ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ছায়াপথ পথশিশু বিদ্যানিকেতন

প্রকাশিত: ০৪:১৩, ১৭ মার্চ ২০১৮

ছায়াপথ পথশিশু বিদ্যানিকেতন

সমাজে অধিকার বঞ্চিত কোমলমতি শিশুদের প্রিয় পাঠশালা নওগাঁর আত্রাইয়ের ‘ছায়াপথ পথশিশু বিদ্যানিকেতন’। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় পড়–য়া একদল শিক্ষার্থী ও তরুণ পেশাজীবীদের উদ্যোগে গড়ে তোলা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ছায়াপথ পথশিশু বিদ্যানিকেতন সুবিধাবঞ্চিত ছিন্নমূল শিশুদের আলোর পথ দেখানোর এক উদীয়মান সূর্য। এখানে পথশিশুদের অক্ষর জ্ঞান ছাড়াও নৈতিক বিষয়ে শিক্ষা দেয়া হচ্ছে। অন্ধকার থেকে আলোর পথে নিয়ে আসার এ কাজটি করে যাচ্ছে এই সংগঠনটি। শিক্ষাদানের পাশাপাশি বৃক্ষরোপণ, শীতবস্ত্র বিতরণ, রক্তদান, স্বাস্থ্যসেবা ও সচেতনতা বৃদ্ধিসহ আলোকিত দেশ গঠনে কাজ করে যাচ্ছেন এই উদ্যেমী তরুণরা। আর সব কিছুই হচ্ছে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে। সপ্তাহের বৃহস্পতিবার ছাড়া প্রতিদিন বিকেল ৪টা থেকে সন্ধ্যে ৬টা পর্যন্ত আত্রাইয়ের আহসানগঞ্জ রেলস্টেশন থেকে একটু উত্তরে রেলকলোনির খোলা আকাশের নিচে চলে এই পাঠদান। সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা আনন্দ নিয়ে পড়াশোনা করে তরুণদের উদ্যোগে চালু হওয়া এই পাঠশালায়। জানা গেছে, ১৪ জন শিক্ষক নিয়ে ২০১৭ সালের জুলাই থেকে শুরু হয় সমাজের সুবিধা বঞ্চিত ছিন্নমূল পথ শিশুদের জন্য ব্যতিক্রমধর্মী এই পাঠশালাটির যাত্রা। এখানে বর্তমানে ৬০ জন শিশুশিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। এখানে যারা পড়াশানা করছে, তারা সবাই কোন না কোন কাজের সঙ্গে জড়িত। কেউ ভিক্ষা বৃত্তি, কেউ বা বাসা বাড়িতে কাজ করাসহ এমন কী অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে জড়িত। এসব শিশুর জঘন্য কর্মকা- থেকে ফিরে আনার লক্ষ্যেই এ পাঠশালার যাত্রা শুরু হয়। এখানে শিশু শিক্ষার্থীদের মায়ের মমতা ও বাবার স্নেহ দিয়ে প্রতিটি শিশুকে পড়ানো হচ্ছে। শত ব্যস্ততার মাঝেও শিক্ষকরা বিকেল হলেই ছুটে আসেন, খোলা আকাশের নিচে শিশুদের পাঠদান করতে। বিনা পয়সায় এ পাঠশালায় পড়াচ্ছেন তারা। এ পাঠশালা থেকেই শিশু শিক্ষার্থীদের দেয়া হয় বই খাতাসহ শিক্ষা উপকরণ। যারা এখানে পাঠদান করছেন, তারা সবাই আত্রাই মোল্লা আজাদ বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত পেশাজীবী। তারা কলেজ শেষে কেউবা প্রাতিষ্ঠানিক কাজকর্ম শেষে স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে এখানে পাঠদান করেন। এ পাঠশালায় যারা শিক্ষকতা করছেন, তারা সবাই ছায়াপথ সংগঠনের সদস্য। এখানে প্রাক-প্রাথমিক স্তরের শিক্ষা দেয়া হয়। এমনকি অক্ষরজ্ঞান থেকে শুরু করে বাংলা, ইংরেজী, সাধারণ জ্ঞান, ছবি আঁকা, গল্প কিংবা গানের আসর- সবই রয়েছে এই স্কুলটির পাঠ্য তালিকায়। এ পাঠশালার শিক্ষার্থীদের বয়স ৬ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে। অক্ষর জ্ঞান ছাড়াও এখানে নৈতিক বিষয়ে শিক্ষা প্রদান করেন শিক্ষকরা। পাঠশালাটি পড়াশোনা শুরু হয় জাতীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে। তারপর পবিত্র কোরাআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু হয় পাঠদান। শিক্ষার আলো ছড়িয়ে সমাজকে আলোকিত করাই এ সংগঠনের প্রধান লক্ষ্য। সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের সুশিক্ষা প্রদান, মানসিক বিকাশ সাধন ও সুন্দর ভবিষ্যত্ গঠনের অনুপ্রেরণা প্রদানের উদ্দেশ্য নিয়ে এগিয়ে চলছে ‘ছায়াপথ’। সরেজমিনে রবিবার পড়ন্ত বিকেলে উপজেলার ছায়াপথ পথশিশু বিদ্যানিকেতনে শিক্ষার্থী লিপি, রতœা ও নবির উদ্দিন বলেন, ‘আমরা সবাই বিভিন্ন কাজ করি। কাজের ফাঁকে এখানে পড়ছি। আমাদের বই-খাতা কিনতে হচ্ছে না। এ স্কুল থেকেই দেয়া হচ্ছে। আমরা বড় হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে লেখাপড়া করছি। এ ব্যাপারে ছায়পথ সংগঠনের উদ্যোক্তা ও ছায়াপথ পথশিশু বিদ্যানিকেতনের শিক্ষক মোঃ আমানুল্লাহ ফারুক বাচ্চু বলেন, আমরা মূলত ছিন্নমূল শিশুদের পড়াছি। তারা অন্যান্য শিশুর মতো নয়। ওরা সমাজের সুবিধাবঞ্চিত। তাদেরকে আলোর পথ দেখাচ্ছি। যাতে তারা মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজ থেকে দূরে থাকে এবং নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে পারে। ছায়াপথ সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ডা. আশিষ কুমার বলেন, এখানে যারা পড়াচ্ছেন তারা সবাই বিনা পয়সায়, অর্থাৎ স্বেচ্ছাশ্রম দিচ্ছেন। কেউ শিক্ষার্থী আবার কেউ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। আমাদের নিজেদের অর্থ দিয়ে শিশু শিক্ষার্থীদের বই খাতা কিনে দিচ্ছি। তিনি আরও বলেন, ‘সামাজিক ও মানবিক দায়বদ্ধতা থেকেই আমরা কাজগুলো করছি। আমাদের উদ্দেশ্য হলো সুবিধাবঞ্চিত ছিন্নমূল শিশুরা যাতে অপরাধের দিকে পা না বাড়ায়। তাদের অন্ধকার থেকে আলোর পথে নিয়ে আসা। তাই আমরা স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে শিশুদের পাঠদান করছি। বিশ্বজিৎ মনি, নওগাঁ থেকে
×