ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সরকারী চাকরিতে কোটা সুবিধা অপরিবর্তিত রাখার দাবি

প্রকাশিত: ০৪:৪৪, ১৭ মার্চ ২০১৮

সরকারী চাকরিতে কোটা সুবিধা অপরিবর্তিত রাখার দাবি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সরকারী চাকরিতে বিদ্যমান কোটা সংস্কারের আন্দোলন বিশেষ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে করেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা। আন্দোলনের নামে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি অসম্মান প্রদর্শন করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তারা। বহুকাল ধরে বঞ্চিত মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি রাষ্ট্রের দায় আছে। সেই দায় থেকে কোটা সুবিধা অপরিবর্তিত রাখার পাশাপাশি তা পিলিমিনারি থেকে শতভাগ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সরকারকে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত মানববন্ধন থেকে এই আহ্বান জানানো হয়। মানববন্ধনের আয়োজন করে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের সংগঠন আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। সংগঠনের সভাপতি সাজ্জাদ হোসেনের সভাপতিত্বে সূচনা বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক রাশেদুজ্জামান শাহীন। বক্তৃতা করেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য জোবায়দা হক অজন্তা, সহসভাপতি ওমর ফারুক সাগর ও আকবর হোসেন মিঠু, সাংগঠনিক সম্পাদক রসিম উদ্দিন ও নাজমা আক্তার, কেন্দ্রীয় সদস্য আব্দুর রশিদ ম-ল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ সম্পাদক অভিজিৎ সরকার, সুনামগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি সোহেল আহমেদ বিপ্লব, সহসভাপতি আতাউর রহমান, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ সম্পাদক আবুল বাশার জুয়েল, নান্দাইল উপজেলা শাখার সভাপতি শাহ আলম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আহসান কাদের মাহমুদ ভূইয়া। মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, সরকারী চাকরিতে বিদ্যমান মুক্তিযোদ্ধা কোটা কারো দয়ার দানে প্রাপ্ত নয়। বহু বছরের বঞ্চনার বিপরীতে একটি শুভ উদ্যোগ মাত্র। এ কারণে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকারের নেয়া উদ্যোগের বিরুদ্ধে আদালতে রিট করা হলেও সেটি সরাসরি খারিজ করে দেয়া হয়েছে। কোটা বহাল রাখার পাশাপাশি প্রিলিমিনারি থেকে তা শতভাগ কার্যকর করার দাবি জানান তারা। বক্তারা বলেন, বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশ যখন মধ্যম আয়ে উন্নীত হতে যাচ্ছে, দেশে যখন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিরাজ করছে তখন আন্দোলনের নামে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টায় তাদের একটি বিশেষ উদ্দেশ্য রয়েছে বলে আমরা মনে করি। একটি স্পর্শকাতর বিষয়কে সামনে এনে তারা ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে নেমেছে। কোটা নিয়ে কোন ধরনের কূটচাল মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা বরদাস্ত করবেন না। জামায়াত-শিবির প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীর আবদারের কাছে নতি স্বীকার করে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় হাত দিলে সারা বাংলার লাখ লাখ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান রাস্তায় নেমে আসবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয় সমাবেশ থেকে। সম্প্রতি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন প্রত্যাখ্যান করে তারা বলেন, প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, কোটায় শূন্য পদগুলো মেধা তালিকা থেকে পূরণ করা হবে। এই প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সুকৌশলে বলার চেষ্টা করা হয়েছে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা মেধাবী নয়। এর মধ্য দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তানদের অপমান করা হয়েছে। অবিলম্বে এই প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহারের আহ্বান জানান তারা। বর্তমানে কোটা সংস্কারের আন্দোলনের নামে সাধারণ ছাত্রদের কাঁধে ভর করে জামায়াত-শিবির চক্র ঐতিহাসিক মার্চ মাসে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজে তা-ব চালাচ্ছে। এ ধরনের ধ্বংসাত্মক কর্মকা- পরিচালনার পূর্বাভিজ্ঞতা শুধু শিবির ক্যাডারদেরই রয়েছে। অবিলম্বে এই সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। যাতে ভবিষ্যতে আর কেউ কোটাবিরোধী আন্দোলনের নামে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ভূলুণ্ঠিত করার ধৃষ্টতা দেখানোর সাহস না পায়। তারা বলেন, কোন মহলের ইন্ধনে চাকরিতে বিদ্যমান মুক্তিযোদ্ধা কোটায় হাত দিলে মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তানরা কোনভাবেই তা মেনে নেবে না। মানববন্ধন থেকে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা ৬ দফা দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলোÑ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিতে হবে। বিসিএসের প্রিলমিনারি থেকে কোটা শতভাগ বাস্তবায়ন করতে হবে। মুক্তিযোদ্ধা কোটার শূন্যপদ সংরক্ষণ করে বিশেষ নিয়োগের মাধ্যমে পূরণ করতে হবে। প্রশাসন থেকে রাজাকার ও তাদের বংশধরদের বিদায় করতে হবে এবং ১৯৭২ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ৩০% মুক্তিযোদ্ধা কোটায় শূন্য পদগুলোতে চলতি বছরেই নিয়োগ দিতে হবে।
×