ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

হৃদয়স্নাত ভালবাসায় উদযাপিত জাতির জনকের জন্মদিন

প্রকাশিত: ০৬:০০, ১৮ মার্চ ২০১৮

হৃদয়স্নাত ভালবাসায় উদযাপিত জাতির জনকের জন্মদিন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মুক্তির সংগ্রামে সাত কোটি বাঙালীকে ঐক্যের সুতায় গেথেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁরই স্বপ্ন-সংগ্রামের পথ ধরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশ। শনিবার ছিল স্বাধীনতার এই মহান স্থপতির জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস। সকাল থেকে রাত অবধি বহুমাত্রিক আয়োজনে স্মরণ করা হয়েছে জাতির জনককে। কোন আয়োজনে শিশুদের শোনানো হয়েছে বঙ্গবন্ধুর গল্প। শিশু শিল্পীদের ক্যানভাসে চিত্রিত হয়েছে বঙ্গবন্ধুর ছবি। বসন্ত বিকেলে তাঁকে নিবেদিত কবিতা পাঠ করেছেন কবিরা। কোথাওবা মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ছবি এঁকেছে শিশুরা। বক্তার আলোচনায় উঠে এসেছে নিপীড়িত মানুষের কণ্ঠস্বরের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের কথা। এভাবেই হৃদয়স্নাত শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় উদ্্যাপিত হয়েছে তাঁর জন্মদিন। ‘বঙ্গবন্ধুর গল্প শোনো’ ॥ জাতির জনকের ৯৮তম জন্মবার্ষিকী ও ৯৯তম জন্মদিনের সকালে শিশু-কিশোরদের অংশগ্রহণে ‘বঙ্গবন্ধুর গল্প শোনো’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলা একাডেমি। বিকেলে অনুষ্ঠিত হয় বঙ্গবন্ধু বিষয়ক একক বক্তৃতা। নজরুল মঞ্চে বঙ্গবন্ধুর গল্প শোনো শীর্ষক শিশু-কিশোর অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে গল্প শোনান তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী, অধ্যাপক মেরিনা জাহান ও শহীদকন্যা অভিনয়শিল্পী শমী কায়সার। সভাপতিত্ব করেন একাডেমির সচিব ও ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন। ৫ শতাধিক শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব সুভাষ সিংহ রায়। অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ দেয় ছোট্ট শিশু ফারহান সাদিক খান সামি। অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা কবি শামসুর রাহমানের ‘অমর নাম’ ও ছড়াকার আমীরুল ইসলামের ‘একটি ছেলে’ শীর্ষক কবিতা আবৃত্তি করেন হাবীবুল্লাহ সিরাজী। তারানা হালিম বলেন, ছোটবেলা থেকেই বঙ্গবন্ধুর ভেতরে ক্যারিশম্যাটিক লিডারশিপ ছিল। যার কারণে ছোটবেলা থেকেই তিনি জনগণের কাছে নায্য দাবি উত্থাপন করতে শিখেছিলেন। তিনি তার জীবনের ১৪ বছর কাটিয়েছেন কারাগারে। এর কারণে তার ছোট্ট ছেলে রাসেল কখনও তাকে কাছে পায়নি। এর কারণ আমরা; আমাদের জন্যই নিজের সব কিছু বিসর্জন করে দিয়েছেন তিনি। শমী কায়সার বলেন, বঙ্গবন্ধু ছোটবেলা থেকেই পরোপকারী ছিলেন। মানুষকে ভালবেসে তিনি বড় হয়েছেন। যেখানেই দুঃখ-কষ্টের কথা শুনেছেন, তিনি ছুটে গেছেন ও মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। মেরিনা জাহান বলেন, বঙ্গবন্ধু,স্বাধীনতা,মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশÑএই চারটি বিষয় অবিচ্ছিন্ন সত্তা। আমরা যে বাঙালী জাতি সেটাও স্বাধীনতা পাওয়ার মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। বঙ্গবন্ধুর রচনা পাঠ করলে জানা যাবে, তিনি বিশ্বের কত বড় আপসহীন নেতা ছিলেন। বিকেলে একই মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব : শোষিত-বঞ্চিত মানুষের নেতা’ শীর্ষক একক বক্তৃতানুষ্ঠান। এতে একক বক্তৃতা করেন কবি ড. মুহাম্মদ সামাদ। সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আখতারুজ্জামান। স্বাগত বক্তব্য দেন একাডেমির সচিব মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন। একক বক্তৃতায় কবি মুহাম্মদ সামাদ বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন আমাদের