ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

পদ্মা পানি শোধনাগার প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীর গতি

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ১৮ মার্চ ২০১৮

পদ্মা পানি শোধনাগার প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীর গতি

আনোয়ার রোজেন ॥ রাজধানীবাসীর জন্য বিশুদ্ধ পানি সরবরাহে নেয়া ‘পদ্মা (যশলদিয়া) পানি শোধনাগার প্রকল্পের (১ম ধাপ)’ মেয়াদ ও ব্যয় বাড়ছে। মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলায় বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পটির অর্ধেক কাজ হয়েছে সাড়ে পাঁচ বছরে। অথচ বাস্তবায়নের সময় সাড়ে তিন বছর ঠিক করেই শুরু হয়েছিল প্রকল্পের কাজ। এবার দুই দফায় আরও তিন বছর বাড়ানো হচ্ছে প্রকল্পের মেয়াদ। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ব্যয়ও বাড়ছে প্রায় ২৯৫ কোটি টাকা। প্রকল্পে জিওবির টাকা বাড়লেও কমেছে প্রকল্পে চীনা সহায়তার পরিমাণ। পরিকল্পনা কমিশন থেকে পাঠানো প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, এ দফায় ব্যয় বাড়ানোর ক্ষেত্রে চারটি কারণ দেখিয়েছে বাস্তবায়নকারী সংস্থা ঢাকা ওয়াসা। এগুলো হচ্ছে- ডলার বিনিময় মূল্য বৃদ্ধির কারণে প্রকল্প ব্যয় বেড়ে যাওয়া, বর্ধিত হারে সিডি ভ্যাট প্রদানের লক্ষ্যে এ খাতে ব্যয় বৃদ্ধি, কিছু কম্পোনেন্টের মধ্যে ব্যয় সমন্বয় এবং প্রকল্পের মেয়াদ আরও এক বছর বৃদ্ধি পাওয়া। তবে পরিকল্পনা কমিশন থেকে দ্বিতীয় সংশোধনের কারণ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, মূলত সিডি ভ্যাট খাতে বেশি অর্থ এবং ডলারের বিনিময় মূল্যের কারণেই ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। আজ রবিবার প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় এসব কারণ বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। সূত্র জানায়, প্রকল্পের মূল ব্যয় ছিল ৩ হাজার ৫০৮ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। সেখান থেকে ১৩৩ কোটি ৬২ লাখ টাকা কমিয়ে প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে ব্যয় ধরা হয় ৩ হাজার ৩৭৫ কোটি ১৭ লাখ টাকা। এখন নতুন করে দ্বিতীয় সংশোধনীর মাধ্যমে ২৯৫ কোটি ৩২ লাখ টাকা বাড়িয়ে মোট ব্যয় ৩ হাজার ৬৭০ কোটি ৪৯ লাখ টাকা করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। অন্যদিকে প্রকল্পের বাস্তবায়নে ধীরগতি বিরাজ করছে। সাড়ে পাঁচ বছরে প্রকল্পের বাস্তব অগ্রগতি মাত্র ৫২ দশমিক ৭৯ শতাংশ। সূত্র জানায়, ২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৬ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্পটি হাতে নেয় ঢাকা ওয়াসা। কিন্তু পরবর্তী সময়ে নানা কারণ দেখিয়ে প্রথম সংশোধনী প্রস্তাবে দুই বছর মেয়াদ বাড়িয়ে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। বর্তমানে আরও এক বছর বাড়িয়ে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এটি বাস্তবায়নে ঋণ সহায়তা দিচ্ছে চায়না এক্সিম ব্যাংক। শুরুতে চায়না এক্সিম ব্যাংকের দুই হাজার ৪১৩ কোটি ৬৪ লাখ টাকা দেয়ার কথা থাকলেও সংশোধনী প্রস্তাবে তা কমিয়ে দুই হাজার ৩৭৬ কোটি ৯৩ লাখ ৮৬ হাজার টাকা করা হয়েছে। এছাড়া প্রকল্পে সরকারের নিজস্ব তহবিল এবং ঢাকা ওয়াসারও অর্থায়ন রয়েছে। প্রকল্পটির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে প্রতিদিন ৪৫ কোটি লিটার সুপেয় পানি ট্রিটমেন্ট ও সরবরাহের মাধ্যমে ঢাকা মহানগরীর পানি সমস্যার সমাধান করা। ঢাকা ওয়াসার তথ্যানুযায়ী, জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় রাজধানীতে খাবার পানির চাহিদা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। রাজধানীতে বর্তমানে দেড় কোটির বেশি মানুষের বসবাস। তাদের দৈনিক পানির চাহিদা ২২০ কোটি লিটার। ওয়াসা সরবরাহ করতে পারছে ২০০ কোটি লিটার। ফলে দৈনিক ঘাটতি ২০ কোটি লিটার। ২০৩৫ সালে এই চাহিদা দাঁড়াবে ৫২৬ কোটি ৮০ লাখ লিটার। পানি সরবরাহের ক্ষেত্রে ঢাকা ওয়াসা মূলত ভূগর্ভের পানির ওপর নির্ভরশীল। ভূ-গর্ভ থেকে পানি উত্তোলনের ফলে প্রতি বছর স্তর ২ থেকে ৩ মিটার নিচে নেমে যাচ্ছে, যা শুধু পরিবেশের জন্যই হুমকি নয় বরং ভবিষ্যতে খাবার পানি সরবরাহের জন্যও হুমকি স্বরূপ। বর্তমানে ঢাকা শহরে সরবরাহকৃত মাটির নিচের ও মাটির উপরের পানির অনুপাত ৭৮ ঃ ২২। ২০৩৫ সালে এই অনুপাত ৩০ ঃ ৭০ করার পরিকল্পনা নিয়েছে ওয়াসা। তবে বর্তমানে প্রকল্প বাস্তবায়ন বিলম্বিত হওয়ায় সুপেয় পানি সরবরাহের ক্ষেত্রেও বিলম্বের আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
×