ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ধর্ষণকে হাতিয়ার করেছে সিরীয়ার সরকারী বাহিনী ॥ জাতিসংঘ

প্রকাশিত: ০০:৪৪, ১৭ মার্চ ২০১৮

ধর্ষণকে হাতিয়ার করেছে সিরীয়ার সরকারী বাহিনী ॥ জাতিসংঘ

অনলাইন ডেস্ক ॥ জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের সর্বশেষ প্রতিবেদনে বিদ্রোহীদের দমনে সিরিয়ার সেনাবাহিনীর ধর্ষণ ও যৌননিপীড়নকে পরিকল্পিতভাবে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে ‘নারীরা দাবার ঘুঁটি হিসেবে ব্যবহার হচ্ছেন’ বলে ওই প্রতিবেদন শেষ করা হয় বলে জানায় দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট। যৌননিপীড়নের শিকার সাড়ে চারশর বেশি মানুষের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে জাতিসংঘের এই প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়। যেখানে যৌননিপীড়নের লোমহর্ষ চিত্র উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, নারী ও শিশুদের পাশাপাশি পুরুষরাও ধর্ষণ ও যৌননিপীড়নের শিকার হয়েছেন। বয়োজ্যেষ্ঠ নারীরাও রেহাই পাননি। বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এলাকায় বাড়ি ঘরে তল্লাশি চালানোর সময়, বিভিন্ন চেকপয়েন্টে এবং ডিটেনশন সেন্টারগুলোতে বাশার আল-আসাদ বাহিনী খুবই ভয়ঙ্কর ও পরিকল্পিত ভাবে যৌননিপীড়ন করে বলে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়। এক নারী বলেন, “আমার বাড়িতে সেনারা তল্লাশি করতে আসে… তাদের একজন আমাকে আমার কক্ষে যেতে বলে এবং আমার পেছন পেছন সেখানে যায়। সে আমাকে নিপীড়ন শুরু করে এবং বলে সে এমন কিছু করবে যা আমি কোনোদিন পরিষ্কার করতে পারব না। আমি চিৎকার করছিলাম, কিন্তু কেউ এগিয়ে আসেনি।” সেনারা নারী ও শিশুদের ধর্ষণ করত এবং নগ্ন অবস্থায় ট্যাঙ্কের সামনে দিয়ে রাস্তায় হাঁটতে বাধ্য করত। এক নারী জানান, তাকে তার ভাইয়ের সামনে ধর্ষণ করা হয়। অন্য একজন বলেন, তাকে তার স্বামী ও তিন সন্তানের সামনেই ধর্ষণ করে সেনারা। যেসব নারী ধর্ষণে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে তাদের হত্যা করা হয়। অনেক নারীকে ডিটেনশন সেন্টারগুলোতে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়, যাতে তাদের পুরুষ স্বজনরা আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। চেকপয়েন্ট বিশেষ করে বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোর কাছের সরকারি চেকপয়েন্টগুলোতে সব সময়ই নারীদের নিপীড়নের শিকার হতে হয়। এমনকি কখন কখন নারীদের দল থেকে আলাদা করে ধর্ষণ করা হয়। ডিটেনশন সেন্টারগুলোতে নারী আইনজীবী, সাংবাদিক এবং সরকার বিরোধী বিক্ষোভকারীদের ধরে এনে নির্যাতন করা হয়। ধর্ষণের পাশাপাশি সেখানে ইলেক্ট্রিক শক দেওয়া হত বলে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়। নারীদের পাশাপাশি নয় বছরের কম বয়সের শিশুরাও যৌননিপীড়নের শিকার হয়েছে। অন্তঃসত্ত্বা নারীদেরও ধর্ষণ করা হয়। ধর্ষণের কারণে গর্ভপাতের ঘটনাও ঘটেছে। যেসব নারীরা সাক্ষাৎকার দিয়েছেন তাদের সবার শরীরেই নির্যাতনের চিহ্ন আছে। ডিটেনশন সেন্টারে থাকার সময় ধর্ষণের শিকার হওয়া এড়াতে শরীরে রক্ত ও মলমূত্র মেখে রাখার কথাও জানান এক নারী। সেখানে পুরুষ বন্দিদেরও যৌননির্যাতন করা হত। জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়, বিদ্রোহীরা নারীদের যৌননিপীড়ন করেছে। তবে সরকারি বাহিনীর তুলনায় তার মাত্রা অনেক কম। যৌননিপীড়নের শিকার ব্যক্তিরা এখন ‘আত্মগ্লানি’ এবং ‘বিষন্নতায়’ ভুগছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, “অনেক নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর আত্মহত্যা করেছেন।” ২৬ ফেব্রুয়ারি থেকে জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের ৩৭তম অধিবেশন শুরু হয়েছে, চলবে ২৩ মার্চ পর্যন্ত। ওই অধিবেশনে এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।
×