ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

উত্তর কোরিয়া নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেছে যেভাবে

প্রকাশিত: ০৩:৪০, ১৮ মার্চ ২০১৮

উত্তর কোরিয়া নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেছে যেভাবে

উত্তর কোরীয় সরকার ও এর পরমাণু অস্ত্র কর্মসূচী অচল করে দেয়ার উদ্দেশে আরোপিত আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা পিয়ংইয়ং কিভাবে কৌশলে এড়িয়ে যাচ্ছে তা জাতিসংঘ শুক্রবার এক রিপোর্টে সবিস্তারে প্রকাশ করেছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ব্যক্তিগতভাবে এ বসন্তে উত্তর কোরীয় নেতা কিম জং উনের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য গত সপ্তাহে এক আমন্ত্রণ গ্রহণের পর বলেছেন, যে কোন আলোচনার সময় নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে। খবর নিউইয়র্ক টাইমস অনলাইনের। কিন্তু জাতিসংঘের রিপোর্টে তুলে ধরা হয়েছে যে, উত্তর কোরিয়াকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং দেশটির সঙ্গে ব্যাপকভাবে অবৈধ বাণিজ্য কিভাবে চলছে তা নিয়ন্ত্রণ কঠিন হয়ে পড়েছে। রিপোর্ট লেখকরা বলেছেন, কতগুলো দেশ নিয়ম লংঘন করছে। দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে বুলগেরিয়া, চীন, জার্মানি, ভারত, মিয়ানমার, পোল্যান্ড, রাশিয়া, সিঙ্গাপুর ও তাঞ্জানিয়া। রিপোর্টে কিছু নিষেধাজ্ঞা লংঘনের বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে এভাবেÑ উদাহরণ হচ্ছে, গত বছর জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ভারত উত্তর কোরিয়ায় মূল্যবান ধাতু ও পাথরসহ প্রচুর হীরক রফতানি করেছে। এর আর্থিক মূল্য ৫ লাখ ১৪ হাজার ৮শ’ ২৩ ডলার। বিভিন্ন দেশ থেকে এসেছে অন্যান্য বিলাস দ্রব্য। জার্মানি থেকে মদ ও স্পিরিট, ইতালি থেকে মদ, বুলগেরিয়া থেকে সুগন্ধি ও প্রসাধন সামগ্রী আনা হয়েছে। সিঙ্গাপুর ভিত্তিক একটি কোম্পানি উত্তর কোরীয় রাজধানী পিয়ংইয়ংয়ে ডিপার্টমেন্ট স্টোরগুলোতে জাপান ও ইউরোপ থেকে আনা বিলাসী সামগ্রী মজুদ করেছে। অস্ট্রেলিয়ায় মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের এশিয়া ইনস্টিটিউটে কোরিয়ান স্টাডিজের সিনিয়র লেকচারার জ্যাসং বলেছেন, নিষিদ্ধ ঘোষিত পণ্য কিভাবে পাচার করতে হয় এ ব্যাপারে উত্তর কোরিয়া মাস্টার। এ ধরনের বাণিজ্যে, বৈধ বা অবৈধ হোক না কেন, গড়ে উঠছে উত্তর কোরীয় মধ্যস্বত্ব ভোগী শ্রেণী। অবশ্য তারাও ব্যাপক দুর্নীতিগ্রস্ত। ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও পরমাণু অস্ত্র কর্মসূচী চালিয়ে যাওয়া সহজ নয়। রিপোর্টে তুলে ধরা হয়েছে যে, এ নিভৃতচারী দেশটি জাতিসংঘভুক্ত দেশগুলোর পণ্য বিক্রি অব্যাহত রেখেছে যদিও যেসব পণ্যের ওপর রয়েছে নিষেধাজ্ঞা। রিপোর্টে বলা হয়, উত্তর কোরিয়া ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রায় সকল নিষিদ্ধ ঘোষিত পণ্য রফতানি করেছে যার মূল্য দাঁড়ায় প্রায় ২০ কোটি ডলার। দেশটির বৃহত্তম রফতানি পণ্য হচ্ছে কয়লা, লোহা ও ইস্পাত। রিপোর্টে বলা হয়, দেশটি ২০১৭ সালের ওই সময়ের মধ্যে ৪০ কোটি ৩৬ লাখ ডলারের কয়লা রফতানি করেছে। উত্তর কোরিয়া ৬ কোটি ২১ লাখ ডলারের লোহা ও ইস্পাত বিক্রি করেছে। নিষেধাজ্ঞা লংঘন করে এ রফতানি করা হয়েছে। উত্তর কোরীয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিরা সামনের সারির কোম্পানিগুলো ব্যবহার করে এবং বিদেশী নাগরিকদের সঙ্গে কাজ করে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে তাদের ব্যাংক হিসাব খোলে। তারা লেনদেনের জন্য বিভিন্ন দেশের সীমান্ত অতিক্রম করে অবাধে। এর আগে রিপোর্টে বলা হয়েছে, উত্তর কোরিয়া সিরীয় সরকারের কাছে জাহাজ যোগে এমন কিছু পণ্য সরবরাহ করেছে যা রাসায়নিক অস্ত্র তৈরিতে ব্যবহৃত হতে পারে। রিপোর্টে বলা হয়, দেশটি মিয়ানমারের কাছে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা, বহুমুখী রকেট লঞ্চার ও ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র বিক্রি করেছে। উত্তর কোরিয়া নজরদারি ও হ্যাকিংয়ে এক সুবিদিত অবস্থানে রয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, উত্তর কোরিয়া দক্ষিণ কোরিয়ায় সিওংজুয়ে এক সামরিক স্থাপনায় একটি ড্রোন পাঠিয়েছে এবং ৫শ’ ৫৫টি আলোকচিত্র নিয়েছে। ইঞ্জিনে ত্রুটি দেখা দেয়ায় ড্রোনটি বিধ্বস্ত হয়।
×