ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

২০ থেকে ২৬ মার্চ দেশের ৬৮ কারাগারে পালিত হবে কারা সপ্তাহ ॥ কাশিমপুরে উদ্বোধন করবেন রাষ্ট্রপতি

সংশোধন ও প্রশিক্ষণ, বন্দীর হবে পুনর্বাসন

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ১৯ মার্চ ২০১৮

সংশোধন ও প্রশিক্ষণ, বন্দীর হবে পুনর্বাসন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ডিসেম্বরের মধ্যেই বন্দীর স্বার্থে ১৮৯৪ সালের প্রিজন্স এ্যাক্ট যুগোপযোগী করে সংশোধনের মাধ্যমে কারাগারকে পরিপূর্ণ সংশোধনাগার হিসেবে গড়ে তুলতে কারা অধিদফতর নিবিড়ভাবে কাজ করছে বলে জানিয়েছেন কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দীন। কারাবন্দীর স্বার্থ সুরক্ষায় ও কর্মকর্তা কর্মচারীদের কারা পরিচালনার সুবিধার্থে একইসঙ্গে প্রিজন্স এ্যাক্ট সংশোধনের পর জেলকোড সংশোধনে কাজ করা হবে বলে জানান তিনি। ‘সংশোধন ও প্রশিক্ষণ, বন্দীর হবে পুনর্বাসন’ স্লোগানে ২০ মার্চ থেকে ২৬ মার্চ পর্যন্ত দেশের ৬৮ কারাগারে একযোগে পালিত হবে কারা সপ্তাহ ২০১৮। একইসঙ্গে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে জাতিসংঘের ঐতিহাসিক স্বীকৃতিও উদযাপন করা হবে। এ উপলক্ষে রাজধানীর বকশিবাজারে উমেশ দত্ত রোডে কারা অধিদফতর সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে কারা মহাপরিদর্শক এসব কথা বলেন। তিনি জানান, গাজীপুরের কাশিমপুর কারা কমপ্লেক্সে ২০ মার্চ দুপুরে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ কারা সপ্তাহ উদ্বোধন করবেন। সংবাদ সম্মেলনে সকল সহকারী কারা মহাপরিদর্শকসহ উর্ধতন কারা কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সপ্তাহব্যাপী আয়োজিত অনুষ্ঠানে বন্দীর জীবনমানের সার্বিক উন্নয়নে ও নিরাপত্তা রক্ষায় দায়িত্বপ্রাপ্ত কারা কর্মকর্তা কর্মচারীদের কর্মোদ্দীপনা বাড়াতে নানা কর্মসূচী হাতে নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে বন্দীর স্বজনদের স্বার্থে তথ্য ও সেবাকেন্দ্র পরিচালনা করা ও আলোচনা, কারাভ্যন্তরে বন্দীদের নিজেদের মাঝে ও বাইরে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বিনামূল্যে রক্তদান কর্মসূচী, বন্দীদের জন্য প্রীতিভোজ, সরকারের নানা উন্নয়ন কর্মকা- ব্যানার ফেস্টুন ও আলোকসজ্জার মাধ্যমে তুলে ধরা, জেল সুপারদের সম্মেলন, শ্রেষ্ঠ কারা কর্মকর্তা কর্মচারীদের মাঝে ৭ ক্যাটাগরির পদক বিতরণ করাসহ নানা কর্মসূচী আয়োজন করা হয়েছে। কারাগারের আধুনিকায়ন ও সংস্কার নিয়ে কারা মহাপরিদর্শক বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে ১১টি নতুন কারাগার নির্মাণের কাজ চলছে। এর মধ্যে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কেরানীগঞ্জসহ কয়েকটি কারাগার নির্মাণ কাজ ইতোমধ্যেই শেষ হয়েছে। এছাড়া নিরাপত্তা বৃদ্ধিতে ও মাদকসহ সকল প্রকার অবৈধ দ্রব্য নিয়ে কারাগারে প্রবেশ ঠেকাতে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো আমরা কারাগারে বডি স্ক্যানার মেশিন বসাচ্ছি। এর আগে আমরা লাগেজ স্ক্যানার মেশিন স্থাপন করেছি। বন্দীর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কেরানীগঞ্জে কেন্দ্রীয় কারাগার কমপ্লেক্সে ৩ শত শয্যাবিশিষ্ট একটি হাসপাতাল নির্মাণ করা হচ্ছে। যার মধ্যে ৫০ শয্যার মাদকাসক্ত বন্দীর চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকবে। সৈয়দ ইফতেখার বলেন, সব ঠিক থাকলে আগামী এক বছরের মধ্যে নাজিমুদ্দিন রোডের পুরোনো কারাগারে যেসব স্থাপনা নির্মাণ করার কথা ছিল, সেগুলোর কাজ শুরু করা সম্ভব হবে। বন্দীদের সেবা প্রদান সৈয়দ ইফতেখার বলেন, আসছে গরমকালে বন্দীদের জন্য পর্যাপ্ত ঠা-া