ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

শূন্যপদে নিয়োগ

প্রকাশিত: ০৪:০৭, ১৫ মার্চ ২০১৮

শূন্যপদে নিয়োগ

চাকরি সোনার হরিণ বলা যায় এদেশে। আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়ার মতোই যেন চাকরি প্রাপ্তি। মেধা, যোগ্যতা, দক্ষতা, কর্মকুশলতা থাকার পরও যোগ্য ব্যক্তি পায় না চাকরি। এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশে কর্মোপযোগী বেকারের সংখ্যা কমবেশি সাড়ে চার কোটি। অপর এক হিসাবে চাকরি প্রত্যাশী যোগ্য বেকারের সংখ্যা ৫৬ লাখের মতো। অবশ্য অক্ষরজ্ঞানসম্পন্নদের সংযুক্ত করেও সাড়ে চার কোটির হিসাব ধরা হচ্ছে। দেশে বিভিন্ন শ্রেণীর শূন্য থাকা সরকারী পদ রয়েছে আড়াই লাখের মতো। এসব শূন্য পদে নিয়োগ ঝুলতে ঝুলতে এই সংখ্যায় দাঁড়িয়েছে। যথা সময়ে যথা পদে নিয়োগদান করা না হলে প্রশাসনিক কাজে বিঘœ ঘটতে পারে। এমনিতেই দেশের প্রশাসন ব্যবস্থা খুব ঢিলেঢালা। যেন খাজনার চেয়ে বাজনা বেশি। এর মধ্যে অনেক পদ রয়েছে, যাদের কোন কাজকর্ম নেই। কর্তাদের নিজস্ব স্বার্থে বা অন্য কোন কারণে এসব পদসৃষ্টি করা হয়েছিল। আবার সরকারের এমন অনেক দফতর রয়েছে, যেগুলো নেই কাজ তো খৈভাজ জাতীয়। কাজকর্ম নেই, বসে বসে বেতন গোনার এসব প্রতিষ্ঠান চালু রাখা কতটা যুক্তিসঙ্গত তা ভাবার সময় এসে গেছে। শূন্য পদগুলো পূরণ করতে না পারার মধ্যে বহুবিধ কার্যকরণ রয়ে গেছে। যেমন নিয়োগ দানে কর্তৃপক্ষের ঔদাসীন্য ও উদ্যোগের অভাব পরিলক্ষিত হয়। ক্ষেত্র বিশেষে কোটা সংরক্ষণ, তদ্বিরের চাপ, নিয়োগ কর্তৃপক্ষের স্বেচ্ছাচারিতাও দায়ী। দেশে উচ্চশিক্ষিত বেকারের সংখ্যা প্রকাশ পায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের চাকরি পরীক্ষায় অংশ নেয়ার আবেনপত্র থেকেই। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে দেশে বিশ্ববিদ্যালয় উত্তীর্ণ বেকার রয়েছে তিন লাখ ১৫ হাজারের মতো। উচ্চ মাধ্যমিক পাসের ক্ষেত্রে এ সংখ্যা পাঁচ লাখ ৭৪ হাজার। মাধ্যমিক পাস আট ভাগ তেপ্পান্ন হাজার। আর প্রাথমিক শিক্ষা শেষে বেকার বসে আছে তিন লাখ ৯৯ হাজার। মোটেই শিক্ষাগত যোগ্যতা নেই এমন বেকারের সংখ্যা চার লাখ ৩৯ হাজার। এই আড়াই লাখে শূন্য পদে নিয়োগ সম্পন্ন করার জন্য তাগিদ দিয়েছে সচিবসভা। পদ পূরণ করা গেলে প্রশাসনের কাজকর্মে দক্ষতা, স্বচ্ছতা আরও বাড়বে কিনা স্পষ্ট নয়। অর্থাৎ সরকারী চাকরিতে আড়াই লাখ লোকের কর্মসংস্থান হলে তা গুরুত্ব বহন করবে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে। কাজের গতি হয়ত বাড়তে পারে তাতে। চলতি নির্বাচনী বছরকে সামনে রেখে এ নিয়োগদান বিষয়টি রাজনৈতিক নয়, বরং প্রশাসনিক। প্রশাসনের কাজকর্মে আরও গতিশীলতা আনয়নে শূন্যপদে লোকবল নিয়োগ অত্যন্ত সঙ্গত। কর্মসংস্থান বাড়ুক, শিক্ষিত-অশিক্ষিত ভেদে সবাই কাজে নিবেদিত হয়ে জীবন-জীবিকা অর্জন করতে পারে, তা সবার কাম্য।
×