ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

এনামুল হক

ব্রেক্সিটের জন্য ব্রিটেন পথ খুঁজছে!

প্রকাশিত: ০৬:৩৬, ১৪ মার্চ ২০১৮

 ব্রেক্সিটের জন্য ব্রিটেন পথ খুঁজছে!

ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে কিভাবে বেরিয়ে যাওয়া ব্রিটেনের জন্য সর্বোত্তম হবে তা নিয়ে ব্রিটেনের মানুষ বিভক্ত। ইইউর সঙ্গে ব্রিটেনের সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত তা নিয়ে মন্ত্রীরা পরস্পরের বিরুদ্ধে মুখোমুখি অবস্থানে। এদিকে সময় বেশি নেই। ব্রেক্সিটের জন্য সময় আছে মাত্র এক বছরের একটু বেশি। এ অবস্থায় ইইউর অন্যান্য সদস্য দেশের নেতারা যাদের এই মার্চ মাসেই বৈঠকে বসার কথা তারা বেশ হতাশা বোধ করছেন। পর্যবেক্ষকরা মনে করেন যে ইইউ থেকে বেরিয়ে যাওয়া অথবা তা থেকে যাওয়া এই দুই পক্ষের ব্রিটেনদের আগে থেকে একটা সুষ্ঠু পরিকল্পনা থাকা দরকার। অথচ সেটা তো নেই বরং যা হচ্ছে তা হলো আবোল-তাবোল উক্তি ও পরস্পরের বিরুদ্ধে বক্তব্য প্রদান। ব্রিটিশ সরকার ‘কঠোর পন্থায়’ ব্রেক্সিটের দিকে পথ হাতড়ে বেড়াচ্ছে। একই সঙ্গে একক বাজার ও কাস্টমস ইউনিয়ন উভয়কে ত্যাগ করতে চাইছে। প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে সম্ভবত এমনই বিশ্বাস করতে চান যে গণভোটের রায়কে সম্মান জানানোর এটাই একমাত্র পথ। অন্যটি হলো ‘নরম’ পন্থায় ইইউ থেকে বেরিয়ে যাওয়া নরওয়ের ব্যবস্থার কাছাকাছি। কিন্তু সেটা ব্রিটেনের কাছে গ্রহণযোগ্য নয় কারণ এতে আদালতগুলোর স্বাধীনতা, নতুন বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদন করার স্বাধীনতা এবং অভিবাসন সীমিত করার ক্ষমতা নিশ্চিত হয় না। সে পথে গেলে ব্রিটেন একটা সামন্ত বা জায়গিরদারি রাষ্ট্রে পরিণত হবে এবং সেক্ষেত্রে গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মতো ইউরোপীয় ইউনিয়নকে বিপুল অঙ্কের বার্ষিক কর দিতে হবে। তাই প্রধানমন্ত্রী মে বলেছেন অন্য কারোর মডেল অনুকরণ না করে ব্রিটেন তার নিজস্ব মডেলে চলবে। এক্ষেত্রে পর্যবেক্ষকদের পরামর্শ হলো অন্যান্য দেশকে উপেক্ষা না করে ব্রিটেনের উচিত তাদের কাছ থেকে শিক্ষা নেয়া। এদিক থেকে নরওয়ের দৃষ্টান্ত দিয়ে শুরু করা যেতে পারে। ১৯৯৪ সালে নরওয়েবাসী ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগদানের বিরুদ্ধে রায় দেয়Ñ ঠিক ব্রিটেনের মতো সামান্য ব্যবধানে। পার্থক্য এই যে ব্রিটেনে এ ব্যাপারে যেখানে কট্টরপন্থীদের প্রাধান্য সেখানে নরওয়েবাসী আপোসের পথ বেছে নিয়েছিল। নরওয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরে তবে একক বা অভিন্ন বাজারের ভেতরে। এর ফলে দেশটি ইউরোপ মহাদেশের সঙ্গে অবাধে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারছে। সরকারী হিসাবে ব্রিটেন একক বাজার ত্যাগ করলে ১৫ বছর পর এর জিডিপি সেখানে থেকে গেলে যা হতো তার চেয়ে ৩ থেকে ৬ শতাংশ কম হবে। নরওয়ে তার খামার ও মৎস্য আহরণের