ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

দু’পক্ষের কর্মকর্তারা গলদঘর্ম

ট্রাম্প-উন শীর্ষ বৈঠকের প্রস্তুতি

প্রকাশিত: ০৩:৪০, ১৮ মার্চ ২০১৮

ট্রাম্প-উন শীর্ষ বৈঠকের প্রস্তুতি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও উত্তর কোরীয় নেতা কিম জং উনের মধ্যে প্রস্তাবিত পরমাণু শীর্ষ বৈঠক বাস্তবে রূপ দিতে দু’পক্ষের উর্ধতন কর্মকর্তারা জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। এ উদ্দেশে তারা শুক্রবার ঘন ঘন বৈঠক করেন এবং শীর্ষ পর্যায়ের আলোচনায় মিলিত হন। ট্রাম্প-উন শীর্ষ বৈঠক আয়োজন চূড়ান্ত করতে তাৎক্ষণিকভাবে বড় ধরনের সাফল্য না এলেও উত্তর কোরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুইডিশ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা চালাতে শনিবারও স্টকহোমে অবস্থান করেন। স্ক্যান্ডিনেভিসান এই দেশটি উত্তর কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত শীর্ষ বৈঠক আয়োজনে মধ্যস্থতা করছেনÑ যাতে একটি পরমাণু যুদ্ধের হুমকির অবসান ঘটে। ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে ট্রাম্প দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে উনের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন। সিউল গত সপ্তাহে কিম জং উনের পক্ষে হয়ে দৃশ্যত একটি শীর্ষ বৈঠকের আমন্ত্রণপত্র পাঠিয়েছেন ট্রাম্পের কাছে। ট্রাম্প সঙ্গে সঙ্গে তা লুফে নিয়েছেন এবং এর মধ্য দিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে শীর্ষ বৈঠকের লক্ষ্যে একটি বিশ্বাসযোগ্য আলোচ্যসূচী নির্ধারণে রীতিমতো প্রতিযোগিতা ত্বরান্বিত হয়েছে। খবর ওয়াশিংটন থেকে এএফপির। একই সঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্যাং কিউং হোয়া ও জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তারো ফোনো ওয়াশিংটনে রয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনার জন্য। কিন্তু মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরে বর্তমানে কর্মকর্তার ঘাটতি রয়েছে। তার ওপর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসনকে টুইটারের মাধ্যমে আকস্মিকভাবে বরখাস্ত করলে দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর উদ্যোগ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। ক্যাং কিউং হোয়া এই পর্যায়ে পিবিএস নিউজ আওয়ারকে বলেন, আমি মনে করি আমরা সতর্কভাবে আশাবাদী যে, দুই পক্ষের মধ্যে শীর্ষ বৈঠক হবে এবং এটা হবে উত্তর কোরিয়ার পরমাণু ইস্যুর একটি শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য বড় ধরনের সাফল্য। শীর্ষ বৈঠক অনুষ্ঠানের প্রস্তাব আকস্মিকভাবে যুক্তরাষ্ট্র গ্রহণ করায় কোরীয় পর্যবেক্ষকদের পক্ষ থেকে যথেষ্ট সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু মুনের সঙ্গে ট্রাম্পের টেলিফোনে কথা হওয়ার পর হোয়াইট হাউস সতর্ক আশাবাদ ব্যক্ত করে জানিয়েছে যে, ট্রাম্পের সামরিক ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি সেই সঙ্গে বিশ্বব্যাপী সত্যিকারের নিষেধাজ্ঞা সব মিলিয়ে কিম জং উনকে পরমাণু ইস্যুতে শীর্ষ বৈঠকের প্রস্তাব গ্রহণ করতে বাধ্য করেছে। হোয়াইট হাউস এ বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে জানিয়েছে যে, ট্রাম্প ও মুন এই মর্মে সম্মত হয়েছেন, কথা নয়- সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা গ্রহণই কোরীয় উপদ্বীপে স্থায়ীভাবে পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের সাফল্য অর্জনের চাবিকাঠি। