ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সব ধরনের ঝুঁকি মোকাবেলায় প্রস্তুতি শুরু

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ১৮ মার্চ ২০১৮

সব ধরনের ঝুঁকি মোকাবেলায় প্রস্তুতি শুরু

এম শাহজাহান ॥ স্বল্পোন্নত থেকে মধ্যম আয়ের দেশের কাতারে উঠায় বাংলাদেশ কোন সুবিধা হারাচ্ছে না। যেসব অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ সামনে রয়েছে তা কাটিয়ে উঠতে ছয় বছর সময় পাচ্ছে বাংলাদেশ। ওই সময়ের মধ্যে সব ধরনের ঝুঁকি মোকাবেলায় সরকার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতসহ সরকারের উর্ধতন কর্মকর্তারা বলছেন, আগে-ভাগে প্রস্তুতি শুরু হওয়ায় সব ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সক্ষম হবে বাংলাদেশ। মধ্যম আয়ের স্বীকৃতি আসায় এখন রফতানি বাজার ধরে রাখা, রেমিটেন্স আহরণ, দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ বাড়ানো, অবকাঠামো উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন ও কর্মসংস্থানে সবচেয়ে বেশি জোর দেয়া হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। সূত্র মতে, মধ্যম আয়ের দেশের মর্যাদা লাভের ঝুঁকি কাটিয়ে উঠতে জাতীয় টাস্কফোর্স গঠন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। একটি ট্রানজিশনাল প্লান তৈরির পাশাপাশি আগামী ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে এ সংক্রান্ত একটি গাইড লাইন দেয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এই পরিকল্পনার আওতায় রফতানি পণ্য বহুমুখীকরণ ও নতুন বাজার অনুসন্ধান করা হবে। আগামী দুই বছরের মধ্যে অন্তত ১৫টি দেশের সঙ্গে ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট (এফটিএ) এবং অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধা (পিটিএ) করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এছাড়া বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের মাধ্যমে মানবসম্পদ উন্নয়নে নতুন নতুন কর্মসূচী নেয়া হবে। একই সঙ্গে উৎপাদিত পণ্যের গুণগতমান বৃদ্ধিতে সর্বোচ্চ নজর দেয়া হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোঃ মুসলিম চৌধুরী জনকণ্ঠকে বলেন, এলডিসি বা স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে যাচ্ছি এটাই সম্মানের বিষয়। বাংলাদেশের এখন যে উন্নয়নের গতি, এটা অব্যাহত থাকলে আগামী ২০২৪ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে কোন সমস্যা হবে না। কারণ ওই সময়ের মধ্যে দেশের সক্ষমতা আরও বাড়বে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, যথাযথ পরিকল্পনা প্রণয়ন ও তার কার্যকর বাস্তবায়ন হলে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা সম্ভব। বাংলাদেশ ২০১৫ সালের জুলাই মাসে নিম্ন আয়ের দেশ থেকে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়। ওই সময় মাথাপিছু আয়ের বিবেচনায় এ শ্রেণীকরণ করে বিশ্বব্যাংক। জাতিসংঘ দেশগুলোকে স্বল্পোন্নত (এলডিসি), উন্নয়নশীল এবং উন্নত- এ তিন পর্যায়ে বিবেচনা করে থাকে। জানা গেছে, গত এক দশক ধরে ধারাবাহিকভাবে প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি পাওয়ায় মধ্যম আয়ের দেশের স্বীকৃতি অর্জনের তিনটি শর্তপূরণ করতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধির পর একটি পর্যায়ে ‘মিডল ইনকাম ট্রাপ’ বা মধ্যম আয়ের দুষ্টচক্র তৈরি হয় জাতীয় অর্থনীতিতে। বাংলাদেশের সামনে এই ঝুঁকি রয়েছে। এই ঝুঁকি মোকাবেলায় এখন সর্বাত্মক প্রচেষ্টা গ্রহণ করা প্রয়োজন। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাবেক অর্থসচিব মাহবুব আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, গত দশ বছর ধরে দেশের প্রবৃদ্ধি ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে করে মাথাপিছু আয় বাড়ার পাশাপাশি দেশের আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। কমেছে দারিদ্র্যের হার। এতে করেই মধ্যম আয়ের দেশের স্বীকৃতি পাওয়া গেল। এই পর্যায়ে দেশ মধ্যম আয়ের দুষ্টচক্রের কবলে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। অর্থনীতিতে স্বাভাবিক নিয়মেই এ সমস্যা তৈরি হয়। ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি এবং মধ্যম আয়ের তিনটি শর্ত পূরণ হওয়ার পর প্রত্যেক দেশই কম বেশি এ সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে। বাংলাদেশেও এ সমস্যা সন্নিকটে। তিনি বলেন, শুধু এ কারণে ট্রানজিশনাল প্লান তৈরি করা জরুরী হয়ে পড়ছে। জানা গেছে, মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার পাশাপাশি অর্থনীতি ও বাণিজ্যিক কর্মকা-ে ছোটখাটো কিছু চ্যালেঞ্জও যুক্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে শর্ত কিছুটা কঠিন হতে পারে। এছাড়া রফতানিতে শুল্ক ও কোটামুক্ত বাজার সুবিধার বিষয়টি নিয়ে নতুন কিছু সমস্যা তৈরি হতে পারে। তবে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে জিএসপি প্লাস সুবিধার আওতায় এলডিসি দেশের সুযোগ অব্যাহত রাখতে পারবে বাংলাদেশ। অন্যদিকে উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি পাওয়ার পর দেশ হিসেবে বিশ্বদরবারে বাংলাদেশের মর্যাদা ও অবস্থান আরও সুসংহত হবে। এর ফলে আন্তর্জাতিক ঋণবাজার থেকে ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে একটি তুলনামূলক সুবিধাজনক অবস্থা তৈরি হবে। ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে এখন কম ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসেবে গণ্য করা হবে। এতে বিদেশী বিনিয়োগ বাড়বে এবং সেই সঙ্গে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাণিজ্য সচিব শুভাশিষ বসু জনকণ্ঠকে বলেন, জাতিসংঘ কর্তৃক মধ্যম আয়ের দেশের স্বীকৃতি আসলেও এখনই বাংলাদেশ কোন সুবিধা হারাচ্ছে না। আর যেসব ঝুঁকি রয়েছে তা মোকাবেলায় ইতোমধ্যে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে সরকার। তিনি বলেন, ঝুঁকি মোকাবেলায় আমাদের সামনে এখন যে সময় রয়েছে তা যথেষ্ট। নতুন নতুন দেশের সঙ্গে এফটিএ, পিটিএ করার পাশাপাশি মানব সম্পদ উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থানে সবচেয়ে বেশি জোর দেয়া হচ্ছে। প্রচলিত মার্কেটের পাশাপাশি রফতানি হবে নতুন বাজারে। এ ব্যাপারেও সরকারী-বেসরকারী খাতে কর্মকা- শুরু করা হয়েছে।
×