ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

থ্রিডি প্রিন্টারে ইলেকট্রিক ইঞ্জিনের মোটরসাইকেল!

প্রকাশিত: ০৮:৪৫, ১৬ মার্চ ২০১৮

থ্রিডি প্রিন্টারে ইলেকট্রিক ইঞ্জিনের মোটরসাইকেল!

যেকোন মোটরসাইকেলের তুলনায় ৩০ গুণ হালকা। ইলেকট্রিক ইঞ্জিনের কারণে বেশ চটপটে ও পরিবেশবান্ধব। এর নাম দেয়া হয়েছে ‘লাইট রাইডার’। প্রথমবারের মতো একটি থ্রিডি মোটরসাইকেল তৈরি করেছে বিমান প্রস্তুতকারক কোম্পানি এয়ারবাস। এর আগে থ্রিডি প্রিন্টারে খেলনা বা টুকটাক জিনিসপত্রের অনুলিপি তৈরি করা হয়েছে। ওজনের দিক থেকেও এটি পৃথিবীর সবচেয়ে কম ওজনের মোটরসাইকেল। দেখতে অনেকটা বাই সাইকেলের মতো মোটরসাইকেলটি। মোটরসাইকেলটি চালাতে কোন তেলের প্রয়োজন হবে না। বরং মাত্র ৬ কিলোওয়াট পরিমাণ বিদ্যুত ব্যয়ে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৮০ কিলোমিটার গতিতে ছুটবে। সাধারণত বিমান প্রস্তুত করলেও এয়ারবাস এবারই প্রথম মোটরসাইকেল তৈরির ঘোষণা দিল। ফলে ইতোমধ্যে বিষয়টি নিয়ে বিশ্বের মোটরসাইকেল প্রেমীদের মধ্যে বেশ আলোচনা ও কৌতূহলের জন্ম দিয়েছে। মোটরসাইকেলটি বানানোর মূল কাজটি করেছে এয়ারবাসের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এপিওয়ার্কস। সম্পূর্ণ এ্যালুমিনিয়ামের তৈরি সাইকেলটির নকশা করেছেন বিখ্যাত সুইচ চিত্রশিল্পী এইচআর গিগার। ‘লাইট রাইডার’ নামের এই মোটরসাইকেলটি প্রতিদিনকার একটি সাধারণ মোটরবাইকের মতোই ব্যবহার করা যাবে বলে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, প্রতিদিনকার বাহন হিসেবে মোটরসাইকেলটি যাতে কোন ধরনের বাড়তি চাপ বা বোঝা তৈরি না করে এমন ভাবনা থেকেই এটি বানানোর পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। তবে হাইওয়েতে দীর্ঘ পথের যাত্রা হিসেবে মোটরসাইকেলটি ব্যবহার করা না গেলেও শহরের ভেতরে প্রতিদিনকার ব্যক্তিগত বাহন হিসেবে এটি চমৎকার হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। অন্যদিকে ব্যার্নহার্ড গ্রুবারের হার্লি ডেভিডসন মোটরসাইকেলের ওজন ৩২০ কিলো। ই-মোটরসাইকেল সে তুলনায় প্রায় ১০ গুণ হালকা। কাকতালীয়ভাবে তিনি জানতে পারেন, যে এয়ারবাস-এর সহযোগী কোম্পানি এপি ওয়ার্কস-এ তার সহকর্মীরা এমন এক যান সৃষ্টি করেছেন। প্রথমে খেলাচ্ছলেই এই আইডিয়া কার্যকর করা হয়েছিল। এর উদ্ভাবক নিলস গ্রাফেন পেশায় এভিয়েশন ইঞ্জনিয়ার। তিনি বলেন, ‘বড়দিনের পার্টির সময় খেলাচ্ছলে এই আইডিয়া উঠে এসেছিল। এক সহকর্মী ও আমি ব্যক্তিগত আগ্রহ থেকে প্রশ্ন তুলেছিলাম, ই-বাইক বা মোটরবাইক নিয়ে কিছু করা যায় কিনা। সংস্থার প্রধান কথাটা লুফে নিয়ে একটা প্রকল্প শুরু করে দিলেন। তার ফল এই লাইট রাইডার।’ কম্পিউটারেই এই যান সৃষ্টি করা হয়েছে। চলার সময় মোটরবাইকের উপর কোন কোন চাপ পড়ে, তার ভিত্তিতে এক এ্যালগোরিদম লাইট রাইডারের মাপজোক স্থির করেছে। নিলস গ্রাফেন বলেন, ‘আমরা ভেবে দেখলাম, মোটরসাইকেলের মধ্যে কোথায় কী থাকে। সেটা কত বড় হয়, হুইলবেস কেমন, অথবা মোটরসাইকেল চলার সময় কী ঘটে- এ সবের ভিত্তিতে কম্পিউটার এই জ্যামিতি সৃষ্টি করেছে। যেসব অংশের কোন কাজ নেই, সেসব বাদ পড়েছে।’ এভিয়েশন প্রযুক্তির ক্ষেত্রে ব্যবহৃত এক এ্যালুমিনিয়াম এ্যালয় থেকে থ্রিডি প্রিন্টারে কাঠামোর অংশগুলোর হুবহু মডেল তৈরি হয়েছে। এ্যালুমিনিয়ামের মতোই হালকা, অথচ প্রায় টাইটেনিয়ামের মতো স্থিতিশীল। নিলস গ্রাফেন বলেন, ‘তথাকথিত ওয়েল্ডিং সিম সৃষ্টি করতে আমাদের কাঠামোটিকে অনেকগুলো ছোট অংশে ভাগ করতে হয়েছিল। অথচ এই মুহূর্তে প্রিন্টারে এমন আকারের একটির বেশি বড় অংশ প্রিন্ট করা যায় না। অংশগুলোর বিন্যাস ভেবে নিয়ে, শেষে সেগুলো জোড়া দেয়ার কাজ নিশ্চিত করা ছিল এক চ্যালেঞ্জ।’ অনেক ডিজাইনার ও সৃষ্টিশীল মানুষ থ্রিডি প্রিন্টিং নিজেদের মতো করে আবিষ্কার করেছেন। প্রিন্টার দিয়ে তৈরি একটি চেয়ার তৈরি করা কোন সমস্যা নয়। এমনকি কম্পিউটারে গয়নার ডিজাইন করে প্রিন্ট করা সম্ভব। ভাবতে অবাক লাগলেও এভাবে জুতোও তৈরি করা সম্ভব। নতুন স্টার্ট-আপ হোক, অথবা বড় সংস্থা– সবাই তাদের আইডিয়া আরও দ্রুত ও কম খরচে কার্যকর করতে পারে। মিউনিখের ‘পপ আপ ল্যাব’এর এক বিশেষজ্ঞ সবচেয়ে বড় সিরিজ থ্রিডি প্রিন্টারের সুবিধাগুলো বুঝিয়ে বললেন। থ্রিডি প্রিন্টিং বিশেষজ্ঞ ইয়োহান ফন হেয়ারভার্ট বলেন, ‘আমরা এখন আরও দ্রুত কোন পণ্যের উন্নতি করতে পারি। আমার জন্য আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, আপনি যদি ফলাফল নিয়ে সন্তুষ্ট না হতে পারেন, তখন আমি বলি, সেটি নষ্ট করে ফেলুন। ফেলে দিয়ে নতুন করে শুরু করুন। হারাবার তো কিছু নেই! বড়জোর ৩৫, ৫০ বা ১০০ ইউরো লোকসান হয়েছে। কিন্তু সীমা ভেঙে সৃজনশীল হয়ে উঠতে পেরেছেন।’ এভিয়েশন প্রযুক্তির ক্ষেত্রেও অগ্রগতির সম্ভাবনা দেখছেন নিলস গ্রাফেন। এভিয়েশন ইঞ্জনিয়ার নিলস গ্রাফেন বলেন, ‘আকাশে প্রতি কিলোগ্রাম বিমান সংস্থা ও যাত্রীদের জন্য ব্যয় অনেক বাড়িয়ে দেয়। থ্রিডি প্রিন্টিং-এর মাধ্যমে উৎপাদন করতে পারলে অংশগুলো অনেক হালকা হতে পারে। সহজে বলতে গেলে শেষ পর্যন্ত গ্রাহকদের অনেক কম অর্থ গুনতে হবে।’ এই মোটরসাইকেলের ডিজাইনও বেশ সমাদর পাচ্ছে। বিশেষ করে সংস্থার পুরুষ কর্মীরা খুবই উৎসাহী। হার্লি ডেভিডসন চালক ব্যার্নহার্ড গ্রুবার-ও এক গুণমুগ্ধ ভক্ত হয়ে উঠেছেন। তিনি বলেন, ‘কম দুরত্বের জন্য এমন মোটরসাইকেল দারুণ হতে পারে। চট করে অফিস যেতে হলে এর জুড়ি মেলা ভার। তার উপর এত কম শব্দ। প্রতিবেশীরা বিরক্ত হবে না। দারুণ!’ থ্রিডি প্রিন্টারে তৈরি এই মোটরসাইকেলের মূল্য ৫০,০০০ ইউরো। এর মধ্যে ৩০টি অর্ডার এসে গেছে। রাজপথে নামাতে কর্তৃপক্ষের অনুমতি নেয়ার প্রক্রিয়া চলছে । সূত্র : ডয়েচে ভেলে, বিবিসি
×