ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বেসরকারী মেডিক্যালে শিক্ষার মান বজায় রাখুন ॥ প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ১৯ মার্চ ২০১৮

বেসরকারী মেডিক্যালে শিক্ষার মান বজায় রাখুন ॥ প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজগুলোকে শিক্ষার গুণগত মান বজায় রেখে উপযুক্ত চিকিৎসক গড়ে তুলতে যথাযথ পাঠ্যক্রম অনুসরণের আহ্বান জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বেসরকারী খাতেও মেডিক্যাল কলেজ হচ্ছে। তবে সেক্ষেত্রে আমি বলব, তাদের একটু নজর দেয়া দরকার- শিক্ষার মানটা যথাযথ আছে কি না। কারিকুলামগুলো ঠিকমতো আছে কি না সেই দিকেও একটু বিশেষভাবে নজর দেয়া দরকার।’ খবর বাসসর। শেখ হাসিনা রবিবার সকালে রাজধানীর ফার্মগেটের বাংলাদেশ কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বাংলাদেশ সোসাইটি অব ক্রিটিক্যাল কেয়ার মেডিসিনের তৃতীয় এবং বাংলাদেশ ক্রিটিক্যাল কেয়ার নার্সিংয়ের প্রথম আন্তর্জাতিক বৈজ্ঞানিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন। চিকিৎসকদের উচ্চশিক্ষা এবং প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী চিকিৎসা ক্ষেত্রে সিঙ্গাপুরের দৃষ্টান্ত তুলে ধরে বলেন, আমাদের চিকিৎসকদের আরও উচ্চশিক্ষা ও প্রশিক্ষণের জন্য আমরা বিদেশে পাঠাতে চাই। তিনি বলেন, আমার এটাই প্রশ্ন যে, যদি অন্য দেশ পারে তবে আমরা পারব না কেন? কারণ আমাদের মেধা বা জ্ঞান কোনটিরই অভাব নেই। তবে সুযোগের অভাব ছিল। যেটি আমরা এখন করে দিচ্ছি। শিক্ষার মানের প্রতি নজর দেয়ার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের বই লেখার প্রতিও মনোনিবেশ করার আহ্বান জানান। মেডিক্যাল সায়েন্স এখন অনেক এগিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, আর এসব বই এত দামী সবার পক্ষে তো এসব বই কেনা সম্ভব নয়। কাজেই আমার মনে হয় আপনাদের বিভিন্ন অ্যাসোসিয়েশন আছে এবং মন্ত্রণালয় থেকেও এটার উদ্যোগ নেয়া উচিত এবং প্রত্যেকটি মেডিক্যাল কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য লাইব্রেরিটা একান্তভাবে প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রী এ সময় নতুন নতুন রোগের পাশাপাশি নতুন নতুন যে প্রযুক্তি আবিষ্কার হচ্ছে তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য চিকিৎসক সমাজের প্রতি আহ্বান জানান। দেশে মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা দেশের ইতিহাসে প্রথম ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠা করি। সম্প্রতি রাজশাহী ও চট্টগ্রামে নতুন দুটি মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় করা হচ্ছে। সিলেটেও আরও একটি মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। পর্যায়ক্রমে প্রত্যেকটি বিভাগীয় শহরে একটি মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় করবে সরকার। চিকিৎসার জন্য দেশে পর্যাপ্ত চিকিৎসকের অভাব রয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তবে ডাক্তারদের কথা-বার্তা এবং পরিচর্যায়ও অর্ধেক রোগ ভাল হয়ে যেত পারে সেদিকে আমাদের চিকিৎসকদের একটু বিশেষ যত্নবান হতে হবে। ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে মরণাপন্ন রোগীদের সেবা দেয়া হয় বলে এখানকার চিকিৎসাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, এখানে যারা কাজ করেন তাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়েই কাজ করতে হয়। তবে যতটা ঝুঁকিমুক্ত থেকে চিকিৎসা দেয়া যায় সেই বিষয়টাও যেমন দেখতে হবে, আবার রোগীদের চিকিৎসাটাও দেখতে হবে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী হাসপাতালে বাড়তি ভিজিটরের আগমনকে নিরুৎসাহিত করে বলেন, এতে যে কোন সময় রোগীর ক্ষতি বা ইনফেকশন হতে পারে। তিনি বলেন, অনেক সময় দেখা যায় ক্যামেরাসহ অপারেশন থিয়েটারে মিডিয়া ঢুকে