ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রাজশাহীতে আলুর ভাল ফলনেও বিপাকে চাষী

প্রকাশিত: ০৭:০৪, ১৯ মার্চ ২০১৮

রাজশাহীতে আলুর ভাল  ফলনেও বিপাকে চাষী

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ রাজশাহী অঞ্চলে এবারও আলুর ভাল ফলন হলেও দাম নিয়ে চরম হতাশায় পড়েছেন চাষীরা। মৌসুমের শুরুতেই রাজশাহী অঞ্চলে আলুর দামে ধস নামায় ভাল ফলনের পরও লোকসানের শঙ্কায় পড়েছেন তারা। এ অবস্থায় রাজশাহী অঞ্চলের কয়েক হাজার চাষী আলু নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েছেন। ফলন ভাল হলেও বাজারে কম দাম, কোল্ড স্টোরেজে সংরক্ষণের ব্যয় বৃদ্ধির কারণে জটিল পরিস্থিতি ধারণ করেছে। মাঠে মাঠে এখন আলুর স্তূপ। সেগুলো সংরক্ষণ নিয়েও বিপাকে রয়েছেন চাষীরা। চলতি মৌসুমে ৫০ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছিলেন তানোরের আলুচাষী লুৎফর রহমান। গত বছর আলুতে লোকসান দিয়েছেন ১৫ লাখ টাকা। আশা ছিল, চলতি মৌসুমে লোকসান কাটিয়ে লাভ করবেন। কিন্তু সে আশায় গুড়েবালি। দেড় মাস আগে থেকেই আলু জমি থেকে উঠতে শুরু করেছে। সব মিলিয়ে ফলন ভাল হলেও দাম নিয়ে চরম হতাশায় পড়েছেন তিনি। তিনি বলেন, পাইকারি বাজারে বর্তমানে আলুর যে দাম তাতে আবারও একই ধরনের লোকসানের আশঙ্কায় রয়েছেন তার মতো হাজারও চাষী। কৃষকরা বলছেন, সময়সীমা পার হয়ে যাওয়ার কারণে গত মৌসুমের ডিসেম্বরে কোল্ড স্টোরেজ কর্তৃপক্ষ সংরক্ষিত আলু কৃষকদের বের করে নিতে বাধ্য করে। এর ফলে কৃষকরা পানির দামে আলু বিক্রি করতে বাধ্য হন। চলতি মৌসুমেও এ পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহীতে চলতি বছর ৪১ হাজার ৬৬৫ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। কিন্তু ৪০ হাজার ৩৬১ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। আর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৮ লাখ ২৩ হাজার মেট্রিক টন। কৃষি দফতরের তথ্যমতে ক্ষেতের বেশিরভাগ আলু উঠে গেছে। কৃষকরা এখন আলু হিমাগারে সংরক্ষণ নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন। অনেকের আলু এখনও মাঠে মাঠে স্তূপ করে রাখা হয়েছে। রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার হামিরকুৎসার আলুচাষী হাসমত আলী বলেন, গত মৌসুমেও আলুর ফলন ভাল হলেও দাম কম ছিল। ওই মৌসুমে ৮০০ মণ আলু কোল্ড স্টোরেজে সংরক্ষণ করেছিলেন তিনি। প্রথমে সংরক্ষিত সাড়ে চার শ’ মণ আলু ভাল দামেই বিক্রি করেন। কিন্তু মৌসুমের শেষ দিকে ডিসেম্বরে কোল্ড স্টোরেজ কর্তৃপক্ষ তাদের স্টোরেজ থেকে আলু বের করে নিতে বাধ্য করে। ফলে বাকি সাড়ে তিন শ’ মণ আলু ওই সময় মাত্র ৪ থেকে ৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে বাধ্য হন। এর ফলে তার সাত লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে। তিনি বলেন, এ মৌসুমে আলুর দাম আরও কম। এ কারণে চলতি বছর আরও বেশি লোকসানের আশঙ্কায় রয়েছি। রাজশাহীর মোহনপুরের কেশরহাট সদরের আলুচাষী কবির হোসেন। তিনি বলেন, চলতি মৌসুমে তিনি ৭৫ বিঘা জমি লিজ নিয়ে আলু চাষ করেন। ইতোমধ্যে ৪০ বিঘা জমির আলু উত্তোলন হয়েছে। বর্তমানে বাজারে বিভিন্ন জাতের আলুর দাম প্রতি কেজি সাড়ে ৬ থেকে ৭ টাকা। সে হিসেবে প্রতি মণ আলুর দাম ২৬০ থেকে ২৮০ টাকা। প্রতি বিঘা জমিতে আলুর উৎপাদন হয়েছে ৭৫ থেকে ৮০ মণ। এ হিসেবে একবিঘা জমিতে সাড়ে ২২ হাজার টাকা আলু পাওয়া গেছে। আর প্রতি বিঘা জমিতে লিজের মূল্যসহ আলু চাষ করতে খরচ হয়েছে ২৮ থেকে ৩০ হাজার টাকা। ফলে এ বছরও আলু চাষ করে কয়েক লাখ টাকা লোকসান গুনতে হবে। রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের একটি সূত্র জানায়, দেশে বছরে আলুর চাহিদা ৬৫ থেকে ৭০ লাখ মেট্রিক টন। কিন্তু প্রতি বছর সারাদেশে আলু উৎপাদিত হয় ১ কোটি ৫ থেকে ১০ লাখ মেট্রিন টন। বাকি আলু উদ্বৃত্ত থাকে। উদ্বৃত্ত আলু বিদেশে রফতানির ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আর রাজশাহী অঞ্চলে আলুর গড় উৎপাদন বেশি। এছাড়া এ অঞ্চলে আলুর চাষ বেশি হয়। এ কারণে প্রতি মৌসুমে অতিরিক্ত উৎপাদিত আলু অবিক্রিত থেকে যাচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের রাজশাহীর উপপরিচালক দেব দুলাল ঢালি বলেন, মৌসুমের শুরুতেই আবহাওয়া আলু চাষের অনুকূলে ছিল। আলুর উৎপাদন ভাল হয়েছে। তবে সারাদেশের মতো রাজশাহীতেও আলুর দাম কম। দাম কম হওয়ার কারণে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বলে মনে করেন এ কৃষি কর্মকর্তা।
×