মতো মূল্যবান ক্ষেত্রগুলো নিয়ন্ত্রণের জন্য দক্ষ কৌশল অবলম্বন করেছিল। ইইউর বেশিরভাগ অন্যান্য নিয়মকানুন অনুসরণ করতে, ইইউর অভিবাসীদের জন্য নিজের সীমান্ত খুলে দিতে এবং বার্ষিক লেভি পরিশোধ করতে রাজি হয়েছিল। এরপর আসে ইইউর আইনকানুনের প্রশ্ন। প্রধানমন্ত্রী মে বলেছেন, ব্রিটেনকে অবশ্যই ইউরোপিয়ান কোর্ট অব জাস্টিসের (ইসিজে) এখতিয়ারের আওতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। তবে কথা হচ্ছে ইউরোপের সঙ্গে নরওয়ের বাণিজ্য ইসিজে দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নয় বরং ইউরোপিয়ান ফ্রি ট্রেড এ্যাসোসিয়েশনের (ইএফটিএ) আদালত দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। এই আদালতের রায় পরামর্শমূলক। সমিতির কোন সদৃশ্য না সামনে তাকে জরিমানা করার এখতিয়ার আদালতের নেই। ব্রিটেন চাইলে এই আদালতে একজন বিচারক নিয়োগ দিতে পারবে, কিন্তু ইসিজেতে পারবে না। বাস্তব কার্যক্ষেত্রে ব্রিটিশ রফতানিকারকরা অভিন্ন বাজারে না থাকলেও তাদের এই বাজারের নিয়মনীতি তার চেয়েও বড় কথা হলো ব্রিটেন যেমনটি বলে নরওয়ে তেমন জায়গিরদারি রাষ্ট্র নয়। দেশটি ইইউর আইন ও নিয়মনীতি প্রণয়নে যুক্ত। বিশেষ করে জ্বালানি খাতে সেখানে এর বিশেষজ্ঞ জ্ঞান আছে। নরওয়ে ও সুইডেন উভয়েই ব্রাসেলসে প্রভাব খাটিয়ে থাকে। ব্রিটেনের প্রভাব নিশ্চয়ই এই দুটি দেশের চাইতে বেশি হবেÑ বিশেষ করে ফিন্যান্সের মতো তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট খাতগুলোতে। অবাধ লোক চলাচলের ক্ষেত্রেও একই কথা। অন্তত তত্ত্বগতভাবে নরওয়ের হঠাৎ করে ব্যাপক হারে লোক আগমনের বিরুদ্ধে জরুরী ভিত্তিতে প্রতিবন্ধকতা দেয়ার সুযোগ আছে। কার্যক্ষেত্রে ব্রিটেনও এই উদ্দেশ্যে ইইউর বিধিনিয়মের আওতাধীন যে কোন পদক্ষেপ নিতে পারেÑ যেমন সম্পত্তি ক্রয় সীমাবদ্ধ করা কিংবা ছয় মাসের মধ্যে যারা চাকরি জুটিয়ে নিতে পারেনি তাদের বের করে দেয়া। বলাবাহুল্য ব্রিটেনে নিট অভিবাসন হ্রাস পাচ্ছে এবং অভিবাসীদের নিয়ে উদ্বেগও কমে আসছে। যারা ব্রেক্সিটের পক্ষে ভোট দিয়েছে তাদের এক-তৃতীয়াংশসহ ভোটার অবাধ বাণিজ্যের বিনিময়ে অবাধ চলাচলের বিষয়টি মেনে নেবে। ব্রিটেন এমন এক সময় ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্যাগ করছে যখন এই সংস্থাটি বিভিন্ন গতিতে চলা দেশগুলোর শিথিলতর ইউনিয়ন হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ইউরো জোনের সদস্যরা ঘনিষ্ঠতর সংহতির দিকে ধাবিত হচ্ছে। এর বাইরের সদস্যরা পেছনে পড়ে থাকছে। নানা গতির ইউরোপে একক বাজার ও কাস্টমস ইউনিয়নে থাকলে ব্রিটেন রাস্তা থেকে একেবারে ছিটকে পড়বে না তবে রাস্তার বহির্ভাগের দিকে থাকবে। পরে দেশটা আরও কাছাকাছিও আসতে পারে কিংবা আরও দূরে সরে যেতে পারে। কট্টরপন্থীদের মতে এই নমনীয়তা বিপজ্জনক। আর বাস্তববাদীদের কাছে এটাই মূল্যবান কৌশল। এখন দেখা যাক ব্রিটেন কোন্টা বেছে নেন। সূত্র : দি ইকোনমিস্ট
×