন জাতীয় সাবান ব্যবহার করা যেতে পারে। ওষুধ বা নিমযুক্ত সাবান পরিহার করে চলা ভাল। আর বেশি মাত্রায় ক্ষারীয় সাবান, সরষের তেল, কাদা-মাটি, গাছপালা, চন্দন, নোংরা পানি, আনাজপত্র-বিশেষত পেঁপে, রসুন, পিঁয়াজ ইত্যাদির সংস্পর্শে আসা একজিমা রোগীর উচিত নয়। আবার বোরিক এসিডের মলম একজিমার ওষুধ নয়। একজিমার কারণ বিভিন্ন। শুধু এক ধরনের ওষুধেই সব একজিমা সারে না। বোরিক এসিডে অনেক রোগীর ত্বকে এলার্জি সৃষ্টি হয়। ফলে একজিমা বেড়ে যেতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শ না নিয়ে কোন মলমই লাগানো উচিত নয়। একজিমা রোগীর সমুদ্রে গোসল না করাই ভাল। নোনা পানি এবং বালির প্রভাবে একজিমা অনেক সময় বেড়ে যায়। একজিমায় কি স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ খাওয়া উচিত নয়? খুব বাধ্য না হলে অর্থাৎ একজিমা খুব বেশি মাত্রায় না হলে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া স্টেরয়েড ওষুধ কখনই খাওয়া উচিত নয়। স্টেরয়েড জাতীয় খাবার ওষুধে এমন অনেক বিক্রিয়া হয় যা দেহের পক্ষে অনেক সময় মারাত্মক হয়। একজিমা রোগে পারতপক্ষে খাবার স্টেরয়েড ওষুধ না দেওয়াই উচিত। এতে একজিমা সময়িকভাবে সারলেও পরে একজিমার পুনরার্বিভাব ঘটলে কোন ওষুধেই আর কাজ হতে চায় না। তবে ত্বকের উপরে লাগানোর স্টেরয়েড মলম ক্রীম বা লোশন লাগাতে কোন বাধা নেই। কারণ শরীরের ভেতরে তা খুব সামান্যই প্রবেশ করে। ছোট ছেলে-মেয়েদের ক্ষেত্রেও স্টেরয়েড ক্রিম লাগানো যেতে পারে। একজিমার পরীক্ষা-নিরীক্ষাগুলো কি কি? একজিমা চোখে দেখেই নির্ণয় করা যেতে পারে। কখনো কখনো কিছু কিছু ল্যাবরেটরীর পরীক্ষা করা যায় এবং কিছু কিছু ব্যতিক্রমিক ক্ষেত্রে চামড়া কেটে হিস্টোপ্যাথলজিক্যাল পরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে। একজিমার চিকিৎসা কি? একজিমার চিকিৎসা খুব বেশি কঠিন নয়। পটাশিয়াম পারমাঙ্গানেটের দানা ঈসৎ গরম পানির সঙ্গে রোজ এক থেকে দুই বার ক্ষতস্থানে ধৌত করা যেতে পারে। স্টেরয়েড মিক্সড এন্টিবায়োটিক মলম বা ক্রিম একজিমাতে রোজ ২ বার লাগাতে হবে সাত হতে ১৪ দিন। ক্ষেত্র বিশেষ আরও বেশিদিন প্রয়োজন হতে পারে। কখনো কখনো একজিমার সঙ্গে ফাঙ্গাল ইনফেকশন থাকলে এন্টি ফাঙ্গাল মলম এর সঙ্গে ব্যবহার করা যেতে পারে। মুখে খাওয়ার ওষুধ হিসাবে ফ্যাকজো ফেনাডিন ট্যাবলেট ১২০ মিলি গ্রাম রোজ ২ বার করে কয়েক সপ্তাহ খাওয়া যেতে পারে প্রাপ্ত বয়স্ক রোগীদের ক্ষেত্রে। শিশুদের ক্ষেত্রে এই ডোজটি আরও কম হবে। যদি যথেষ্ট পরিমাণে ব্যাকটেরিয়ার ইনফেকশন থাকে তাহলে মুখে এন্টিবায়োটিক ক্যাপসুল বা ট্যাবলেট খেতে হতে পারে ১ সপ্তাহ। কখনও কখনও একজিমার সঙ্গে ভিটামিনের অভাব থাকতে পারে। সেই ক্ষেত্রে ভিটামিন ট্যাবলেট বিশেষ করে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স ১ টা করে দুই বার ১৫ দিন থেকে ১ মাস খাওয়া যেতে পারে। ডাঃ দিদারুল আহসান চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ আল-রাজী হাসপাতাল ১২, ফার্মগেট, ঢাকা। ০১৭১৫৬১৬২০০
×