ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

প্যান্ডোরার বাক্স খুলে দিলেন ট্রাম্প

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ১৭ মার্চ ২০১৮

প্যান্ডোরার বাক্স খুলে দিলেন ট্রাম্প

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন ইস্পাত ও এ্যালুমিনিয়াম আমদানির ওপর শুল্ক আরোপের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। এর মাধ্যমে কর্মসংস্থান ও অর্থনীতিতে উৎপাদনশীলতা বাড়াবে না। পরিবর্তে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে সবচেয়ে বেশি দ্বন্দ্ব তৈরি হবে বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন। ফরেন পলিসি। নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ট্রাম্প ইস্পাত শিল্পের ওপর ২৫ ও এ্যালুমিনিয়ামের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন। চলতি মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্টের হাতে আসা বাণিজ্য দফতরের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, প্রাচুর্য সত্ত্বেও অব্যবহৃত থাকায় ইস্পাত ও এ্যালুমিনিয়াম খাত জাতীয় নিরাপত্তার জন্য এক রকম ঝুঁকি সৃষ্টি করছে। এটি একটি অভিনব যুক্তি যে, যখন জর্জ ডব্লিউ বুশ প্রশাসন ২০০২ সালে একই ধরনের শুল্ক একই কারণে ধার্য করেন তখন তাতে নিরাপত্তা ব্যবস্থার যুক্তি দেখাননি। ওবামা প্রশাসনের মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি মাইকেল ফ্রোম্যান বলেন, প্রশাসনিক বহুমুখীতার জন্য যুক্তরাষ্ট্র সবসময় মনে করে যে, জাতীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা কিভাবে ব্যবহার করা উচিত বা অন্য দেশগুলো এর ব্যবহার কিভাবে করবে সেসব প্রকারের মধ্যে বিধিনিষেধ রাখা। যার মাধ্যমে সব ধরনের বাণিজ্যিক ব্যবস্থাকে যথাযথভাবে বিচার করা সম্ভব হবে। ট্রাম্প প্রশাসনের আনুষ্ঠানিক শুল্ক আরোপের ব্যাপারে যুক্তিটি ছিল, বিদেশ থেকে বানের মতো ইস্পাত ও এ্যালুমিনিয়াম আমদানি করে দেশীয় মিল ও কারখানা বন্ধ করার উপক্রম হয়েছে। এতে যুক্তরাষ্ট্রের কম দক্ষ ও উৎপাদনশীল গুরুত্বপূর্ণ ধাতব পণ্যের উৎপাদন কমে যেতে পারে। এই পণ্যগুলো প্রতিরক্ষা শিল্পে ব্যবহৃত হয়। যার মধ্যে জাহাজ ও উন্নত জেট ফাইটার বিমান শিল্প অন্যতম। ইইউ ট্রেড কমিশনার সিসিলিয়া মালমস্ট্রম জানান, যে যুক্তিতে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে তাতে বেশ স্পষ্ট যে, ইইউর প্রতিরক্ষা অংশীদার যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চমূল্যের ধাতবপণ্য সরবরাহ করা হতো। জাতীয় নিরাপত্তার অজুহাতে শুল্ক কার্যকর করে বহুমুখী বাণিজ্যিক ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত করা হচ্ছে। এটি অনেকসময় বিশেষ করে যুদ্ধকালীন সময়ে অপব্যবহার হতে পারে। যখন জর্জ ডব্লিউ বুশ প্রশাসন একই প্রশ্নের পরীক্ষা করেন তখন দেখতে পান, প্রতিরক্ষা শিল্পে ব্যবহৃত ক্ষুদ্র যন্ত্রাংশের খুবই সল্প সংখ্যক মার্কিন পণ্য ব্যবহার করা হয়। এরই প্রেক্ষিতে ট্রাম্প কমার্স ডিপার্টমেন্ট প্রতিজ্ঞাবদ্ধ যে, মার্কিন প্রতিরক্ষা শিল্পের ভিত্তিটি আমদানি নির্ভর হওয়ায় জাতীয়ভাবে উৎপাদিত পণ্যের ব্যবহার কম হচ্ছে। এতে দেশীয় শিল্প হুমকির মুখে পড়েছে। যা বর্তমানে বুশ প্রশাসনের চেয়ে ১২ গুণের বেশি খারাপ হয়ে পড়েছে। ইয়াল ল’ স্কুলের পল সাই চায়না সেন্টারের নির্বাহী পরিচারক রবার্ট উইলিয়ামস বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সামনে এখন অনেক সমস্য আমরা দেখতে পাচ্ছি। নির্দিষ্ট করে বললে কমার্স ডিপার্টমেন্টের সুপারিশ নিয়ে আসার কাজটি অনেক ব্যয়বহুল ও খোড়া যুক্তি। যা করা সহজ নয়। ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন ইস্পাত ছাড়া কোন দেশ হতে পারে না। পাশাপাশি তিনি এও বলেছেন, ইস্পাতের ওপর শুল্ক আরোপ ইস্পাত ও এ্যালুমিনিয়াম শিল্পে জড়িত লোকদের চাকরির নিরাপত্তার জন্য করা হয়েছে। বাণিজ্য সমস্যা সম্পর্কে কাজ করা এক কংগ্রেস সহায়তাকারী জানান, আমরা দুর্বৃত্ত হয়ে গেছি। এ্যাক্ট ওয়ান আইনের পর থেকে এই বন্দুক আমাদের টেবিলে ঘুমিয়ে আছে। কেউই একে খুব ভাল কারণ দেখিয়ে তুলতে পারছে না। কেননা এটি তৈরি হয়েছে, একটি পরিপূর্ণ চিন্তার ফলশ্রুতিতে। যাতে আপনি পরে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করতে পারেন।
×