ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ-ভারত শিরোপা লড়াই আজ

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ১৮ মার্চ ২০১৮

বাংলাদেশ-ভারত শিরোপা লড়াই আজ

মিথুন আশরাফ ॥ একদিকে চলছে, ‘মওকা, মওকা’। আরেকদিকে চলছে, ‘নাগিন নাচ’। ভারত সমর্থকরা ‘মওকা, মওকা’ বলছেন। আর যে সমর্থক এমন বলছেন, তাদের বাংলাদেশ সমর্থকরা দেখাচ্ছেন, নাগিনের ছোবল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে চলছে তুমুল আলোচনা। সেই আলোচনা চলছে মাঠের বাইরে। মাঠে আজ বাংলাদেশ-ভারত নিদাহাস ট্রফির ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত হবে। কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় ম্যাচটি শুরু হবে। ম্যাচটিতে যে দল জিতবে তাদেরই শিরোপা জয় হয়ে যাবে। বাংলাদেশ না ভারত, শিরোপা কার? ‘মওকা, মওকা’র জয় হবে; না ‘নাগিন নাচে’ উৎসব মিলবে? সেই প্রশ্নই এখন সবার মুখে মুখে। টি২০তেই শুধু নয়, বড় ম্যাচের দল ভারত। তা সবাই জানে। কিন্তু বাংলাদেশও এরই মধ্যে দেখিয়ে দিয়েছে বড় ম্যাচ কিংবা চাপ তারা নিতে পারে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সর্বশেষ ম্যাচটিতে বাংলাদেশ যেভাবে জিতেছে তাতেই তা প্রমাণ হয়ে যায়। শ্বাসরুদ্ধকর একটি ম্যাচে জিতেছে বাংলাদেশ। চরম উত্তেজনাকর ম্যাচটি জিতিয়েছেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। ফ্লিক করে ছক্কা হাঁকিয়ে ১ বল বাকি থাকতে ২ উইকেটে জয় তুলে নিয়েছেন। শ্রীলঙ্কাকে নিদাহাস ট্রফিতে প্রথমবার হারিয়েই আত্মবিশ্বাস পেয়ে যায় বাংলাদেশ। এরপর প্রথম ম্যাচে হারা ভারতের বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। জিততে পারেনি। তবে আত্মবিশ্বাসের ছোঁয়া মিলেছিল। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সর্বশেষ ম্যাচে জিতে যখন ফাইনালে খেলা নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ, ক্রিকেটারদের মনোবল অনেক চাঙ্গা হয়ে গেছে। ম্যাচটিতে বাউন্সকে কেন্দ্র করে চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। একটা সময় অধিনায়ক সাকিব তো ব্যাটিংয়ে থাকা মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও রুবেল হোসেনকে মাঠ থেকে বের হয়ে যেতে বলেন। বের হলেই ওয়াকওভার হয়ে যেত। এমন করায় সাকিবকে শাস্তিও পেতে হয়েছে। ম্যাচ ফি’র ২৫ শতাংশ জরিমানা হয়েছে। তবে ফাইনাল না খেলার শাস্তির যে শঙ্কা সবার ভেতর ছিল তা থেকে মুক্ত হওয়া গেছে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এমন উত্তেজনা ক্রিকেটারদের আত্মবিশ্বাস আরও বাড়িয়ে তুলেছে যেন। এই আত্মবিশ্বাস নিয়ে এখন ভারতকে হারানো গেলেই হলো। বিশ্ব মিডিয়ায় বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা ম্যাচটি নিয়ে তুমুল আলোচনা চলেছে। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচের আগেও চলছে আলোচনা। ফাইনাল ম্যাচটি অন্য যে কোন সময়ের চেয়ে আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রথমবারের মতো বিদেশের মাটিতে যে ফাইনালে খেলছে বাংলাদেশ। তাও আবার ভারতের বিপক্ষে। যদি ভারতকে হারিয়ে দিয়ে শিরোপা জিতে যায় বাংলাদেশ। সেই কথাও মুখে মুখে আছে। ভারতের বিপক্ষে এখন পর্যন্ত অবশ্য কোন টি২০ ম্যাচ জিততে পারেনি বাংলাদেশ। এমনকি কোন টেস্ট খেলুড়ে দলের বিপক্ষে কোন টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলেও জিততে পারেনি। এবার বাংলাদেশের সামনে সেই সুযোগ ধরা দিয়েছে। শুধু কি তাই। ২০১৬ সালের এশিয়া কাপ টি২০’র ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে খেলেও যে জিততে পারেনি বাংলাদেশ, সেই ম্যাচের প্রতিশোধ নেয়ার সুযোগ ধরা দিয়েছে। ভারতের বিপক্ষে ২০১৬ সালের টি২০ বিশ্বকাপে ব্যাঙ্গালুরুতে বাংলাদেশ জিততে জিততে ১ রানে হেরেছে। সেই ম্যাচের স্মৃতি এখনও সবার চোখে ভাসে। সেই স্মৃতি দূর করার উপলক্ষও এবার বাংলাদেশ পেয়েছে। এ পর্যন্ত ভারতের বিপক্ষে ৭টি টি২০ খেলে একটিতেও জিততে পারেনি বাংলাদেশ। সেই হারের গোলকধাঁধা থেকে বের হওয়ার সুযোগও এবার ধরা দিয়েছে। এখন বাংলাদেশ দল সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারলেই হয়। টুর্নামেন্টে ভারত প্রথম ম্যাচ হারের পরই ঘুরে দাঁড়িয়েছে। টানা জিতেই চলেছে। প্রতিটি দলেরই খারাপ দিন যায়। তাছাড়া বিরাট কোহলি, মহেন্দ্র সিং ধোনি, ভুবনেশ্বর কুমারদের ছাড়া খেলছে ভারত। তাও দুর্দান্ত খেলছে। খারাপ দিনটি যদি ফাইনালে এসে পড়ে, তাহলে বাংলাদেশেরই জয় জয়কার হবে। ব্যাট হাতে বাংলাদেশ দলের ব্যাটসম্যানরা দুর্দান্ত করছেন। একদিন মুশফিকুর রহীম জিতিয়েছেন। আরেকদিন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। এবার তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান, সৌম্য সরকারদের জেতানোর পালা। আর বল হাতে মুস্তাফিজুর রহমান, রুবেল হোসেন ও সাকিব আল হাসানের কিছু করে দেখানোর পালা। তবে ভারতের ব্যাটিং লাইনআপকে যদি শুরুতেই গুঁড়িয়ে দেয়া যায়। তাহলে ভাল ফল আসতেও পারে। শ্রীলঙ্কার ব্যাটিং লাইনআপকে যেমন শুরুতে বিধ্বস্ত করে দেয়া গেছে। তাতে স্কোরবোর্ডে কম রান হয়েছে। বাংলাদেশও জিতেছে। ঠিক তেমনি রোহিত শর্মা, শিখর ধাওয়ান, সুরেশ রায়না, দীনেশ কার্তিক, মানীষ পা-েদের আটকে দিতে হবে। তাহলেই জয় সম্ভব। ভারতকে অল্পতে আটকে রাখা গেলে ওয়াশিংটন সুন্দর, শারদুল ঠাকুর, যুবেন্দ্র চাহালদের বোলিংগুলোকে ধীরে ধীরে দেখে খেলে জেতাও সম্ভব। আর জিতলেই তো প্রথমবারের মতো কোন টুর্নামেন্টের শিরোপা নিজেদের করে নিতে পারবে বাংলাদেশ। নিদাহাস ট্রফি খেলতে যাওয়ার আগে দেশে ক্রিকেটার, কোচের কণ্ঠে একটি কথাই বের হয়েছিল। তারা ফাইনালে খেলতে চায়। এখন তো শিরোপা জেতা থেকে এক কদম দূরে বাংলাদেশ। ভারতকে হারাতে পারলেই দ্বিপক্ষীয় সিরিজ বাদে কোন প্রতিযোগিতামূলক আসরে শিরোপা জেতার স্বপ্ন সফল হয়ে যাবে। ভারত এ পর্যন্ত সব ফরমেট মিলিয়ে ৬৭ বার ফাইনালে খেলেছে। ওয়ানডেতে ৬৪ বার। টি২০তে তিনবার। ওয়ানডেতে ১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপে প্রথমবার ফাইনালে খেলেই চ্যাম্পিয়ন হয়। এরপর আরও ৬৫ বার ফাইনালে খেলে সর্বমোট ২৫ বার চ্যাম্পিয়ন হয়। আর টি২০তে তিনবার ফাইনালে খেলে দুইবারই চ্যাম্পিয়ন হয়। অনেক অভিজ্ঞ দল। ফাইনালের চাপ ভারত খুব ভালভাবেই সামলাতে পারে। সেই তুলনায় বাংলাদেশ সবমিলিয়ে টেস্ট খেলুড়ে দলগুলোর বিপক্ষে চারবার ফাইনালে খেলে। তিনবার ওয়ানডেতে ও একবার টি২০তে। সব সময়ই হার হয় বাংলাদেশের। ২০১৬ সালে এশিয়া কাপ টি২০তে ফাইনালে খেলে আবার ভারতের কাছেই হারে বাংলাদেশ। এবার নিদাহাস ট্রফিতে ফাইনালে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ভারতই। একসঙ্গে অনেক জবাব দেয়ার ম্যাচ। বাংলাদেশ কী পারবে জবাব দিতে? ভারতকে হারিয়ে শিরোপা প্রথমবারের মতো ঘরে তুলতে পারবে? আজই তা বোঝা যাবে। ফাইনাল ম্যাচটি শেষ হতেই ভারত না বাংলাদেশ শিরোপা জিতল, তা নিশ্চিত হয়ে যাবে। সেই সঙ্গে ‘মওকা, মওকা’, না ‘নাগিন নাচে’ উৎসব হবে তাও দেখার মিলবে।
×