ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বিএনপি নেতা লড়ছেন আ’লীগের টিকেটে!

প্রকাশিত: ০১:৪০, ১৬ মার্চ ২০১৮

বিএনপি নেতা লড়ছেন আ’লীগের টিকেটে!

নিজস্ব সংবাদদাতা, নেত্রকোনা ॥ তিনি সুদীর্ঘকাল ধরে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। সর্বশেষ উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ছিলেন। গত ইউপি নির্বাচনে তিনি বিএনপির প্রার্থী হিসেবে ‘ধানের শীষ’ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর কাছে পরাজিতও হন। আর এবার একই ইউনিয়নের উপ-নির্বাচনে তিনি লড়ছেন ‘নৌকা প্রতীক’ নিয়ে। দলের অন্য এক প্রার্থীকে বাদ দিয়ে বিএনপির এই নেতাকেই চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। আর এতে হতবাক হয়ে পড়েছেন দলটির স্থানীয় নেতাকর্মীরা। ব্যতিক্রম এ ঘটনাটি ঘটেছে নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ উপজেলার তেঁতুলিয়া ইউনিয়নে। আগামী ২৯ মার্চ এ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে উপ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। জানা গেছে, ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে তেঁতুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী রফিকুল ইসলাম মুরাদ। আর তার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ। গত ১৩ জানুয়ারি রফিকুল ইসলাম মুরাদের মৃত্যুতে এ পদটি শূন্য হয়। স্বামীর আসনে প্রার্থী হওয়ার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেন মুরাদের স্ত্রী সামিনা সুলতানা। উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ পদে থাকা কয়েক নেতাও তাকে নির্বাচনের প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য বারবার তাগাদা দেন। কিন্তু অনেক দৌড়ঝাঁপ করেও শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাননি সামিনা। তার বদলে নৌকার মনোনয়ন দেয়া হয় গতবারের ‘ধানের শীষের’ প্রার্থী আবুল কালাম আজাদকে। সামিনা সুলতানা এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমি যথাসময়ে দলীয় মনোনয়নপত্র কিনে জমা দিয়েছি। তাছাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দসহ স্থানীয় এমপি রেবেকা মমিনের সঙ্গে দেখাও করেছি। কিন্তু তারা অজ্ঞাত কারণে আমাকে মনোনয়ন দেননি। আমার বদলে প্রার্থী করা হয়েছে উপজেলা বিএনপির এক নেতাকেÑ যিনি গত নির্বাচনে আমার স্বামীর সঙ্গে ‘ধানের শীষ’ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন।’ সামিনা অভিযোগ করেন, ওই প্রার্থীর লোকজন গত ইউপি নির্বাচনের আগে আমার স্বামীর ওপর হামলা এবং বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি পর্যন্ত ভাংচুর করেছে। এ ব্যাপারেও মামলাও রয়েছে। এদিকে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে সামিনা সুলতানা এখন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। গত ১৩ মার্চ স্থানীয় নির্বাচন অফিস থেকে তার জন্য ‘ঘোড়া’ প্রতীক বরাদ্দ করা হয়। আরেকটি মজার ব্যাপার হচ্ছে, উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আবুল কালাম আজাদ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করায় বিএনপি ওই পদে কাউকেই প্রার্থী করেনি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় আওয়ামী লীগের একাধিক নেতাকর্মী বলেন, আবুল কালাম আজাদ মূলত বিএনপির লোক। আর এ কারণেই বিএনপি এখানে কাউকে প্রার্থী করেনি। তবে মোহনগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি আকম শফিকুল হক বলেছেন, অপর একটি রাজনৈতিক দলের প্রার্থী হয়ে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করায় আমরা গত ২৭ ফেব্রুয়ারি এক সভায় আবুল কালাম আজাদকে বিএনপি থেকে বহিস্কার করেছি। এদিকে মোহনগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শহীদ ইকবাল জনকণ্ঠকে বলেন, আবুল কালাম আজাদ বছরখানেক আগে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন। ওই ইউনিয়নে তার বিকল্প কোন যুৎসই প্রার্থী না থাকায় তাকেই মনোনয়ন দেয়ার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। এদিকে বিএনপি নেতা কালামকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেয়ায় চরম বেকায়দায় পড়েছেন তেুঁতলিয়া ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও সমর্থক ভোটাররা। তারা অনেকে দলের এ সিদ্ধান্তকে মেনে নিতে না পারলেও প্রকাশ্যে মুখ খুলতে পারছেন না। ভিতরে ভিতরে অনেকে সামিনা সুলতানার জন্য কাজ করছেন বলেও জানা গেছে। সামিনা সুলতানা অভিযোগ করেন, আমার পক্ষে যারা কাজ করছেনÑ তাদের অনেককে দল থেকে বহিস্কার করার হুমকি দেয়া হচ্ছে। এ কারণে অনেকে প্রকাশ্যে আসতে পারছেন না। নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, ‘বিএনপি নেতাকে’ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেয়ায় চরম নাখোশ হয়েছেন আওয়ামী লীগের কয়েক কেন্দ্রীয় নেতাও। মূলত স্থানীয় নেতাকর্মীদের সুপারিশকে বিবেচনা করেই তারা এ মনোনয়ন চূড়ান্ত করেন। এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় আ’লীগের এক নেত্রী উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দকে ডেকে নিয়ে কৈফিয়ত তলবও করেছেন। তবে তারা কেউই কৈফিয়তের সঠিক জবাব দিতে পারেননি। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা জনৈক নেতা আবুল কালাম আজাদকে মনোনয়ন দেয়ার ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন। মূলত তার কারণেই এমন বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছেন দলটির অন্য নেতাকর্মীরা।
×