ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নিহত প্রিয়ক ও তার শিশু কন্যার লাশের জন্য স্বজনদের অপেক্ষা

প্রকাশিত: ০৫:০৮, ১৭ মার্চ ২০১৮

 নিহত প্রিয়ক ও তার শিশু কন্যার লাশের জন্য স্বজনদের  অপেক্ষা

স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর ॥ নেপালের ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গত সোমবার (১২ মার্চ) ইউএস-বাংলার বিমান দুর্ঘটনায় হতাহতদের মধ্যে গাজীপুরের শ্রীপুরের দুই পরিবারের পাঁচ সদস্যের তিন সদস্য শুক্রবার বিকেলে নেপাল থেকে বাংলাদেশে ফিরেছেন। এরা হলেন গাজীপুরের ব্যবসায়ী মেহেদী হাসান, তার স্ত্রী কামরুন নাহার স্বর্ণা ও মেহেদী হাসানের ফুপাতো ভাইয়ের স্ত্রী এ্যালমুন নাহার এ্যানি। তবে তাদের সঙ্গে ফিরেননি এ্যানির স্বামী আলোকচিত্রী ফারুক হোসেন প্রিয়ক ও তাদের শিশুসন্তান প্রিয়ন্ময়ী তামারা। দুর্ঘটনায় প্রিয়ক ও তামারা নিহত হয়েছেন। নিহতদের লাশের অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন তাদের স্বজনরা। একমাত্র ছেলে ও নাতনিকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন প্রিয়কের মা ফিরোজা বেগম। আহত পুত্রবধূ শুক্রবার দেশে ফিরে আসার খবরে তিনি কিছুটা স্বস্তি পেলেও নিহত ছেলে ও নাতনির জন্য তিনি বিলাপ করে কাঁদতে থাকেন। এ সময় তিনি বলতে থাকেন আমার ছেলে ও নাতনি কখন আমাদের মাঝে ফিরে আসবে, আমি তাদের দেখতে চাই। তার এ বিলাপ করে কান্নার সময় উপস্থিত সবাই অশ্রুসজল হয়ে উঠেন। যেন তাকে সান্ত¡না দেয়ার সকল ভাষা সবাই হারিয়ে ফেলেছেন। তবুও স্বজনরা তাকে সান্ত¡না দেয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা করছিল। এদিকে ঘটনার পাঁচদিন পরও নিহতদের লাশ তাদের পরিবার কখন পাবেন সে বিষয়ে শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত নিশ্চিত হতে পারেননি তাদের স্বজনরা। স্বজনদের লাশের অপেক্ষায় তারা এখন প্রহর গুনছেন। রয়েছেন তারা নানা উৎকণ্ঠায়। তাদের এ অপেক্ষার প্রহর যেন কাটছে না। শুক্রবার শ্রীপুরের নগর হাওলা গ্রামে প্রিয়কের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় পুরো বাড়িতে বিরাজ করছে স্তব্ধতা। কারো মুখে হাসি নেই। প্রিয়কের মা ফিরোজা বেগমের এখন একটাই চাওয়া কখন ফিরে আসবে তার একমাত্র সন্তান ও নাতনি। পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার বিকেলে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে নেপাল থেকে আহত এ্যানি, মেহেদী ও স্বর্ণা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে পৌঁছেন। পরে বিমান বন্দর থেকে এ্যাম্বুলেন্সে করে তাদের নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে। সেখানে তাদের যথাযথ চিকিৎসা ও পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হবে। প্রিয়কের চাচাত ভাই লুৎফুর রহমান জানান, পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতটি দেখা ও বিদেশ ভ্রমণের জন্য গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার নগর হাওলা গ্রামের এফএইচ প্রিয়ক ওরফে ফারুক হোসেন তার তিন বছরের একমাত্র সন্তান প্রিয়ন্ময়ী তামারা ও স্ত্রী এ্যালমুন নাহার এ্যানিকে নিয়ে ইউএস বাংলার উড়োজাহাজে চড়ে গত সোমবার নেপালের উদ্দেশ্যে রওনা হন। একই বিমানে চড়ে ফারুকের মামাত ভাই মেহেদী হাসান অমিত ও অমিতের স্ত্রী সাঈদা কামরুন্নাহার স্বর্ণা আক্তারও নেপাল যাচ্ছিলেন। তাদের পাঁচ দিনের সফর শেষ করে শুক্রবার দেশে ফিরে আসার কথা ছিল। কিন্তু তাদের সেই আনন্দ সফর পরিণত হয়েছে বিষাদে। সোমবার বিমান বিধ্বস্ত হয়ে নেপালেই নিহত হন ফারুক ও তার মেয়ে প্রিয়ন্ময়ী। শুক্রবার প্রিয়কের স্ত্রী এ্যানি, মেহেদী ও তার স্ত্রী স্বর্ণা ফিরে এলেও ফিরে আসেনি প্রিয়ক ও তার শিশু কন্যা প্রিয়ন্ময়ী।
×