ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

গাড়ি কেনাবেচার অন্তরালে ইয়াবা বিক্রি করত আলম

প্রকাশিত: ০২:৫৯, ১৫ মার্চ ২০১৮

গাড়ি কেনাবেচার অন্তরালে ইয়াবা বিক্রি করত আলম

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দ্রুত বিত্তশালী হতে গাড়ি কেনাবেচা ব্যবসার অন্তরালে ইয়াবা বিক্রি শুরু করেন তৃতীয় শ্রেণি পাস ইয়াবা সম্রাট আলম। সে মিয়ানমার থেকে ইয়াবা চালান এনে মজুদ করতো কক্সবাজারের কলাতলীতে নিজের গেস্ট হাউজে। গত ৪ বছরে তিনি গড়ে তোলেন ইয়াবার বড় একটি সিন্ডিকেট। এক লাখ পিস কমে কখনও ইয়াবার চালান কক্সবাজার থেকে ঢাকায় আনতেন না তিনি। নিজ রেন্ট-এ-কারের ব্যবসার সুবিধা নিয়ে নিজস্ব গাড়িতে শুধু ঢাকা নয় পার্শ্ববর্তী জেলাতেও ইয়াবার চালান করতেন। পরে সেখান থেকে তার কেনা বিভিন্ন গাড়ির মাধ্যমে রাজধানীতে ইয়াবার চালান নিয়ে আসতো। বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর কাওরানবাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব-২ অধিনায়ক (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল আনোয়ার উজ জামান। তিনি জানান, এক চালানে কমপক্ষে ১ লাখ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট আনতো আলম। আর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজর এড়াতেই একটি চালান আনার পর সে তার মোবাইল, সিমকার্ড ও চালান বহনকৃত ওই গাড়ি দ্রুত পরিবর্তন করে ফেলতো।’ এর আগে, বুধবার (১৪ মার্চ) বিকালে রাজধানীর হাজারীবাগ থানাধীন মধুরবাজার এলাকার ১৯ নম্বর রোডের ১৫৩/এ স্বপ্ননীড় ভবনের বি-১ ফ্ল্যাট থেকে আলমসহ ৪ মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করে র্যাব-২। গ্রেফতারকৃতরা হলেন ইয়াবা সম্রাট আলম (৪০), তার আপন ছোট ভাই জসিম উদ্দিন (২৩), সালাউদ্দিন (২৭) ও মিজানুর রহমান (৩৩)। এ সময় তাদের কাছ থেকে ১ লাখ ২৩ হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, নগদ ৮১ হাজার টাকা, ৭টি মোবাইল ও ৩টি ব্যবসার টালি খাতা উদ্ধার করা হয়। লে. কর্নেল আনোয়ার উজ জামান বলেন, ‘ইয়াবা সম্রাট আলম প্রথমে ইয়াবাসেবী ছিলেন। কক্সবাজারের কলাতলীতে থাকা তার বন্ধুদের সহযোগিতায় চিংড়ি মাছের পোনার ব্যবসা, কটেজ ব্যবসা, জমি বিক্রির ব্যবসা করে উন্নতি করলেও পরে অতি লোভে পড়ে ইয়াবা ব্যবসা শুরু করেন তিনি। মিয়ানমারের এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগ করে ইয়াবা ব্যবসার পরিধি বড় করেন। এরপর গত ৪ বছরে তিনি ইয়াবার বড় একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। তিনি আরও বলেন, কক্সবাজারের কলাতলীতে নিজের গড়া ‘শামীম গেস্ট হাউজ’কে ইয়াবা মজুদের জন্য ব্যবহার করতেন। সেখান থেকে নিজের রেন্ট-এ-কার ব্যবসার অন্তরালে ওই গাড়িতে করে রাজধানী ও দেশের বিভিন্ন জেলায় ইয়াবা সরবরাহ করতেন তিনি। তিনি বলেন, এই ব্যবসার প্রসার করতে তার আপন ছোট ভাই জসিম উদ্দিনকে ধানমন্ডিতে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে দেন। সেখানে রোজ ইয়াবাসেবীরা আড্ডা বসাতো। এছাড়া ওই ফ্ল্যাট থেকেই পাইকারিতে ইয়াবা নিয়ে যেত ব্যবসায়ীরা। গ্রেফতার আলমের ছোট ভাই জসিম উদ্দিন ঢাকা কলেজের সমাজবিজ্ঞানের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। আনোয়ার উজ জামান বলেন, ‘আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, গ্রেফতার আরেক সহযোগী সালাউদ্দিন ৬ষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। মোটর গ্যারেজে মিস্ত্রি হিসেবে কাজ করতেন তিনি। সেই কাজের সুবাদে আলমের সঙ্গে পরিচয় হয় তার। সেই থেকে ইয়াবা ব্যবসায় তার সহযোগী হিসেবে কাজ করতন। অপরদিকে আসামি মিজানুর রহমান উখিয়া-কক্সবাজারে যাত্রীবাহী বাসের চালক হিসেবে কাজ করতেন। আলমের সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পর বাড়তি আয়ের আশায় গাড়িতে ইয়াবার চালান বহন করার কাজ করতেন মিজানুর। তিনি বলেন, মূলত আলমের দ্বারা প্রভাবিত হয়েই জসিম, সালাউদ্দিন ও মিজানুর ইয়াবা ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে। আলমের আরও সহযোগী আছে। তাদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। এই চক্রের সবাইকে আইনের আওতায় আনতে আমরা কাজ করছি। র্যাব-২ এর অধিনায়ক (সিও) আনোয়ার উজ জামান জানান, মোঃ আলম মূলত পুরো সিন্ডিকেটকে কো-অর্ডিনেট করে আসছিল। গ্রেফতারতারকৃতদের আরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে পাঠিয়ে রিমান্ড চাওয়া হবে।
×