ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ছোট কাগজ

প্রকাশিত: ০৭:১৬, ১৬ মার্চ ২০১৮

ছোট কাগজ

‘জলপুষ্প’ ফুটে থাকবে হৃদয়-সরবরে মুহাম্মদ সালাহউদ্দিন প্রকৃত সত্যের যথাযথ তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ, আলোচনা, গবেষণা ও মূল্যায়ন ইত্যাদি যখন একটা যৌক্তিক সত্যরূপ লাভ করে তখন তা হয়ে ওঠে ইতিহাস। চাঁদপুর লিটলম্যাগ ফোরাম থেকে ফেব্রুয়ারি-২০১৮-এ প্রকাশিত ‘জলপুষ্প’ ইলিশ সংখ্যাটি তেমনিভাবে আমাদের জাতীয় ঐতিহ্যের ইতিহাস ধারণ করে আছে। দুই বাংলার প্রখ্যাত লেখকদের অনুসন্ধিৎসু ইলিশবন্দনা, গীতি, গবেষণা, কবিতা, গল্প, ছড়া বহুমাত্রিক আবেগ ও কৌতূহল সৃষ্টি করেছে। দুই বাংলাতেই ধনী-গরিব নির্বিশেষে ইলিশ জাতীয় জীবনে একটি অপরিত্যাজ্য অংশ হয়ে উঠেছে। ইলিশের রহস্যময় জীবনাচরণ বিজ্ঞানীদের প্রতিনিয়তই ভাবিয়ে তুলছে। তাই তো লেখকের কলমে ইলিশসাহিত্য এত বিচিত্র রূপ লাভ করেছে। লেখক শাকুর মজিদ ‘জলপুষ্প’-এ ইলিশ নিয়ে স্মৃতিকথা লিখেছেন। তিনি ইলিশ নিয়ে অপসংস্কৃতির একটি অজানা তথ্য সংক্ষিপ্তভাবে তুলে ধরেছেন। সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের ‘ইল্শে গুঁড়ি’ ছড়া আজও আমাদের মোহময় আবেশে আপ্লুত করে। আলোচ্য সংখ্যায় জেলেদের আবেগ এবং উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে গিয়ে জাফরুল আহসান লিখেছেন, ‘জেলের জালেতে জলের গভীরে ইলিশের খেলা/সোনা ঝরা রোদে জেলের চোখেতে স্বপ্নের ভেলা’। ডাঃ পীযূষ কান্তি বড়ুয়া একটি ব্যতিক্রমধর্মী সুখপাঠ্য গল্পে ইলিশের অনেক অজানা জীবন তথ্য পাঠকের সামনে প্রাণবন্তভাবে তুলে ধরেছেন। প্রখ্যাত ঔপন্যাসিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের যুগান্তকারী উপন্যাস ‘পদ্মা নদীর মাঝি’র নির্বাচিত পাঠ ‘জলপুষ্প’র স্থান পাওয়ায় ছোট কাগজটি এক অনন্য মাত্রা লাভ করেছে। ড. আনিসুর রহমান ইলিশের গতিপ্রকৃতি, পুষ্টিগুণ, জাতীয় অর্থনীতিতে এর গুরুত্ব এবং ইলিশের বংশ বৃদ্ধির লক্ষ্যে অনেক মূল্যবান তথ্য তাঁর ‘রুপালি ইলিশের গল্প নয় সত্যি’ নিবন্ধে চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। শাইখ সিরাজ ‘জলপুষ্প’-এ ‘ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর’ নামে বিশেষ গদ্যে ইলিশ সম্পর্কে তাঁর বিষদ গবেষণালব্ধ জ্ঞান তুলে