ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ত্রিভুবনে বিমানবন্দরের অব্যবস্থাপনা থেকেই বিপত্তি!

প্রকাশিত: ২৩:৫৮, ১৭ মার্চ ২০১৮

ত্রিভুবনে বিমানবন্দরের অব্যবস্থাপনা থেকেই বিপত্তি!

অনলাইন ডেস্ক ॥ নেপালের ইউএস-বাংলার উড়োজাহাজ বিধ্বস্তের ঘটনায় ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনার অভিযোগ উঠছে। বলা হচ্ছে, কোন রানওয়েতে নামতে হবে, তা নিয়ে পাইলট ও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের মধ্যে যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছিল, সেটি অব্যবস্থাপনারই উদাহরণ। নেপালের সংবাদমাধ্যম নেপালি টাইমস ডট কমে গতকাল শুক্রবার এ বিষয়ে একটি লেখা প্রকাশিত হয়। দেশটির অন্যতম প্রকাশক ও সম্পাদক কনক মণি দীক্ষিত লেখাটি লিখেছেন। তিনি বলেন, ইউএস-বাংলার উড়োজাহাজটিকে প্রথমে ২ নম্বর রানওয়ে দিয়ে অবতরণ করার কথা বলে বিমানবন্দরের নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ। তখন নিয়ন্ত্রণ টাওয়ারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিলেন কো-পাইলট পৃথুলা রশীদ। এরপর ক্যাপ্টেন আবিদ সুলতান যোগাযোগ শুরু করেন। নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে আবিদকে জানানো হয়, ২ নম্বর রানওয়েতে নামার অনুমতি নিলেও উড়োজাহাজটি যাচ্ছে ২০ নম্বর রানওয়ের দিকে। কনক মণি দীক্ষিত লিখেছেন, এ থেকেই বোঝা যায় যে পাইলটের মনে দুই রানওয়ে নিয়ে কিছু বিভ্রান্তি ছিল। এ সময় আরেকটি উড়োজাহাজের একজন নেপালি পাইলট নিয়ন্ত্রণ কক্ষের (এটিসি) সঙ্গে ইউএস-বাংলার পাইলটদের কথোপকথন শোনেন। সেখানে এটিসির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছিল, ইউএস-বাংলার পাইলটকে কিছুটা অগোছালো মনে হচ্ছে। তখন তাঁকে রাডারের সাহায্য নিয়ে বিপজ্জনক পথ থেকে সরে আসতে বলা হয়। কনক মণি দীক্ষিত লিখেছেন, এরপর বিমানবন্দরের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে একজন কর্মকর্তা তাঁকে সতর্ক করেন। ইউএস-বাংলার পাইলট ২০ নম্বর রানওয়েতে নামার অনুমতিই চান। ক্যাপ্টেন আবিদ সুলতান আবার বলে ওঠেন, ‘রানওয়ে ২-এ নামার জন্য প্রস্তুত’ (যদিও এর আগে ২০ রানওয়েতে নামতে অনুমতি নিয়েছিলেন তিনি)। এই সময় এটিসি নামার অনুমতি দেয়। কনক মণি লিখেছেন, ওই সময় নেপালের সেনাবাহিনীর একটি হেলিকপ্টারকে ১৫ কিলোমিটার দূরে অপেক্ষা করিয়ে রাখা হয়। এরপর শেষবারের মতো এটিসি বলে, ইউএস-বাংলার উড়োজাহাজটি ‘অন ফাইনাল ফর ২০’। নেপালের দৈনিক কাঠমান্ডু পোস্ট স্থানীয় শিখরনিউজডটকমের বরাত দিয়ে গত বৃহস্পতিবার ভিডিওচিত্রসহ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ভিডিওচিত্রটি বিধ্বস্ত হওয়া ইউএস-বাংলার উড়োজাহাজের। কাঠমান্ডু পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার দূরে গাগালপেদি এলাকায় উড়োজাহাজটি অনেক নিচে নেমে আসে। ভূপৃষ্ঠ থেকে মাত্র ২০০ ফুট