জাতীয় ও রাষ্ট্রীয় জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। তিনিই এই জাতির জন্য স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। শোষিত-বঞ্চিত মানুষের নেতা হিসেবে বঙ্গবন্ধু আমৃত্যু কাজ করেছেন। তাঁর মমত্ববোধ ও মানবিকতা সকলের আদর্শ হয়ে উঠলেই তাঁর প্রতি আমাদের যথার্থ শ্রদ্ধা নিবেদন হবে। সভাপতির বক্তব্যে মো আখতারুজ্জামান বলেন, গণমানুষের নেতা হিসেবে বঙ্গবন্ধুর রাজনীতিতে আবির্ভাব ঘটে। তাঁর জন্ম সম্ভ্রান্ত পরিবারে হলেও তাঁর মানসকাঠামো গড়ে উঠেছিল সমাজের শোষিত-বঞ্চিত মানুষের পক্ষে কাজ করার নিবেদন থেকে। মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণের ভেতর দিয়ে আমরা নিজেরাও সত্য ও ন্যায়ের পথে উজ্জীবিত হই। বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক উৎসব ॥ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক সাতই মার্চের ভাষণের ইউনেস্কো স্বীকৃতি উপলক্ষে শিল্পকলা একাডেমিতে ৭ মার্চ থেকে শুরু হয় বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক উৎসব। এ উৎসবের শেষদিন ছিল শনিবার। সমাপনী আয়োজনে ছিল আড়াই হাজার বর্গফুট ক্যানভাসে সহ¯্রাধিক শিশুর চিত্রাঙ্কন, বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি অঙ্কন, ক্লাউন শো, মুখোশ নাট্য ও অ্যাক্রোবেটিক প্রদর্শনীসহ শিশুদের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। ছিল ৭ মার্চের ভাষণ প্রতিযোগিতায় ঢাকা মহানগরীর উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের প্রথম স্থান অধিকারী খন্দকার ছুমাইরা আক্তারের ভাষণ, আলী আহমেদ স্কুল এ্যান্ড কলেজের তিন শ শিক্ষার্থীর পরিবেশনায় সমবেত সঙ্গীত ‘ধন ধান্য পুষ্পে ভরা’, মানিকনগর মডেল হাইস্কুলের আড়াই শ’ শিক্ষার্থীর পরিবেশনায় ‘এ মাটি নয় জঙ্গিবাদের’ শীর্ষগ সঙ্গীত এবং এস ও এস শিশু পল্লীর পরিবেশনায় সমবেত নৃত্য। একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন শিশুশিল্পী সেজুতী, সোমা ও নীতু। সব শেষে সন্ধ্যায় একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে শিশুদের জন্য চলচ্চিত্র প্রদর্শনী ‘আঁখি ও তার বন্ধুরা’। বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিত কবিতা পাঠ ॥ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উপলক্ষে বিকেলে জাতীয় জাদুঘরে আয়োজন করে বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিত কবিতা পাঠানুষ্ঠানের। কবিতা পাঠ করেন আজিজুর রহমান আজিজ, নূহ-উল-আলম লেলিন, জাহিদুল হক, শিহাব সরকার, ইকবাল আজিজ, অঞ্জনা সাহা, ফারুক মাহমুদ, গোলাম কিবরিয়া পিনু, আনিসুল হক, আমিনুর রহমান সুলতান, রাসেল আশেকী প্রমুখ। কচিকাঁচার মেলার স্মরণে বঙ্গবন্ধু ॥ জাতীয় শিশু দিবস ও বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উপলক্ষে কেন্দ্রীয় কচিকাঁচার মেলা বিকেলে আলোচনা সভা, পুরস্কার বিতরণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সেগুনবাগিচার মেলা কার্যালয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন মেলার সভাপতি খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ, মেলার সহসভাপতি কবি ও স্থপতি রবিউল হুসাইন, ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য ডি ডি ঘোষাল এবং শিশু বক্তা নুসাইবা তাহসিন। শিশু সভাপতি হিসেবে বক্তব্য রাখে মেলার কর্মী বোন মিমহা বিনতে মুনির। জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে বক্তৃতা প্রতিযোগিতা এবং ১৬৭, ১৬৮ ও ১৬৯ তম সাহিত্য বাসরের ত্রৈমাসিক মূল্যায়নে বিজয়ীদের পুরস্কার প্রদান করেন অতিথিরা। এছাড়া অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর কর্মময় জীবনের ওপর কেন্দ্রীয় কচিকাঁচার মেলার সুরবিতান, নৃত্যবিতান ও কথাবিতানের ভাইবোনেরা এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করে।
×