পানির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যেই ১১টি কারাগারে এই ব্যবস্থা করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সকল কারাগারেই এই ব্যবস্থা করা হবে। বন্দীর খাবার সম্পর্কে তিনি বলেন, স্বাস্থ্য সুরক্ষায় পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবারের জন্য মন্ত্রণালয়ে নতুন করে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। মূলত কারাগারকে আমরা শুধু শাস্তি কার্যকরের স্থান নয় সংশোধনাগার হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করছি। কারাগারে মাদক সমস্যা সম্পর্কে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দেশের ৬৮টি কারাগারে বন্দীর সংখ্যা ৭৭ হাজার ১২৪ জন। তাদের মধ্যে ৩৫ দশমিক ৯৭ শতাংশ মাদকের সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছেন। বন্দীদের পাশাপাশি কারাগারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কিছু কর্মচারীও মাদকের সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। গত এক বছরে এই সংখ্যা ২০ জনের বেশি। কর্মচারীদের মধ্যে তিনজনকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়াসহ কাউকে ছাড় দেয়া হয়নি প্রত্যেককে শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে। মূলত মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের জিরো টলারেন্স অবস্থান। তাই কারাগারে মাদক প্রবেশ ঠেকাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। তবে একটা পথ বন্ধ হলে জড়িতরা অন্যটা ব্যবহার করছে। কারা মহাপরিদর্শক বলেন, আমাদের সক্ষমতার অভাব রয়েছে। আমাদের জনবল অনেক কম। এই কম জনবল দিয়ে আমাদের সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতে হচ্ছে। মূল কাজগুলো করতেই আমরা হিমশিম খাচ্ছি। জনবল ঘাটতির মধ্যেও মাদক নিয়ন্ত্রণের জন্য বডি স্ক্যানার বসানো হচ্ছে। তিনি বলেন, র‌্যাবের সহায়তায় ডাটাবেজ তৈরির কাজ চালু রয়েছে। তবে এখন কিছুটা ধীর গতিতে হচ্ছে। সারাদেশে ৪০টি কারাগারে আংশিক কাজ হয়েছে। বাকিগুলোর কাজ চলছে। কিছু কারিগরি সমস্যার সমাধান হলেই এই পূর্ণাঙ্গ ডাটাবেজ তৈরির সুফল পাব। তবে বন্দীর সকল প্রকার তথ্য জানতে আমাদের উদ্যোগে বন্দীদের পূর্ণাঙ্গ ডাটাবেজ তৈরি করতে আমরা ইউএনডিসিও এর সহায়তায় ইনমেইড ডাটাবেইজ তৈরি করব। কারা মহাপরির্শক জানান, কারাগারকে পুরোপুরি সংশোধনাগারে রূপান্তর সম্ভব হয়নি। স্বল্প জনবল নিয়ে আমরা মূল দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। একজন বন্দীকে সংশোধনের জন্য তিনটি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হয়েছে। প্রথমে রয়েছে শৃঙ্খলা। দ্বিতীয়, চারিত্রিক সংশোধন ও তৃতীয় দক্ষতা বৃদ্ধি। আমরা প্রথম দুটি করতে পারিনি। তবে তৃতীয়টি অর্থাৎ দক্ষতা বৃদ্ধির কাজ করছি। যাতে একজন বন্দী কারাগার থেকে বের হওয়ার পর দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে জীবন ধারণ করতে পারে। বাকিগুলো সময়ের সঙ্গে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে। সৈয়দ ইফতেখার বলেন, বন্দীদের সঙ্গে স্বজনদের যোগাযোগ একটি বড় সমস্যা। এ সমস্যা লাঘবে মোবাইল ফোনে কথা বলার ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রথমে টাঙ্গাইল কারাগার থেকে শুরু হয়ে পর্যায়ক্রমে দেশের সব কারাগারে এই ব্যবস্থা চালু করা হবে। কারাগারে আটক বন্দীরা ২৮ মার্চ থেকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বাড়িতে থাকা তাদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন। কারা সপ্তাহ উদযাপনে কারা মহাপরিদর্শক বন্দীদের স্বজনসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
×