ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

যত দ্রুত সম্ভব...

প্রকাশিত: ০৩:৩৩, ১৮ মার্চ ২০১৮

যত দ্রুত সম্ভব...

নেপালে বাংলাদেশের বেসরকারী কোম্পানির বিধ্বস্ত উড়োজাহাজের ব্ল্যাকবক্স পাওয়ার পর দেশের মানুষ সান্ত¡না পেয়েছেন এই ভেবে যে, এবার দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ জানা যাবে। ইতোমধ্যে স্বজন হারানোদের কান্নায় বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে। তাই, যত শীঘ্রই সম্ভব মানুষ জানতে চায় কেন এমনটা হলো। যতক্ষণ পর্যন্ত না দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ জানা যাচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত নানা অনুমানের ডালপালা বিস্তৃত হতে থাকবে। আমরা জেনেছি এরই মধ্যে নেপাল বলেছে, উড়োজাহাজটির অবতরণ ভুল ছিল। অর্থাৎ তারা নিজেদের দায় অস্বীকার করতে চাইছে। উড়োজাহাজের ব্ল্যাকবক্স অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, এ থেকেই কোন দুর্ঘটনাকবলিত উড়োজাহাজের সর্বশেষ অবস্থা ও পরিস্থিতি সম্পর্কে জানা যায়। গাঢ় কমলা রঙের এ বাক্সটি উড়োজাহাজের একেবারেই শেষের দিকে লেজের অংশে থাকে। নামের সঙ্গে বক্স থাকলেও এটি দেখতে বক্সের মতোও নয়। যে কোন উড়োজাহাজের দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে এই ব্ল্যাকবক্সই শেষ ভরসা। নেপালে ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের বিধ্বস্ত উড়োজাহাজের ব্ল্যাকবক্সই এখন আমাদের শেষ আশা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই ব্ল্যাকবক্সের তথ্য বিশ্লেষণ করলেই বের হয়ে আসবে দুর্ঘটনার প্রকৃত তথ্য। আমরা জানি, অবতরণের সময় উড়োজাহাজটিতে আগুন ধরে যায়। পরে বিমানবন্দরের পাশের একটি ফুটবল মাঠে বিধ্বস্ত হয় এটি। এতে ফ্লাইটে থাকা ৬৭ যাত্রীসহ ৭১ আরোহীর মধ্যে ৫১ জনই নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে বাংলাদেশের নাগরিক ২৬ জন। স্মরণকালের অন্যতম মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনার তদন্তের কেন্দ্রবিন্দুতে এখন রয়েছে উড়োজাহাজটির ব্ল্যাকবক্স। ব্ল্যাকবক্সের তথ্য উদ্ধার করতে এক সপ্তাহ থেকে ১০ দিনের বেশি সময় লাগার কথা নয়। সিঙ্গাপুরে ব্ল্যাকবক্সের তথ্য উদ্ধারের ব্যবস্থা রয়েছে। সিঙ্গাপুর যেহেতু আমাদের থেকে কাছে, তাই সেখান থেকে তথ্য উদ্ধার করা সম্ভব ছিল। অথচ, সেটি পাঠানো হয়েছে কানাডায়। ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশনের (আইকাও) নিয়ম অনুযায়ী, যে কোন দুর্ঘটনার এক বছরের মধ্যে তদন্তের কাজ শেষ করতে হয়। একইসঙ্গে উড়োজাহাজে যেসব দেশের মানুষ থাকে, সেসব দেশের সিভিল এভিয়েশন অথরিটির অনাপত্তি পেলে চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। কোন দেশ আপত্তি জানালে পুনরায় তদন্ত করা হয়। মূলত ব্ল্যাকবক্স থেকে উড়োজাহাজের যান্ত্রিক তথ্য ও পাইলটের কথোপকথন পর্যবেক্ষণ করে ঘটনার অনুসন্ধান করা হয়। একটি উড়োজাহাজ কত কিলোমিটার গতিবেগে উড্ডয়ন করছে, উড়োজাহাজটি কত উচ্চতায় উড্ডয়ন করছে, এর তাপমাত্রা কত, পাইলট কখন গতি কমাচ্ছেন-বাড়াচ্ছেন, জ্বালানি তেলের চাপ ও পরিমাণ, উড়োজাহাজের অন্যান্য যন্ত্রাংশের কার্যক্রমসহ যান্ত্রিক ত্রুটি সংক্রান্ত সবধরনের তথ্য ব্ল্যাকবক্সের এফডিআর অংশে সংরক্ষিত থাকে। মানুষের প্রত্যাশা ব্ল্যাকবক্সের তথ্য উদ্ধারে যেন দীর্ঘসূত্রতা না হয়। গোপনীয়তা রক্ষার স্বার্থে যেন প্রকৃত সত্য চাপা পড়ে না যায়। নেপালের ওই ঝুঁকিপূর্ণ বিমানবন্দরের কর্তৃপক্ষের যদি কোন গাফিলতি থেকে থাকে, তবে সেটা যেন ধামাচাপা পড়ে না যায়। আমরা চাই যথাশীঘ্র সম্ভব ব্ল্যাকবক্সের তথ্য বিশ্লেষণ করে প্রকৃত সত্য জানানোর ব্যবস্থা নেয়া হোক। সেটা জানার পরই বাংলাদেশ তার পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ধারণ করবে। দুর্ঘটনায় নিহত স্বজনদের বিরাট ক্ষতির কথা বিবেচনা করতে হবে সর্বাগ্রে। সেইসঙ্গে আকাশপথে ক্যারিয়ার লায়াবিলিটি এ্যাক্ট অনুযায়ী তাদের প্রাপ্য ক্ষতিপূরণ প্রদানেরও ব্যবস্থা নিতে হবে। এক্ষেত্রেও কোন ধরনের দীর্ঘসূত্রতা প্রত্যাশিত নয়। যত দ্রুত সম্ভব সব প্রশ্নের উত্তর পেতে হবে।
×