ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মালি আজও ঘোর অশান্ত

প্রকাশিত: ০৬:৩৬, ১৪ মার্চ ২০১৮

মালি আজও ঘোর অশান্ত

গত এক দশকে আফ্রিকার যেসব দেশ সবচেয়ে মারাত্মক নিরাপত্তা সমস্যায় পড়েছে মালি তার অন্যতম। একদা দেশটা ছিল গণতন্ত্রের মডেল। ২০১২ সালে আলকায়েদার সঙ্গে যুক্ত তুয়ারেগ সম্প্রদায়ের জিহাদীরা সাহারা মরুর প্রান্তে মালির উত্তরাঞ্চল জুড়ে বিদ্রোহ ঘটায়। তারপর থেকে সহিংসতা দেশটিকে গ্রাস করে নিয়েছে। একদা ট্যুরিস্টরা মরুভূমিতে উটের পিঠে চড়ে বেড়ানোর জন্য প্রাচীন নগরী টিম্বাকটুতে আসতো। এখন যেসব বিদেশী বিমানবন্দরে এসে নামে তাদের বেশিরভাগই সেনা ইউনিফর্মধারী। বিখ্যাত রক সঙ্গীতশিল্পী বোনো একসময় এই নগরীতে অনুষ্ঠান পরিবেশন করত। সেই শিল্পীকে নগরী বিদায় করে দিয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পরিস্থিতির অবনতি ছাড়া উন্নতি হয়নি। ১৯৬০ সালে মালি স্বাধীনতা লাভ করার পর জাতিগত ও উপজাতীয় দিক দিয়ে পুরাতন বিভাজন রেখাগুলো আরও প্রকট আকার ধারণ করে। দক্ষিণের কৃষ্ণাঙ্গ আফ্রিকানদের শাসনে তুয়ারেগ ও আরব সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর অনেকেই অস্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছিল। ১৯৬৩ ও ১৯৯০ সালে মালিতে বড় ধরনের বিদ্রোহ ঘটেছিল। তবে ২০১২ সালের বিদ্রোহের মধ্য দিয়ে টার্নিং পয়েন্ট সূচিত হয়। রাজধানী বামাকোয় এক সেনা অভ্যুত্থান সংঘটিত হওয়ার পর এই বিদ্রোহ ঘটে। এক সেকুলার জাতীয়তাবাদী আন্দোলন থেকে বিদ্রোহীদের উৎপত্তি হয় এবং সেখান থেকে তাদের উত্তরণ ঘটে ইসলামী জঙ্গী আন্দোলনে। ২০১২ এর সৈনিক অভ্যুত্থানের পর ইসলামী জঙ্গীরা রাজধানী অভিমুখে ধাবিত হতে প্রস্তুত হয়। এ অবস্থায় ফ্রান্স সেখানে তড়িঘড়ি সৈন্য পাঠায়। ফরাসী সৈন্যরা বিদ্রোহীদেরকে বেশিরভাগ নগরী থেকে বিতাড়িত করলেও তাদের সম্পূর্ণ পরাস্ত করতে পারেনি। ২০১৫ সালে বিবদমান পক্ষগুলোর মধ্যে এক শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। কিন্তু শান্তিচুক্তি সত্ত্বেও সহিংসতার বিস্তার ঘটে চলতে থাকে। এ বছরের ২৫ ও ২৮ জানুয়ারির মধ্যে কমপক্ষে চারটি পৃথক পৃথক হামলায় বেশকিছু লোক নিহত হয়। গত বছর জাতিসংঘ কার্যক্রমগুলোর উপর ২২০টি হামলা হয়েছিল। তার মানে ২০১৫ ও ২০১৬ সালে যতগুলো হামলা হয়েছিল একত্রিতভাবে হিসাব করলে এটা তার চেয়েও বেশি। ২০১৩ সালে মালিতে জাতিসংঘ শান্তি মিশন প্রতিষ্ঠা করা হয়। এর নাম দেয়া হয় মিনুসমা। এটাই এযাবৎকালের সবচেয়ে বিপজ্জনক জাতিসংঘ মিশন। এর সৈন্যসংখ্যা প্রায় ১১ হাজার। তবে ইতোমধ্যে প্রায় ১৫০ শান্তিরক্ষী নিহত হয়েছে। নিরাপত্তাহীনতা দেশের উত্তরাঞ্চল থেকে শুরু করে মালির কেন্দ্রস্থল পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। ইদানীং লড়াই অনেক কমে এলেও নিরস্ত্রীকরণ খুব একটা হয়নি। সশস্ত্র বিদ্রোহীরা এখনও গ্রামে গ্রামে রয়ে গেছে। এ নিয়ে সরকারেরও তেমন মাথাব্যথা আছে বলে মনে হয় না। মালির জনসংখ্যার ৯০ শতাংশ দক্ষিণাঞ্চলের। দেশটির অর্থনীতিরও প্রাণকেন্দ্র দক্ষিণাঞ্চল। অর্থনীতিতে স্বর্ণখনির প্রাধান্য। এ বছর দেশটিতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হওয়ার কথা। ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম বুবাকার কিতার বিরুদ্ধে গণঅসন্তোষ আছে। সেই অসন্তোষ যুদ্ধে তার ভূমিকা নিয়ে নয় বরং দুর্নীতির নানান অভিযোগ নিয়ে। আফ্রিকার তৃতীয় বৃহত্তম স্বর্ণখনির দেশ হলেও মালির সিংহভাগ মানুষের দৈনিক গড় আয়ু ১ ডলারের কম। স্বর্ণখনির সুবাদে জনগণের অর্থনৈতিক জীবনে যে স্বাচ্ছন্দ্য থাকার কথা তা হয় না মূলত দূর্নীতির কারণে এই দুর্নীতির জন্য দায়ী প্রধানত প্রেসিডেন্টের পৃষ্ঠপোষকতাপ্রাপ্ত লোকজন ও আমলারা। লাভের গুড় এভাবে পিপড়েই খেয়ে নেয়। দুর্নীতির সবচেয়ে বেশি ব্যাপক সরকারের ক্রয় ও সংগ্রহ কার্যক্রম ও বিরোধ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে। দুর্নীতির সূচকে বিশ্বের ১৭৫টি দেশের মধ্যে মালির স্থান ১১৬। এটি আফ্রিকার দুর্নীতির অন্যতম স্বর্গরাজ্য। চলমান ডেস্ক সূত্র : দি ইকোনমিস্ট
×