ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নেপালে আহত রাশেদ রুবায়েত ঢাকা মেডিকেলে

প্রকাশিত: ০২:২৭, ১৭ মার্চ ২০১৮

নেপালে আহত রাশেদ রুবায়েত ঢাকা মেডিকেলে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নেপালে ইউএস-বাংলার উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় আহত রাশেদ রুবায়েত এখন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। শনিবার বিকেল ৪টার দিকে বিমানবন্দর থেকে এ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে বার্ন ইউনিটের ছয়তলার ভিআইপি কেবিনের ডিআরএস কক্ষে ভর্তি করা হয়েছে। এদিকে ঘটনায় আহতদের চিকিৎসার জন্য ১৩ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। এদিন দুপুরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রশাসনিক ভবনের সেমিনার কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ এসব তথ্য জানিয়েছেন। ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের সমন্বয়ক ডাঃ সামন্ত লাল সেন জানান, নেপালে বিমান বিধ্বস্তে আহত রুবায়েতকে বিমানবন্দর থেকে একটি এ্যাম্বুলেন্সে করে শনিবার বিকেল ৪টার দিকে ঢামেক হাসপাতালে পৌঁছে। পরে বার্ন ইউনিটের ছয়তলার ভিআইপি কেবিনের ডিআরএস কক্ষে রাখা হয়েছে তাকে। তিনি জানান, তার বার্ন তেমন হয়নি। তবে ডান পায়ে ও শরীরের অন্যান্য স্থানে ইনজুর হয়েছে। তাই বিশেষজ্ঞ প্লাস্টিক ও অর্থোপেডিক সার্জন দিয়ে তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক এএইচএন এনায়েত হোসেন জানান, নেপালের ত্রিভুবন বিমানবন্দরে ইউএস-বাংলার বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় আহত দু’জনের অবস্থা গুরুতর। তাদের একজন ইমরানা কবীরকে আজ (শনিবার) নেপাল থেকে চিকিৎসার জন্য সরাসরি সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়া হবে। আর কবীর হোসেনকে আগামীকাল (রবিবার) ঢাকায় আনা হবে। এছাড়াও আহত শাহীন বেপারিকে আগামীকাল (রবিবার) ঢাকায় আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ইয়াকুব নামে আহত আরেকজনকে নেপালে রেখেই চিকিৎসা দেয়া হবে। তিনি জানান, নেপালি ও বাংলাদেশি মিলিয়ে মোট ৪৯ জনের পোস্টমর্টেম হয়েছে নেপালে। বৃহস্পতিবার পোস্টমর্টেম হয়েছে ৩৫ জনের। শুক্রবার হয়েছে ২৪ জনের। সেখানে এখনও আহত অবস্থায় থাকা পাঁচ জনের মধ্যে দু’জনের অবস্থা গুরুতর। এরা হচ্ছেন, ইয়াকুব আর ইমরানা। তাদের একজন ইমরানা কবিরকে আজ (শনিবার) এয়ার এ্যাম্বুলেন্সে নয়া দিল্লিতে উন্নত চিকিৎসার জন্য নেয়া হবে। অপরজন ইয়াকুবকে স্বজনদের অনুরোধে নেপালেই চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তিনি জানান, রাশেদ রুবাইতকে আজ (শনিবার) বাংলাদেশে আনা হচ্ছে। অপর দুইজন কবির হোসেন ও শাহিন হাওলাদারকে আগামীকাল (রবিবার) দেশে আনা হবে। ইমরানা কবিরের শ্বাসনালী পুড়েছে বলে জানিয়েছেন নেপালের চিকিৎসকরা। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ জানান, বাংলাদেশ থেকে নেপালে যাওয়া ফরেনসিক টিম দেশের পাসপোর্ট অফিসে থেকে বাংলাদেশি বিমানযাত্রীদের শনাক্তকরণ চিহ্ন ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট সঙ্গে নিয়ে গেছেন। নিহতদের মধ্যে কারও কাপড়, ঘড়ি, গহনা দেখে শনাক্ত করার চেষ্টা করা হবে। যাদের সহজে চিহ্নিত করা যাবে না। তাদের ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্তকরণ করা হবে। তিনি আরও বলেন, যে সাত জন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ টিম সেখানে গেছেন, তাদের প্রধান ড. সোহেল মাহমুদ সেখানে থাকবেন। বাকিরা দেশে ফিরবেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সম্পূর্ণ সরকারি খরচে আহতদের চিকিৎসা চলছে বলেও জানান তিনি। দেশে ফেরা নেপালে বিমান বিধ্বস্তে আহত শেহরিন আহমেদ, মেহেদী হাসান, কামরুন্নাহার স্বর্ণা ও আলমুন নাহার এ্যানি এখনও ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন। এক প্রশ্নের জবাবে আহতের চারজনের বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের ডিজি প্রফেসর আবুল কালাম আজাদ জানান, বার্ন ইউনিটে ভর্তি চারজনেরই বড় ধরনের কোনো শঙ্কা নেই। তবে মানসিক ট্রমা আছে। সকালে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা দেখে গেছেন। তিনি জানান, তাদের চিকিৎসায় ১৩ সদস্যের বিশেষজ্ঞের একটি টিম গঠন করা হয়েছে। আজই (শনিবার) এখানে মেডিকেল বোর্ডটি গঠন করা হয়। যার প্রধান বার্ন ইউনিটের সমন্বয়ক ডাঃ সামন্ত লাল সেন। সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে এ টিম গঠন করা হয়েছে। বোর্ডের বাকি ১২ সদস্য হচ্ছেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের পরিচালক মোঃ আবুল কালাম আজাদ, বিভাগীয় প্রধঅন সাজ্জাদ হোসেন খন্দকার, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব মেন্টাল হেলথের পরিচালক মোঃ ফারুক আলম, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের রায়হানা আউয়াল, রেসপিরেটোরি মেডিসিন বিভাগের মহিউদ্দিন আহমেদ, সার্জারি বিভাগের প্রধান এজেডএম মোস্তাক হোসেন তুহিন, অর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগের প্রধান মোঃ শামসুজ্জামান, এ্যানেসথেসিওলজি বিভাগের মোজাফফর হোসেন, বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের এ্যানেসথেসিওলজি বিভাগের মোঃ জাহাঙ্গীর কবির, মানসিক ও স্বাস্থ্য বিভাগের আবদুল্লাহ আল মামুন, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব মেন্টাল হেলথের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের জহির উদ্দিন ও সাইকিয়াট্রিক জামাল হোসেন। এসময় ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সমন্বয়ক ডঃ সামন্ত লাল সেন জানান, আগামী দুই সপ্তাহ এই রোগীদের যেন নেপাল ট্রাজেডি সম্পর্কে কোনও প্রশ্ন করা না হয়। এজন্য গণমাধ্যমের কাছে অনুরোধ জানান তিনি। নেপাল থেকে এখন পর্যন্ত যে চার জন রোগীকে দেশে এনে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে তাদের মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব মেন্টাল হেলথ-এর পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ মোঃ ফারুক আলম এবং ঢামেক হাসপাতালের মানসিক স্বাস্থ্য বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন। তারা জানান, তাদের (আহতদের) ট্রমা তেমন গুরুতর নয়। তবে এই রোগীদের মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত চিকিৎসা দেয়া লাগবে। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম নাসিরউদ্দিন।
×