ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

অতনু রায়

চেতনায় স্বাধীনতা

প্রকাশিত: ০৭:৪৩, ১৯ মার্চ ২০১৮

চেতনায় স্বাধীনতা

অপরূপ সুন্দর এ দেশ। মনে হয় শিল্পীর তুলিতে আঁকা কোন ছবি। এ ছবি দেখে যেন চোখের পলক পড়ে না। বার বার দেখার সাধ জাগে। বহু কবি-সাহিত্যিক এ দেশকে ভালবেসে মুগ্ধ হয়ে লিখেছেন গান, কবিতা ও উপন্যাস। এ দেশের মাটি সোনার ফসল ফলয়। ষড়ঋতু খ-িত এ দেশ আকর্ষিত করেছে বহু দেশের মানুষকে। মানচিত্রের বুকে ছোট্ট এ দেশ যেন গর্ব করার মতো একটি দেশ। বুকচিরে বয়ে যাওয়া নদী, পাখির কলতান, সোনার ফসল সবকিছু মিলিয়েই যেন পরিপূর্ণ একটি দেশ। লাল-সবুজের পতাকা পতপত করে উড়তে থাকে। জানান দেয় একটি পরিপূর্ণ দেশের। লাল-সবুজের পতাকার দিকে তাকালেই এক ধরনের দৃঢ়প্রত্যয় কাজ করে। মনে হয় অনেক অব্যক্ত কথা ধারণ করে রেখেছে পতাকাটি। পরিচয় করিয়ে দেয় স্বাধীন সার্বভৌম একটি রাষ্ট্রের। মনে করিয়ে দেয় আমরা মুক্ত স্বাধীন জাতি, যে জাতি মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে। অধিকার অর্জনে সচেষ্ট এক জাতি, যে জাতি স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনতে জানে। দীর্ঘ নয় মাসের সংগ্রামের ফসল আমাদের স্বাধীনতা। আর এই নয় মাসের বিনিময়ে বিশ্ব চিনল এক নতুন দেশ, নতুন জাতিকে। নতুন করে জানাল কাদামাটির নরম এ মানুষগুলো নিজেদের অধিকার আদায়ে বাঘের হুঙ্কার দিয়ে কাঁপিয়ে দিতে পারে বিশ্ব। যে কোন সম্ভবকে সম্ভব করে তুলতে পারে। স্বাধীনতার জন্য যখন মন ছুটে যায় তখন কোন মারণাস্ত্রই বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। পুরো বিশ্ব সে দৃশ্য অবলোকন করেছে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে। ২৫ মার্চের পাক হানাদারের অতর্কিত হামলার যথোপযুক্ত জবাব দেয় বাঙালী। ২৬ মার্চ ঘোষণা করা হয় স্বাধীনতা দিবস। আর তাই স্বাধীনতা দিবস আজও তরুণ প্রজন্মের কাছে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা। প্রেরণা যোগায় নিষ্ঠার পথে নির্ভীক যোদ্ধা হওয়ার। শুধু একটি দিবস হিসেবে নয়, এর বর্ণোচ্ছটায় বদলে যায় জীবনের গতিপথ, সাহস যোগায় নতুন শপথ নেয়ার। আর এ কারণেই স্বাধীনতা দিবসের তাৎপর্য এত বেশি। বর্তমান সময়েও এর প্রভাব প্রতিদিনের পথ চলার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। প্রতি মুহূর্ত মায়াবী এক আবহে জড়িয়ে রাখে। বাঙালী মানেই সংগ্রাম, আন্দোলন আর স্বাধিকার জাগরণের অমোঘ স্বাধীনতা অর্জনের অনন্য উজ্জ্বলতার প্রতীক। যে উজ্জ্বলতার প্রতিটি বাঁকে উদ্ভাসিত হয়ে আছে অফুরন্ত বীরত্বগাথা। মুক্তিযুদ্ধের অমিয় অধ্যায়ের পথ রচনায় বাঙালীর অবিস্মরণীয় সৃষ্টিশীলতার মধ্য দিয়ে যে সাংস্কৃতিক প্রান্তর অরুণোদয়কে আলোয় আলোকিত হয়েছে। সেই আলোরই ছন্দময় ঔজ্জ্বল্যে স্পন্দিত হয়ে ওঠে বাঙালীর ফ্যাশনধারা। চেতনায় মুক্তিযুদ্ধের পঙক্তিমালা সাজিয়ে দেশীয় মোটিফে লোকজ ফর্মে ক্রমান্বয়ে একটা ভিত রচিত হয়। যে ভিতের ওপর এখন ফুটেছে ফ্যাশন গোলাপ, জুঁই, চাঁমেলী, চন্দ্রমল্লিকা আর রাশি রাশি হাসনাহেনা। সময়ের নিরিখে বাংলার ঐতিহ্য লালিত ফ্যাশন ধারার রয়েছে এক সুদীর্ঘ ইতিহাস। যে ইতিহাসের ভেতর স্বপ্নগুচ্ছের মতো বর্ণিল এক প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে দেশীয় ফেব্রিকের নিপুণ ছন্দবদ্ধতায়। আর তারই প্রকাশ চোখের সম্মুখে মেলে ধরে ভিন্ন মাত্রার নতুন আঙ্গিকে রূপায়িত আজ বাংলার ফ্যাশন। যা কিনা সম্পূর্ণ নিজস্বতা নিয়ে বাঙালীর মনকে ছুঁয়ে যেতে সক্ষম হয়। আজ তাই ফ্যাশনে বাঙালী সংস্কিৃত আর দেশাত্মবোধের স্ফুরণ হয়ে ওঠে লক্ষণীয়। সব বয়সী বাঙালীর জীবনধারাই যেন ক্রমশ বদলে দেয় সমকালীন ফ্যাশনগল্প। যে গল্পের ছোঁয়ায় দৈনন্দিন জীবনের নানা পরতে পরতে এক একটি স্পন্দন ভিন্ন ভিন্ন আমেজে অনুরণিত হয়। এই অনুরণনের ধরনেও রয়েছে বৈচিত্র্যময়তা। ষড়ঋতুর এই বাংলায় প্রকৃতির যেমন রয়েছে একটা হৃদয়ছোঁয়া রূপ তেমনি বাঙালীর জীবনধারায় আত্মঅধিকার প্রতিষ্ঠায়ও রয়েছে আরও একটি অন্যরকম ছবি। যে ছবিটা বাঙালীর কাব্যিক জীবনবোধে সংগ্রামী চেতনার বৈপ্লবিক ঐক্যবদ্ধতার স্বরূপটাকে উন্মোচিত করে দেয়। সেই ১৯৫২ সাল থেকে এ বৈপ্লবিক ধারার গতিটা প্রবল বেগে সঞ্চারিত হতে থাকে। তারপর আসে ১৯৭১। ’৭১ এর মার্চে দুটি দিন বাঙালীর জীবনকে ভীষণভাবে নাড়া দিয়ে যাচ্ছে দীর্ঘ ৪৭ বছর ধরে। মুক্তিযুদ্ধের এ অধ্যায় থেকে শুধু প্রেরণা নিলেই হবে না। নিজেদের গড়ে তুলতে হবে সেই দীক্ষায়। নিয়োজিত রাখতে হবে দেশ গড়ার কাজে। আর শিক্ষা পরিবার থেকেই দিতে। ছোট্ট শিশুকে বোঝাতে দেশ ও দেশের মাটির মর্যাদা, শহীদদের মর্যাদা। দেখাতে হবে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সম্মান। নিজের প্রয়োজন মেটানোর আগেই যে দেশের প্রয়োজন মেটাতে হবে সে শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে হবে। আর জাগরণ যবে বাংলার প্রতিটি ঘরে ঘরে বইবে সেদিন তবে আসবে প্রকৃত মুক্তি।
×