ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

এ পর্যন্ত ১১ লাখের বায়োমেট্রিক নিবন্ধন সম্পন্ন

সেনা সদস্যদের প্রচেষ্টায় রোহিঙ্গা নিবন্ধনে বিরাট সাফল্য

প্রকাশিত: ০৪:৪৮, ১৭ মার্চ ২০১৮

 সেনা সদস্যদের প্রচেষ্টায় রোহিঙ্গা নিবন্ধনে বিরাট সাফল্য

ফিরোজ মান্না কক্সবাজার থেকে ফিরে ॥ মিয়ানমারে জাতিগত সহিংসতায় নির্যাতনের শিকার হয়ে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা এ পর্যন্ত ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে নিবন্ধনের আওতায় আনা হয়েছে। পাসপোর্ট অধিদফতরের এই কাজে সরাসরি সেনাবাহিনীর সিগন্যাল কোরের সদস্যরা নিয়োজিত রয়েছেন। বর্তমানে উখিয়ার কুতুপালং ও থাইলখালীতে তিনটি টিম কাজ করছে। সম্পূর্ণ বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধন কার্যক্রম চলছে। প্রতিজনের ১০ আগুলের ছাপ নেয়া হচ্ছে। এই কার্যক্রমে দেড় শ’ জন সেনা সদস্য ও ৬০ জন বিজিবি সদস্য কাজ করছেন। এর আগে পরিসংখ্যান ব্যুরো ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে রোহিঙ্গাদের নিবন্ধন কার্যক্রম চালায়। তারা ২ লাখ রোহিঙ্গার নিবন্ধন কাজ শেষ করেই ক্ষান্ত দিয়েছে। এরপর সরকার পাসপোর্ট অধিদফতরকে এই দায়িত্বে নিয়োজিত করে। বর্তমানে মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত পাসপোর্ট অধিদফতরের ডিজি মেজর জেনারেল মাসুদ রেজওয়ান টেলিফোনে জনকণ্ঠকে বলেন, মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা নাগরিকদের নিবন্ধন কার্যক্রম একটি চলমান প্রক্রিয়া। যতদিন পর্যন্ত একজন রোহিঙ্গা নিবন্ধনহীন থাকবেন ততদিন নিবন্ধন কার্যক্রম চলবে। সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত নিবন্ধন কার্যক্রম চালানো হয়। প্রথমে ১৬০ জনবল দিয়ে কাজ নিবন্ধন কাজ চালানো হয়েছিল। পরের দিকে লোকবল বৃদ্ধি করা হয়। এই কাজে দেড় শ’র বেশি সেনা সদস্যকে নিয়োগ করা হয়েছে। ৬০ জন বিজিবি সদস্য সেনা সদস্যদের সহযোগিতায় আছেন। সম্প্রতি কক্সবাজারের উখিয়া ও বালু খালি এলাকা ঘুরে জানা গেছে, সেনা সদস্যদের সহযোগিতায় গত বছরের নবেম্বর থেকে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর নিবন্ধন কাজ শুরু করা হয়। ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১০ লাখ ৮৮ হাজার ৮৭০ জন রোহিঙ্গা নিবন্ধনের আওতায় এসেছে। এত অল্প সময়ের মধ্যে এই বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠী নিবন্ধনের আওতায় আনা সত্যিই একটি বড় কাজ হিসেবে দেখছেন এলাকার মানুষ। সেনা সদস্যদের অক্লান্ত পরিশ্রমে নিবন্ধনের গতি ছিল উল্লেখ করার মতো। তারা প্রতিটি বুথ থেকেই ১০ মিনিটের মধ্যে একজন রোহিঙ্গা নাগরিককে পরিচয়পত্র দিয়ে দেন। পুরাতন ও নতুন সব রোহিঙ্গাকেই নিবন্ধনের আওতায় আনা হচ্ছে। কারণ কেউ যেন বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর সঙ্গে মিশে পাসপোর্টসহ অন্যান্য সুবিধা না নিতে পারেন। রোহিঙ্গা নাগরিকদের নিবন্ধন কার্যক্রমের নাম দেয়া হয়েছে ‘ মিয়ানমার ন্যাশনাল রেজিস্ট্রেশন’। দেশে এখন কত সংখ্যক রোহিঙ্গা মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসেছে তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই। তবে এই নিবন্ধনের মধ্য দিয়ে প্রকৃত সংখ্যা জানা যাবে। তারা যাতে মূল ধারার জনগোষ্ঠীর সঙ্গে মিশে না যায় সে জন্য নিবন্ধন কার্যক্রম জরুরী ছিল বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। সেনা সদস্যরা এই কাজে সহযোগিতা না দিলে কাজটি করতে কয়েক মাস সময় লেগে যেত। সেনা সদস্যদের একান্ত প্রচেষ্টায় রোহিঙ্গাদের বায়োম্যাট্রিক নিবন্ধন হয়েছে। জেনারেল মাসুদ বলেন, এমআরপি পাসপোর্ট কার্যক্রম সফলভাবে বাস্তবায়ন করার জন্য সরকার কাজটি পাসপোর্ট অধিদফতরকে দিয়েছে। এর আগে কাজটি পরিসংখ্যান ব্যুরোকে দেয়া হয়েছিল। তারাও কিছু কাজ করেছে। আমরা ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে রোহিঙ্গা নাগরিকদের নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু করেছি। তখন অল্প কয়েকটি কম্পিউটার ও প্রিন্টার দিয়ে কাজ শুরু করি। লোকজন তখন সমালোচনা শুরু করে, এভাবে নিবন্ধন চললে ১০ বছর সময় লাগবে। কিন্তু মানুষের সেই ধারণা অল্প কয়েকদিনের মধ্যে বদলে যেতে শুরু হয়। ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা নাগরিকের নিবন্ধন কাজ শেষ হয়েছে। সেনা সদস্যরা বর্তমানে তিন এলাকায় নিবন্ধন কার্যক্রম ক্যাম্প চালু রেখেছেন। নতুন করে আসা রোহিঙ্গারা এসব ক্যাম্পে নিবন্ধন করছেন।
×