পড়ছে। আত্মীয়-স্বজন, ভিজিটর যাচ্ছে, ভাত-মাছের মতো। তিনি ক্রিটিক্যাল রোগীর ক্ষেত্রে ভিজিটরদের ওপর কড়াকড়ি আরোপ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, কই বিদেশে তো এভাবে রোগী দেখতে দেয়া হয় না। প্রয়োজনে ভিজিটর কর্নার থাকবে, সেখানে মনিটরে রোগী দেখে আত্মীয়-স্বজন, প্রিয়জনেরা চলে যাবে অথবা গ্লাসের বাইরে থেকে রোগী দেখবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্রিটিক্যাল কেয়ারের চিকিৎসকদের আরও কঠোর হতে হবে। বাধা দিতে হবে। রোগী বাঁচাতে চাইলে চিকিৎসাটা ভালভাবে করতে দিতে হবে।’ শেখ হাসিনা ভিজিটরদের বাধা প্রদানের ক্ষেত্রে কঠোর হবার জন্য প্রয়োজনে তাঁর (প্রধানমন্ত্রীর) রেফারেন্স ব্যবহারের আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমার ভোট বাড়ল কি কমল সেটা চিন্তা নয়, রোগী বাঁচল কিনা, তাঁরা সেবা পাচ্ছে কি না সেটাই আমার চিন্তা। এক্ষেত্রে পোস্ট অপারেটিভ কেয়ারের চিকিৎসক এবং নার্সদের উন্নত প্রশিক্ষণের ওপর প্রধানমন্ত্রী গুরুত্বারোপ করেন। পৃথিবীতে নার্সিং একটা মর্যাদাপূর্ণ পেশা হলেও আমাদের দেশে এটিকে একটু নিচু চোখে দেখা হতো উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এজন্যই তাঁর সরকার নার্সিং পেশাকে দ্বিতীয় শ্রেণীর মর্যাদা দিয়েছে। তাঁর সরকারের গড়ে তোলা ডিজিটাল বাংলাদেশে টেলিমেডিসিন চালু হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত ইন্টারনেট সেবা চালু থাকায় টেলিমেডিসিনে আমরা অনেক দূর এগিয়েছি। আগামী মাসে আমাদের নিজস্ব উপগ্রহ বঙ্গবন্ধু-১ মহাকাশে উৎক্ষেপণ হলে আমরা তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে আরও একধাপ এগিয়ে যাব। ‘শুধু ওষুধ খাওয়ালেই তো আর রোগী ভাল হবে না সেজন্য খাদ্য নিরাপত্তা, পুষ্টি নিরাপত্তা-সব দিকেই তাঁর সরকার নজর দিচ্ছে,’ বলেন প্রধানমন্ত্রী। প্রয়োজনে আইন শিথিল করে দিয়ে হলেও তাঁর সরকার সকল হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসক এবং নার্সদের নিয়োগ দিচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত ৯ বছরে ১২ হাজার ৭২৮ জন সহকারী সার্জন এবং ১১৮ জন ডেন্টাল সার্জন নিয়োগ দেয়া হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে ১৩ হাজার স্বাস্থ্যকর্মী ও প্রায় সাড়ে ১২ হাজার নার্স নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় ২৪টি সরকারী হাসপাতাল নির্মাণ করা হয়েছে। সরকারী হাসপাতালগুলোতে প্রায় সাড়ে ৮ হাজার শয্যা বাড়ানো হয়েছে। চিকিৎসা পেশাকে একটি মহান ব্রত উল্লেখ করে প্রতিটি রোগীকে নিজের পরিবারের একজন সদস্য মনে করে সেভাবে সেবা প্রদান করার জন্যও প্রধানমন্ত্রী চিকিৎসকদের প্রতি আহ্বান জানান। চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়নে তাঁর সরকারের প্রচেষ্টা এবং চিকিৎসকদের সবরকম সহযোগিতা অব্যাহত রাখার কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী। স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য বিভাগের সচিব ডাঃ সিরাজুল হক খান এবং বিএমএ সভাপতি ডাঃ মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন। বাংলাদেশ সোসাইটি অব ক্রিটিক্যাল কেয়ার মেডিসিনের (বিএসসিসিএম) সভাপতি অধ্যাপক ইউএইচ সাহেরা খাতুন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। স্বাগত বক্তৃতা করেন ক্রিটিকন বাংলাদেশ-২০১৮’র কংগ্রেস সভাপতি ডাঃ মীর্জা নাজিম উদ্দিন। শুভেচ্ছা বক্তৃতা করেন বিএসসিসিএমের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক এএসএম আরিফ আহসান। অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদ সদস্যগণ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাগণ, সংসদ সদস্যগণ, সরকারের পদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দ, চিকিৎসক সমাজের প্রতিনিধিগণ এবং আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
×