ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আবু সুফিয়ান

ইলোরার সুচী শৈলীতে বাংলার মুখ

প্রকাশিত: ০৮:৫৪, ১৬ মার্চ ২০১৮

ইলোরার সুচী শৈলীতে বাংলার মুখ

মনের গভীরে যদি শিল্পের বসত থাকে তা একদিন প্রকাশ পাবেই। আর সে শিল্প যদি হয় বাস্তব, হৃদয়গ্রাহী এবং সার্বজনীন তাহলে তা হয়ে ওঠে সময়ের প্রতীক। ইলোরা পারভীনের সুচী-শৈলীর যে শিল্পকর্ম তা প্রকাশ পেয়েছে বাংলার মুখ হিসেবে। ইলোরা সুঁই আর সুতোয় গেঁথেছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ছবি, তাঁর পরিবারের সদস্যদের ছবি। ক্যানভাসে সুঁই সুতোয় মুক্তিযুদ্ধের যে চিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন তা যেমন দৃষ্টিনন্দন তেমনি নজর কেড়েছে সবার। বঙ্গবন্ধুর ছবি সুচী-শিল্পকর্মে ফুটিয়ে তুলে ইলোরা আঁকেন বাংলার মুখ। ইলোরাকে জানতে ফিরে যেতে হবে ইলোরার শৈশবে বেড়ে ওঠা সেই নড়াইলের মাসিমদিয়া গ্রামে। এই গ্রামেই বাস করতেন বাংলাদেশের প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী এসএম সুলতান। সুলতান ছিলেন ইলোরার বাবা মরহুম আলহাজ্ব হাবিবুর রহমানের সমবয়সী ও বাল্যবন্ধু। বাড়ির পাশেই শিল্পীর বাড়ি। প্রতিদিন স্কুলে যাওয়া-আসার পথে ইলোরা দেখতেন সুলতানের ছবি আঁকা। শিশু ইলোরার ছবির প্রতি আকর্ষণ দেখে তাকে ছবি আঁকায় উদ্বুদ্ধ করেন সুলতান। হাতের কাছে ছিল না রং-তুলি, তুলির পরিবর্তে সুঁই আর রং-এর পরিবর্তে বিভিন্ন রঙের সুতা দিয়ে শুরু করলেন বুনন কাজ। ইলোরাদের বাড়ির সদস্যরা সবাই রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল। আদর্শ ছিল বঙ্গবন্ধু। একদিন একটি বইয়ের প্রচ্ছদে বঙ্গবন্ধুর ছবির অবয়ব তুলে ধরলেন নিজের সূচী-শৈলীর শিল্পকর্মে। তারপর সব কিছইু ইতিহাস। বঙ্গবন্ধু, তার পরিবার ও মুক্তিযুদ্ধ ইলোরার শিল্পকর্মের প্রধান উপাদান। তাই ইতোমধ্যে সুঁই-সুতার বুননে ফুটিয়ে তুলেছেন বঙ্গবন্ধু, তাঁর বাবা, মা, সুলতানা কামাল, শেখ রাসেল, শেখ হাসিনা ও জয়ের হাস্যোজ্জ্বল মুখ। শেখ হাসিনাসহ পাঁচ ভাইবোনের একটি গ্রুপ ছবি। আরও এঁকেছেন ভাষা আন্দোলন, রায়েরবাজারের বধ্যভূমি, জাতীয় সংসদ, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, এসএম সুলতানের মুখ। এখন তিনি আঁকছেন ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ৩২ নাম্বারে নিহতদের ছবি। যে ছবিগুলো তিনি ধানমন্ডি ৩২ নাম্বারে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক বাড়িতে প্রদান করতে চান। কিছুদিন আগে বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিান বিশ্বের সেরা সৎ পাঁচজন রাষ্ট্রনায়কদের মধ্যে একজন হয়েছেন। তখন তিনি সুঁই-সুতা দিয়ে বুনন করেছেন শেখ হাসিনার একটি অসাধারণ চিত্রকর্ম। ইলোরা প্রতিটি ছবি তৈরি করতে সময় নেন দুই থেকে তিন মাস। প্রতিদিন তিনি ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা কাজ করেন। স্বামীর সহমর্মিতা ইলোরাকে যথেষ্ট উৎসাহ যুগিয়েছে। ইলোরার দুই কন্যা হুমায়রা ফয়েজ ও নাফিসা ফয়েজ। দু’জনাই আজিমপুর ভিকারুননিসা স্কুলের ৮ম ও ২য় শ্রেণীর ছাত্রী। ১৯৯৮ সালে ইডেন মহিলা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে দর্শন বিভাগে ২য় শ্রেণীতে মাস্টার্স পাসের পর জন্মভূমি নড়াইলের মাছিমদিয়ায় ফেরেন ইলোরা। ১৯৯৪ সালের ১০ অক্টোবর এসএম সুলতান মারা যাবার পর সুলতানের শিষ্য দুলালের কাছে চিত্রকর্মের কাজ শেখা শুরু করেন তিনি। এভাবে তিনি হয়ে উঠেছেন সূচী-শৈলীর এক অনবদ্য শিল্পী।
×