ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পিতার জন্মদিনে কৃতজ্ঞ জাতির বিনম্র শ্রদ্ধা

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ১৮ মার্চ ২০১৮

পিতার জন্মদিনে কৃতজ্ঞ জাতির বিনম্র শ্রদ্ধা

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ কৃতজ্ঞ বাঙালী জাতি শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় স্মরণ করল বাংলাদেশ নামক ভূখ-ের স্বাপ্নিক স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুুজিবুর রহমানকে। দেশবিরোধী সব ষড়যন্ত্র রুখে দিয়ে সন্ত্রাস-নাশকতা-জঙ্গীবাদ ও ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণের দৃপ্ত শপথে শনিবার বাঙালী জাতি শ্রদ্ধা জানিয়েছে বঙ্গবন্ধুকে। পিতার জন্মদিনে কৃতজ্ঞ জাতি আগামী নির্বাচনে সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে আবারও পরাজিত করে দেশের চলমান উন্নয়ন-অগ্রগতির ধারা অব্যাহত এবং অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণের শপথও নিয়েছেন। গোটা জাতি দিনভর অবনত মস্তক আর হৃদয় নিংড়ানো শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় স্মরণ করেছে হাজার বছরের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী; বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। জাতির পিতার প্রতিকৃতি ও মাজারে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদন, শিশু সমাবেশ, আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, গ্রন্থমেলা, কেক কাটা, স্বেচ্ছায় রক্তদান, বিনামূল্যে চিকিৎসা, প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনসহ সরকারী-বেসরকারী নানা কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে পালিত হয় বঙ্গবন্ধুর ৯৮তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস। বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উপলক্ষে শনিবার ভোর থেকে রাত অবধি ঐতিহাসিক ধানম-ির ৩২ নম্বর বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত বাসভবন এবং টুঙ্গিপাড়ায় মাজারে নেমেছিল শ্রদ্ধা জানাতে আসা সর্বস্তরের মানুষের ঢল। সারাদেশেই ব্যাপক ও আনন্দমুখর কর্মসূচীতে সর্বস্তরের মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিল উল্লেখ করার মতো। সর্বত্র নানা আয়োজনে মানুষের ঢল নেমেছিল। দিবসটি উপলক্ষে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণের পাশাপাশি রাজধানীসহ সারাদেশে বঙ্গবন্ধুর জীবন ও আদর্শের ওপর আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বই মেলা, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, বঙ্গবন্ধুর ওপর তৈরি প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান এবং মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। এছাড়া জাতির পিতার জন্মদিনেই বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জনের জাতিসংঘের স্বীকৃতিপত্র পাওয়ায় সারাদেশে আনন্দ ও উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে পড়েছিল। অনন্যসাধারণ এই স্বীকৃতি জাতির পিতার জন্মদিনের কর্মসূচী পালনে ভিন্ন মাত্রা এনে দেয়। প্রতিটি অনুষ্ঠানেই বাংলাদেশের অগ্রগতির এই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রাপ্তিতে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত স্বপ্ন ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা বিনির্মাণের দৃপ্ত শপথও উচ্চারিত হয়েছে সবার কণ্ঠে। শনিবার ভোর সাড়ে ছয়টায় বঙ্গবন্ধু ভবন ও দেশব্যাপী আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন পালনের কর্মসূচী শুরু হয়। সরকারের পক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকাল সাতটায় ধানম-ির ৩২ নম্বরে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে রক্ষিত বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে তাঁর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। এসময় তিনি কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। এ সময় সামরিক বাহিনীর একটি সুসজ্জিত দল বঙ্গবন্ধুকে গার্ড অব অনার প্রদান করেন। পরে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা দলীয় নেতৃবৃন্দকে সঙ্গে নিয়ে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে যান। সেখানে তিনি কিছু সময় অতিবাহিত করেন। সকাল দশটায় দেশ ও জাতির পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করেন। পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে কিছুক্ষণ নীরবতা পালন করে তাঁরা বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানান। তিন বাহিনীর একটি সুসজ্জিত চৌকস দল এ সময় গার্ড অব অনার প্রদান করেন। এ সময় বিউগলে করুণ সুর বেজে ওঠে। পরে রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও ১৫ আগস্টের শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে ফাতেহা পাঠ শেষে মোনাজাতে অংশগ্রহণ করেন। এ সময় মন্ত্রিসভার সদস্য, বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্য, আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ, তিন বাহিনীর প্রধান, পুলিশ প্রধান ছাড়াও সামরিক-বেসমারিক উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। পরে রাষ্ট্রপতি মাজার প্রাঙ্গণে রাখা পরিদর্শন বইয়ে স্বাক্ষর করেন। এরপর সেখানে শিশু সমাবেশ, আলোচনা সভা, গ্রন্থমেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতির পিতার জš§দিন পালনে আনন্দ-উচ্ছ্বাসের পাশাপাশি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং সাম্প্রদায়িকতা ও কূপম-ূকতার বিরুদ্ধে লড়াই করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের অসাম্প্রদায়িক-গণতান্ত্রিক সোনার বাংলা গড়ে তোলার দুর্জয় প্রেরণা ও ইস্পাতকঠিন প্রত্যয় ছিল শ্রদ্ধা জানাতে আসা সারাদেশের কৃতজ্ঞ বাঙালী কণ্ঠে। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সব ষড়যন্ত্র রুখে দিতে রাজপথে অতন্দ্র প্রহরীর মতো থাকার অঙ্গীকারও ব্যক্ত করেন তারা। দেশজুড়ে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন ছাড়াও বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনের কেক কাটা, র‌্যালি, দোয়া ও মিলাদ মাহফিল, মোনাজাত, প্রার্থনা, আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা, বই মেলা, স্বেচ্ছায় রক্তদান, বিনামূল্যে চিকিৎসা, পুরস্কার বিতরণ, প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন, বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ প্রচার করা হয়েছে। ৩২ নম্বরে মানুষের ঢল ॥ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৮তম জš§বার্ষিকী উপলক্ষে শনিবার ভোরে তাঁর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে ধানম-ি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবনে জনতার ঢল নামে। সকাল সাড়ে ছয়টার আগেই বঙ্গবন্ধু ভবনের আশপাশের এলাকা কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে ওঠে। বঙ্গবন্ধুর জš§দিন উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের মাধ্যমে তাঁর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাতে সকাল সাড়ে ছয়টা থেকে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠন এবং সর্বস্তরের মানুষ ধানম-ি ৩২ নম্বর সড়কের পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তে জমায়েত হতে থাকে। উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি জাতির বড় পাওয়াÑকাদের ॥ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে জাতিসংঘের বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি জাতির জন্য সবচেয়ে বড় পাওয়া। বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে আমাদের জন্য আনন্দের দু’টি বার্তা রয়েছে। বার্তা দু’টি হলো জাতিসংঘ বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। শনিবার সকালে ধানম-িস্থ বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে রক্ষিত জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষ সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ ক্রিকেট দল শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে অসাধারণ জয় পেয়েছে। বাঙালী যে লড়াকু জাতি তা আবারও তারা প্রমাণ করেছে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা শুরু করেছে।
×