ওপর দিয়ে যাচ্ছিল উড়োজাহাজটি। এ সময় মনে হচ্ছিল, উড়োজাহাজটি যেন পাহাড়ের পাদদেশে বিধ্বস্ত হতে যাচ্ছে। যাত্রীরা এ সময় জানালা দিয়ে গাছপালা-ঝোপজঙ্গল দেখতে পান। কনক মণি দীক্ষিত লিখেছেন, ওই ভিডিও দেখে বোঝা যাচ্ছে যে দিনের আলোতেও পথ হারিয়ে ফেলেছিল ইউএস-বাংলার উড়োজাহাজটি। তিনি বলেন, এখন প্রশ্ন উঠছে, কেন নিয়ন্ত্রণ কক্ষ (এটিসি) থেকে উড়োজাহাজটিকে ‘ভিজ্যুয়াল ফ্লাইট রুলস’ থেকে ‘ইনস্ট্রুমেন্টাল ফ্লাইং’-এ যেতে বলা হলো না? কারণ, উড়োজাহাজটিকে বিপজ্জনকভাবে উড়তে দেখা যাচ্ছিল। প্রকাশক ও সম্পাদক কনক লিখেছেন, সর্বশেষ ইউএস-বাংলার পাইলট জিজ্ঞেস করেছিলেন, অবতরণ করতে পারবেন কি না। তখন এটিসি থেকে বলা হয়েছিল, ‘আমি আবার বলছি, ঘুরে যান।’ এরপরই উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হয়। গত সোমবার ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বাংলাদেশের বেসরকারি বিমান সংস্থা ইউএস-বাংলার উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হয়। ওই দিনই উড়োজাহাজটি ৭১ জন আরোহী নিয়ে ঢাকা থেকে নেপালের উদ্দেশে যাত্রা করে। তাঁদের মধ্যে ৫১ জন নিহত হন। কনক মণি দীক্ষিত লিখেছেন, এই অপর্যাপ্ত রেডিও যোগাযোগ আবার ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দিকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে মনোযোগ দিতে বাধ্য করেছে। প্রশ্ন উঠছে বিমানবন্দরটির নিরাপত্তা ও অব্যবস্থাপনা নিয়ে। যে জায়গায় উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হয়েছিল, তার কাছেই ছিল জন-অধ্যুষিত শহর এবং উড়োজাহাজটি এর আগে বিপজ্জনকভাবে টার্মিনাল ভবন, হ্যাঙ্গার, পার্কিং বে ও ট্যাক্সিওয়েজের ওপর দিয়ে ওড়াউড়ি করছিল। এই প্রকাশক বলেন, ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর যেন দেশের লজ্জায় পরিণত না হয়, এ জন্য উন্নতিকল্পে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে। তিনি লিখেছেন, ‘আমরা যখন বিমানবন্দরের টয়লেটে পানি পাই, দুর্গন্ধ পাই না, তখনই আনন্দিত হই। এ থেকে দেখা যাচ্ছে, এই বিমানবন্দর কতটা বাজেভাবে চলছে। সব শ্রেণির কর্মকর্তাদের উদাস ব্যবহার, লাগেজ নিতে গিয়ে বিশৃঙ্খলা, একটি বডি স্ক্যানারে যাওয়া এসকেলেটরে লম্বা লাইন—এই দেশে ঢোকা এবং বের হওয়ার সময় সম্ভাব্য সবচেয়ে খারাপ অভিজ্ঞতাটিই মানুষ পায়।’ কনক মণি দীক্ষিত আরও লেখেন, ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং ও ল্যান্ডিং ফি পৃথিবীর সর্বোচ্চ। গত এক দশকেও বিমানবন্দরের ট্যাক্সিওয়েগুলো বাড়ানো হয়নি। এটি করা হলে উড্ডয়ন ও অবতরণের সময় কম লাগত এবং কিছু সুবিধা বাড়ত। রানওয়ে টারম্যাকের উপরিভাগও সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে। এ ছাড়া জরুরি পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের প্রয়োজনীয় কর্মীবহর ও সুযোগ-সুবিধার অভাব রয়েছে।
×