ধরেছেন। তুলে ধরেছেন এ দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সহায়ক শক্তি হিসেবে ইলিশের ভূমিকা, পরিসংখ্যান এবং অপার সম্ভাবনা। ‘জলপুষ্প’র আলোচ্য সংখ্যায় অনেক প্রবীণ-নবীন লেখক তাদের প্রবন্ধ, কবিতা, গল্প ও ছড়া ইত্যাদিতে ইলিশ নিয়ে আবেগময়ী স্মৃতিচারণ করেছেন। অনেক লেখক ইলিশের প্রেম এবং রূপে আপ্লুত হয়ে রম্য, কৌতুক ও সামাজিক উপাখ্যান লিখেছেন। এ সংখ্যায় আমরা ইলিশ নিয়ে বিচিত্র ধরনের গল্প পেয়েছি। বিশেষত হরিশংকর জলদাসের ‘একদা এক ইলিশ’ এবং লাঙ্গোনজম বীরমঙ্গল সিংহের অনুবাদে নোংথোম্বম কুঞ্জমোহন সিংহের ‘একটি ইলিশের স্বাদ’ গল্পের কথা স্মরণযোগ্য। এ সংখ্যায় বিশেষ গদ্য হিসেবে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, হুমায়ূন আহমেদ, রাখীপূর্ণিমা দাশগুপ্ত, শাঈখ সিরাজ, শাকুর মজিদ, ঋজু বসু ও সুমন্ত আসলামের লেখা স্থান পেয়েছে। প্রবন্ধ লিখেছেন সাইফুর রহমান, ইকবাল আনোয়ার, কাজী শাহাদাত, শানজিদ অর্ণব, স্বকৃত নোমান, সৌম্য সালেক, শওকত মিলটন, মুহাম্মদ ফরিদ হাসান ও জমির হোসেন। মুক্তগদ্য লিখেছেন তছলিম হোসেন হাওলাদার ও তৃপ্তি সাহা। ইলিশ নিয়ে কথা বলেছেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মোঃ আব্দুস সবুর ম-ল। কবিতা লিখেছেন বুদ্ধদেব বসু, আমিনুল ইসলাম, মনোহর আলী, আলী হোসেন চৌধুরী, আইউব সৈয়দ, ইকবাল পারভেজ, তমিজ-উদ-দীন লোদী, মনসুর আজিজ, জসীম মেহেদী, মাইনুল ইসলাম মানিক, পীযূষ কান্তি রায় চৌধুরী, আমির হোসেন, অজিত দত্ত ও মনিরুজ্জামান বাবলু। গল্প লিখেছেন আনিসুল হক, জয়দীপ দে, মঈনুল হাসান, সালাহ উদ্দিন মাহমুদ, কাদের পলাশ ও আশিক বিন রহিম। শিশুতোষ গল্প লিখেছেন সেলিনা হোসেন, ইমদাদুল হক মিলন, পীযূষ কান্তি বড়ুয়া ও শামস সাঈদ। ছড়া লিখেছেন সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত, চন্দন কৃষ্ণ পাল, বাদল মেহেদী, স্বপন শর্মা, আমির হামজা, পঞ্চানন মল্লিক, এমটি ইসলাম, কাজী সাইফ প্রমুখ। কাজী নজরুল ইসলামের ইলিশ খাওয়া নিয়ে লিখেছেন আহমেদ রিয়াজ। বিচিত্র রচনা ও প্রতিবেদন লিখেছেন ইফতেখার মাহমুদ, মোছাব্বের হোসেন, প্রকৌঃ মোঃ দেলোয়ার হোসেন, ড. এএসএম দেলওয়ার হোসেন ও শফিকুর রহমান। আলোচ্য সংখ্যাটি পাঠ শেষে নিঃসঙ্কোচে বলা যায়, সংখ্যাটি ইলিশের আর্থ-সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও সাহিত্যিক আবেদনসমদ্ধ এক ঝুড়ি রচনায় ঋদ্ধ হয়েছে। এ সংখ্যাটি রুপালি ইলিশের মতোই বাংলা সাহিত্যে উজ্জ্বল হয়ে থাকবে বলে আমি মনে করি। জলপুষ্প ॥ ইলিশ সংখ্যা। প্রকাশ : ফেব্রুয়ারি ১৮। প্রচ্ছদ : সারাজাত সৌম। ২৪৮ পৃষ্ঠা ॥ মূল্য : ২০০ টাকা . ‘বুনন’ শিল্পিত সুষমায় সুবাসিত আনোয়ার কামাল ‘বুনন’ চতুর্থ সংখ্যাটি বেরুনোর পূর্বেই ঘোষণায় বলা হয়েছিল, এ সংখ্যাটি হবে ‘বিশ্বসাহিত্য’ সংখ্যা। বিশ্বের উল্লেখযোগ্য ভাষার সাহিত্যের অনুবাদের পাশাপাশি মূল্যায়ন ও পাঠকতালিকা নিয়ে বিশেষ কিছু করার মানস থেকেই এ সংখ্যাটিকে সাজানো হয়েছে। সম্পাদক খালেদ উদ্দীন এ সংখ্যাটিকে একটি পূর্ণাঙ্গ ‘বিশ্বসাহিত্য’ সংখ্যা করার ইচ্ছা পোষণ করলেও নানা সীমাবদ্ধতা ও সময়মতো প্রয়োজনীয় লেখা হাতে না পাওয়ায় তার পূর্ণতা দিতে পারেননি বলে সম্পাদকীয়তে উল্লেখ করেছেন। এ থেকেই বোঝা যায় ভাল একটি কাগজ করার পেছনে যে প্রয়োজনীয় লেখার যোগান থাকা আব্যশক তা সব সময় পাওয়া যাচ্ছে না। ভাল লেখা সঙ্কটের দীনতা নিয়েই ছোট কাগজের সম্পাদকদের পত্রিকা বের করতে হচ্ছে, অতৃপ্তি নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে হচ্ছে। অনুবাদ গল্প বিভাগে ফরাসী কথাসাহিত্যিক গি দ্য মোপাসাঁ এর গল্প ‘অবিচ্ছিন্নতা’ নিয়ে ভাষান্তর করেছেনÑ আবুল কাইয়ুম, নামিবিয়ার ছোটগল্পকার মিলি জাফতা এর গল্প ‘বাড়ি ফেরা’ নিয়ে লিখেছেনÑ ফজল হাসান, আর্নেস্ট হেমিংওয়ের গল্প ‘বৃষ্টিস্নাত বিড়াল’ ভাষান্তর করেছেনÑ অনন্ত মাহফুজ, ইশরাত তানিয়া জাপানী লেখক হারুকি মুরাকামির গল্প ‘জন্মদিনের মেয়ে’ ভাষান্তর করেছেন। জাপানী নোবেলজয়ী লেখক কাজুও ইশিগুরোর গল্প ‘অদ্ভুত এবং কখনও বিষণœতা’ ভাষান্তর করেছেনÑ মাইনুল ইসলাম মানিক ও পাকিস্তানী লেখক ইনতেজার হুসেইনের গল্প ‘সহযাত্রী’ ভাষান্তর করেছেনÑ সালেহ ফুয়াদ। এ ছাড়াও রয়েছে টিএস এলিয়ট’ ‘আলবেয়ার কামু-আর্নেস্ট হেমিংওয়ে’কে নিয়ে লেখা। অনুবাদ কবিতা বিভাগে রয়েছে সিবাইল ওরাকল, কবি এন্ড্রো জন্সটন জন ডান, ডব্লিউএস মারউইন, সুইডিশ কবি টমাস ট্রান্সট্রোমার প্রমুখের কবিতা। কিছু অনুবাদ সাক্ষাতকারও রয়েছে এ সংখ্যায়। বুনন : সম্পাদক- খালেদ উদ্দিন। ৪র্থ সংখ্যা, ফেব্রুয়ারি ২০১৮। প্রচ্ছদ : নির্ঝর নৈঃশব্দ্য, মূল্য : ৭০ টাকা।
×