ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সুন্দরবন বাঁচাতে গোলপাতা আহরণে লাগাম

প্রকাশিত: ২২:২৯, ১৭ মার্চ ২০১৮

সুন্দরবন বাঁচাতে গোলপাতা আহরণে লাগাম

আহসান হাবিব হাসান, মোংলা থেকে ॥ পূর্ব সুন্দরবনে গোলপাতা আহরণের মৌসুম শেষের দিকে। তবে এবার বন বিভাগের পক্ষ থেকে পাস-পারমিটে কড়াকড়ি আরোপ করায় বাওয়ালিরা নাখোশ। অনেকে লোকসান দেয়ার কথাও জানিয়েছেন। বন কর্মকর্তারা বলছেন, সুন্দরবনকে বাঁচাতেই এবার রাজস্ব আয়ের দিকে নজর দেয়া হয়নি। বুঝে-শুনেই এগোনো হচ্ছে। কারণ সম্প্রতি বনের ভেতরে একাধিকবার অগ্নিকান্ড ঘটেছে, অপরাধও বেড়ে গেছে। একই সঙ্গে অধিকাংশ এলাকা অভয়ারণ্য ঘোষণা করা হয়েছে। সুন্দরবনকে মূলত দুভাগে বিভক্ত করা হয়েছে । পূর্ব সুন্দরবন ও পশ্চিম সুন্দরবন। চাঁদপাই ও শরণখোলা এ দুই রেঞ্জ নিয়ে পূর্ব সুন্দরবন এবং খুলনা ও সাতক্ষীরা রেঞ্জ নিয়ে পশ্চিম সুন্দরবন। প্রতি বছরের ডিসেম্বর থেকে মার্চ সুন্দরবনে গোলপাতা আহরণের মৌসুম। ব্যবসায়ীরা বন বিভাগ থেকে বিএলসি নিয়ে বাওয়ালিদের দিয়ে গোলপাতা আহরণ করেন। বছরজুড়ে এসব গোলপাতা বিক্রি হয়। দক্ষিণাঞ্চলে মূলত ঘরের ছাউনি হিসেবে ব্যবহার হয় এটি। বন বিভাগ জানিয়েছে, এবার বাওয়ালিদের পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জে সীমিত আকারে গোলপাতা আহরণের পাস দেয়া হলেও শরণখোলা রেঞ্জে কোনো পাস দেয়া হয়নি। এ ব্যাপারে পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের স্টেশন কর্মকর্তা (এসও) মো. কামরুল হাসান জানান, এবার পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জে গোলপাতা আহরণ লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে। আর অভয়ারণ্য ঘোষণা হওয়ায় এ মৌসুমে শরণখোলা রেঞ্জে গোলপাতা কাটার অনুমতিই দেয়া হয়নি। চাঁদপাই রেঞ্জের কর্মকর্তা (এসিএফ) শাহীন কবির জানান, এ রেঞ্জে আগে ২০০ থেকে ৫০০টি নৌকায় গোলপাতা আহরণের অনুমতি দেয়ার রেকর্ডও আছে। কিন্তু সার্বিক দিক বিবেচনায় এবার মাত্র ১৩৩টি নৌকার অনুমতি দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে চাঁদপাই কুপে (অঞ্চল) মাত্র ৭৩টি নৌকায় ৩ হাজার ৭০০ টন এবং শ্যালা কুপে ৬০টি নৌকায় ৪ হাজার ৯৫০ টন গোলপাতা সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন তারা। এছাড়া এবার নৌকার সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্য ১৪ মিটার নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। এর ফলে আগে এক নৌকা দিয়ে ৫০০ মণ পর্যন্ত গোলপাতা আহরণ করা গেলেও ১৪ মিটারের নৌকায় ২০০ মণের বেশি আহরণ কঠিন হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন বাওয়ালিরা। রেঞ্জ কর্মকর্তা শাহীন কবির বলেন, এ পদক্ষেপে রাজস্ব আয় এবার কম হবে, এটা ঠিক। কিন্তু সুন্দরবনের মৎস্যসম্পদ রক্ষা ও গাছ চুরি রোধে এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তবে এ কঠোরতায় লোকসান গুনতে হচ্ছে বলে দাবি করেছেন শরণখোলা উপজেলার জামাল শরীফ, মোংলার আসলাম সর্দার, বরগুনার লিয়াকত ও পাথরঘাটার হাওলাদার রবিনসহ একাধিক বাওয়ালি। তাদের অভিযোগ, ডিসেম্বর থেকে মার্চ হলো গোলপাতা আহরণের মৌসুম। বন বিভাগের সিদ্ধান্তহীনতার কারণে এমনিতেই দেরিতে পাস দেয়া হয়েছে। তার ওপর বাড়তি কড়াকড়ি। তারা বলছেন, হঠাৎ করে ফেব্রুয়ারির ১৪ তারিখ থেকে গোলপাতা কাটার অনুমতি স্থগিত করে বন বিভাগ। তখন অনেক বাওয়ালিই ফিরে গেছেন। পরে শর্তসাপেক্ষে অনুমতি দিলেও তারা আর ফিরে আসেননি। এতে মহাজনকে লোকসান গুনতে হয়েছে। তবে বাওয়ালিদের অভিযোগ কানে এলেও আমলে নিতে না পারার কথা স্বীকার করে পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মাহমুদুল হাসান বলেন, এবার যতটুকু অনুমতি দেয়া হয়েছে, তা মানবিক বিবেচনায়, বাওয়ালিদের পরিবারের কথা চিন্তা করে।
×