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মে মাসের শেষ নাগাদ উত্তর কোরীয় নেতা কিম জং উনের সঙ্গে শীর্ষ বৈঠকে বসার ইচ্ছা পুনর্ব্যক্ত করেছেন। মার্কিন ও দক্ষিণ কোরীয় দুই নেতা সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে সতর্ক আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছেন উত্তর কোরিয়া সঠিক পথ বেছে নিলে উজ্জ্বলতর ভবিষ্যত অপেক্ষা করছে। শীর্ষ বৈঠকের তারিখ বা স্থান নির্ধারিত হওয়ার পূর্বে উত্তর কোরিয়াকে এটা প্রকাশ্যে নিশ্চিত করতে হবে যে, তারা আমন্ত্রণপত্র পাঠিয়েছে এবং পরমাণু অস্ত্র পরিত্যাগ করার বিষয়ে আলোচনায় অংশগ্রহণ করে তারা এর প্রতি সম্মান দেখাতে চায়। ধারণা করা হচ্ছে যে, পিয়ংইয়ং শুক্রবার সম্ভবত এ কাজটি করতে পারে। রি ইয়ং হো এদিন সুইডিশ প্রধানমন্ত্রী স্টেফান লফভেন এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী মারগট ওয়ালস্ট্রমের সঙ্গে বৈঠক করেন। কিন্তু পরবর্তীতে সুইডিশ কর্মকর্তারা জানান যে, এ সংক্রান্ত আলোচনা শনিবার পর্যন্ত চলবে। উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সুইডেনের দীর্ঘদিন ধরে কূটনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। পিয়ং ইয়ংয়ে দেশটির কূটনৈতিক মিশন আন্তর্জাতিকভাবে মিটিংয়ে উত্তর কোরিয়ায় প্রথম কোন পশ্চিমা দেশের প্রতিনিধিত্ব করছে। ১৯৭৫ সালে স্থাপিত এই মিশনে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার কূটনৈতিক স্বার্থ দেখাশোনা করছে। রি ও ওয়ালস্ট্রম বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ভোজসভায় অংশগ্রহণ করেন। পরে তারা শুক্রবার মার্কিন দূতাবাসের কাছে বিলাসবহুল ভবন ‘ভিলা বনিয়ার’ এ বৈঠকে মিলিত হন। শুক্রবারের বৈঠকের পর এ সম্পর্কে ওয়ালস্ট্রম সাংবাদিকদের জানান, এটা ছিল ভাল, গঠনমূলক, দেখা যাক, পরবর্তীতে কী হয়। ওয়ালস্ট্রম কোরীয় উপদ্বীপের পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে বলেন, আমরা যদি আমাদের যোগাযোগ কাজে লাগাতে পারি তাহলে এরকম অগ্রগতি আসবে। এটা হবে আমাদের সকলের স্বার্থে। রি’র প্রতিনিধি দলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উত্তর আমেরিকা বিষয়ক বিভাগের উপমহাপরিচালক চোয়ে ক্যাং ইলও রয়েছেন। কয়েকটি সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছে যে, রি স্টকহোমের উত্তর কোরীয় দূতাবাসে ১৯৮৫ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। তিনি রবিবার পর্যন্ত স্ক্যান্ডিনেভীয় দেশটিতে অবস্থান করবেন। যদিও সুইডিশ কর্মকর্তারা এ বিষয়টি নিশ্চিত করেননি। এদিকে মার্কিন প্রশাসনের এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থাে জানিয়েছে কোন মার্কিন সরকারী কর্মকর্তা সুইডেনে উত্তর কোরীয়দের সঙ্গে বৈঠক করছে না। আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম অনুমান করেছে যে, সুইডেন এই শীর্ষ এক বৈঠকের আলোচ্যসূচী নির্ধারণে সহায়তা করতে পারে কিংবা দেশটি হতে পারে দু’পক্ষের শীর্ষ বৈঠকের অন্যতম সম্ভাব্য স্থান। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অবশ্য এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। জাপানী সম্প্রচার সংস্থা টিবিএস জানিয়েছে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে ও মুন শুক্রবার টেলিফোনে উত্তর কোরিয়া বিষয়ে কথা বলেছেন। টিবিএস জানায়, আবে মুনকে বলেছেন, তিনি চান উত্তর কোরিয়া শুধু তাদের পরমাণু অস্ত্র কর্মসূচী ও ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা স্থগিতই করবে না আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার পরিদর্শকদেরও তাদের দেশ সফর করতে দেবে।
×