ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ইতালিতে ক্ষমতায় ইউরো বিরোধীরা!

প্রকাশিত: ০৬:৩৫, ১৪ মার্চ ২০১৮

ইতালিতে ক্ষমতায় ইউরো বিরোধীরা!

গত ৪ মার্চ ইতালিতে যে নির্বাচন হয়ে গেল তাতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বিরোধী লোকরঞ্জনবাদী দলগুলোর পক্ষে বিশাল জনসমর্থনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তথাপি নির্বাচনের ফলাফল থেকে এখনও সুস্পষ্ট চিত্র বেরিয়ে আসেনি কারা পরবর্তী সরকার গঠন করতে যাচ্ছে। তবে ক্ষমতায় যে বা যারাই যাক না কেন ব্রাসেলস যে ইইউর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রের তরফ থেকে এক বিশাল চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন সে ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। ৫০ শতাংশেরও বেশি ইতালিয়ানের ইউরোবিরোধী দলগুলোর বিরুদ্ধে ভোটদান ইইউ সমর্থক এস্টাবলিশমেন্টের প্রতি তাদের ক্ষোভের বহির্প্রকাশ। ইউরোপের চতুর্থ বৃহত্তম ও বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম অর্থনীতির এই দেশটির হাল যে এখন বিশিষ্ট ইউরোবিরোধী দল ধরবে তা নিশ্চিত। নির্বাচনে ফাইভ স্টার মুভমেন্ট একক বৃহত্তম দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। এই দলটির নেতৃত্বে আছেন ৩১ বছর বয়স্ক লুইগি ডি মাইয়ো। নির্বাচনী প্রচারে তিনি ইতালির অভিবাসীদের বোঝার ভাগ না নেয়া ও এ ব্যাপারে সাহায্য-সমর্থন না দেয়ার জন্য ইইউর শাণিত সমালোচনা করেছিলেন। অভিন্ন মুদ্রা ইউরোর বিরুদ্ধেও বক্তব্য দিয়েছিলেন। এর আগে ডি মাইয়ো ইউরো জোন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য গণভোট অনুষ্ঠানের আহ্বান জানিয়ে এক মেনিফেস্টো বিলি করেছিলেন। পরে তা প্রত্যাহার করে নেন। তবে তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করতে ছাড়েননি। ডি মাইয়োর ফাইভ স্টার পার্টি নির্বাচনে ৩২.৬ শতাংশ ভোট পায়। সরকার গঠনের সুযোগ লাভের ব্যাপারে তার দলটি হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী। নির্বাচনে প্রথম স্থানে আছে অবশ্য মধ্য-ডানপন্থী একটি কোয়ালিশন। এই কোয়ালিশনে আছে সিলভিও বারলুসকোনির দল ফোবজা ইটালিয়া, দক্ষিণপন্থী দল লীগ ও মধ্য ডানপন্থী দল ফ্রাটেল্লি দ্য ইটালিয়া। কোয়ালিশন সমষ্টিগতভাবে ৩৭ শতাংশ ভোট পেয়েছে। এর নেতৃত্বে থাকবেন মাত্তিও সালভিনি। তাদের নির্বাচনী প্রচারে প্রাধান্য পেয়েছিল প্রবল ইইউবিরোধী ও অভিবাসনবিরোধী মনোভাব। নির্বাচনে জয়লাভ ও সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজন ৪০ শতাংশ সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট। এ অবস্থায় প্রেসিডেন্ট সার্জিও মাত্তাবেল্লাকে দেশ পরিচালনার সুযোগ নবগঠিত কোন্ কোয়ালিশনকে দেবেন সেই সিদ্ধান্ত তাঁকে নিতে হবে। তবে নির্বাচনের ফলাফল দৃষ্টে মনে হয় কোয়ালিশন দলের সালভিনির প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা সুস্পষ্ট। এক সংবাদ সম্মেলনে ইতোমধ্যে তিনি ব্রাসেলসের বিরুদ্ধে লড়াই চালানোর এবং ইইউর মূল চুক্তিগুলো সংস্কার করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। ইউরোবিরোধী এই নেতা বলেন, এ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ইতালির জনগণ ব্রাসেলসের খাঁচা থেকে বেরিয়ে আসার এবং যেসব সীমাবদ্ধতা ও বাধাবিঘেœর কারণে ইউরোপে বুভুক্ষা, নিরাপত্তাহীনতা ও নাজুক অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে তা থেকে মুক্ত হওয়ার পথে এক ধাপ সম্মুখবর্তী পদক্ষেপ নিয়েছে। তিনি বলেন, সীমাবদ্ধতা ও আমলাতন্ত্রের ভিত্তিতে নয় বরং নারী ও পুরুষদের নিয়ে গড়ে ওঠা ইউরোপকে পুনর্নির্মাণের একটা সুযোগ এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে পাওয়া গেছে। ওরা আর আমাদের বোকা বানাতে পারবে না। এখন থেকে ইতালিতে ইতালিয়ানরাই সিদ্ধান্ত নেবে। বার্লিন নয়, প্যারিস নয়, ব্রাসেলস নয়। প্রেসিডেন্ট মাত্তাবেল্লা যাকেই সরকার গঠনের সুযোগ দিন না কেন ব্রেক্সিটের পর ব্রাসেলসকে আরেক গুরুত্বপূর্ণ সদস্য রাষ্ট্রের বিদ্রোহের সম্মুখীন হতে হবে। ইতালির নতুন নির্বাচন আইন অনুযায়ী দলগুলোর দেশ পরিচালনায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক আসন লাভের জন্য নির্বাচন পরবর্তী মহাজোট গঠন করার সুযোগ থাকবে। এ মুহূর্তে সালভিনির কোয়ালিশনের সম্ভাবনা বেশি মনে হলেও সুযোগটা ডি মাইয়োর দলের একেবারে নেই যে তা নয়। অর্থাৎ অপেক্ষটা এখন দুই অতি শক্তিশালী ইইউবিরোধী দল বা জোটের জন্য উন্মুক্ত। এক্ষেত্রে দুটি সম্ভাবনা আছে সালভিনির কোয়ালিশন নির্বাচনের পর বাম দল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি ও ফাইভ স্টার মুভমেন্ট থেকে বেরিয়ে আসা কয়েকজন এমপির সঙ্গে জোট বাধতে পারলে সালভিনিই হবেন প্রধানমন্ত্রী। আবার এমন সম্ভাবনাও আছে যে সালভিনি মধ্য ডান কোয়ালিশন থেকে বেরিয়ে এসে ডি মাইয়োর ফাইভ স্টার মুভমেন্টের সঙ্গে নতুন নির্বাচনোত্তর কোয়ালিশন গঠন করবেন এবং প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব তরুণ পপুলিস্ট নেতার হাতে ছেড়ে দেবেন। দুটো সম্ভাবনার যেটাই হোক না কেন, ইউরোপে পপুলিজমের উত্তাল জোয়ার মোকাবেলায় ব্রাসেলসের ওপর অবিশ্বাস্য চাপ পড়বে। চলমান ডেস্ক সূত্র : ইন্টারনেট
×