ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আইনী সহায়তা নিশ্চিতকরণে তরুণ আইনজীবিদের এগিয়ে আসতে হবে ॥ ড. কামাল হোসেন

প্রকাশিত: ০১:৪৬, ১৯ মার্চ ২০১৮

আইনী সহায়তা নিশ্চিতকরণে তরুণ আইনজীবিদের এগিয়ে আসতে হবে ॥ ড. কামাল হোসেন

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার ॥ সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেন বলেছেন, ‘অন্যায় অধিকার রোধ এবং অন্যায়ের প্রতিকার করার উদ্দেশ্যে আইনের ব্যবহার করতে হবে। আইনের মাধ্যমে মানবাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। সর্ব সাধারণের জন্য আইনী সহায়তা নিশ্চিতকরণে তরুণ আইনজীবিদের এগিয়ে আসতে হবে। সোমবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) নবাব নওয়াব আলী সিনেট ভবনে ‘জেন্ডার, অধিকার ও মতপ্রকাশ: বড় শহরসমূহে ন্যায় বিচারে অভিগম্যতা’ শীর্ষক দুই দিনব্যাপী দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সম্মেলন তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। দুই দিনব্যাপী এ সম্মেলনটি যৌথভাবে আয়োজন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুষদ ও ব্লাস্ট। ড. কামাল হোসেন বলেন, দিন দিন শহরের বস্তিবাসীর সমস্যাগুলো ব্যাপক আকারে দেখা দিচ্ছে। আইনী সহায়তা নেওয়ার ক্ষেত্রে তারা সচেতন নয়। তারা মনে করে আইন শুধু অভিজাত শ্রেণির লোকদের জন্য। এক্ষেত্রে তরুণ আইনজীবিরা দায়িত্ব নিয়ে আইনের ব্যাপারে সচেতন করতে পারে। গরিব লোকজনও যে আইনের সহায়তা পেতে পারে সেটা তাদের জানাতে হবে। কীভাবে আইনের সহায়তা নিতে হয় সেটাও তাদের বোঝাতে হবে। বর্তমানে তরুণ আইনজীবিদের অনেকে মানবাধিকার কর্মকান্ডে এগিয়ে আসছে। এটি একটি বড় অগ্রগতি। তিনি আরও বলেন, কাউকে চাকরিচ্যুত করার ক্ষেত্রে আইনের সকল বিষয় ঘেটে দেখতে হবে। হাজার হাজার শ্রমিককে ছাটাই করা অন্যায়। শ্রমিকদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধির দাবি আসতেই পারে। এর জন্য সমাধানের জন্য আলোচনা করা যেতে পারে। তবে এভাবে ছাটাই করা আইয়ুব খানের মার্শাল ল’র চেয়ে ভিন্ন কিছু নয়। তাদের যৌক্তিক দাবি তারা উপস্থাপন করতে পারে। এক্ষেত্রে তাদের আইনী সহায়তা দিতে হবে। আইনের অমানবিক প্রয়োগ থেকে শ্রমিকদের বাঁচাতে হবে। সম্মেলনের প্রথম দিনে মোট চারটি সেশন অনুষ্ঠিত হয়। এ সম্মেলনে সার্বিক সহযোগিতা করেছে কিংডম অব নেদারল্যান্ডস অ্যাম্বাসি। সকাল নয়টায় শুরু হয়ে প্রথম দিনের কার্যক্রম বিকেল পাঁচটায় শেষ হয়। সকাল নয়টায় আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. রহমত উল্লাহ’র সভাপতিত্বে ‘দ্য কনসেপ্ট অব দ্য সিটি: মিটিং জাস্টিস নীডস এন্ড গ্যাপস’ শীর্ষক প্রথম সেশন অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তব্য রাখেন- সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেন, কিংডম অব নেদারল্যান্ডস অ্যাম্বাসির অ্যাম্বাসেডর লিওনি মার্গারেতা কুয়েলিনায়ের, গ্লোবাল লিগ্যাল এমপাওয়ারমেন্ট নেটওয়ার্ক এর সিনিয়র উপদেষ্টা মারলন জে. ম্যানুয়্যাল, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এন্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট-এর এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর সারা হোসেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. ফেরদৌস জাহান এবং ব্লাস্ট’র পরমর্শক ব্যারিস্টার ফারিয়া আহমাদ। ‘জেন্ডার এন্ড অ্যাকসেস টু দ্য জাস্টিস ইন দ্য সিটি’ শীর্ষক দ্বিতীয় সেশন অনুষ্ঠিত হয় বেলা ১১টায়। ব্লাস্ট’র প্রধান আইন উপদেষ্টা ও সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগের সাবেক বিচারপতি নিজামুল হকের সভাপতিত্বে দ্বিতীয় সেশনে বক্তব্য রাখেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. বোরহান উদ্দিন খান, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের ডেপুটি কমিশনার ফরিদা ইয়াসমিন, ন্যাশনাল লিগ্যাল এইড সার্ভিস সেন্টারের ডেপুটি পরিচালক আবেদা সুলতানা, নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের কো-অর্ডিনেটর ড. বিলকিস বেগম, মাদারিপুর লিগ্যাল এইড অ্যাসোসিয়েশনের প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর ইব্রাহিম মিয়া এবং মহাখালীর কুনিপাড়ার নুরুন নাহার নওরিন। সেশনের শেষ পর্যায়ে প্রশ্নোত্তর পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। দুপুর দুইটায় শুরু হয় ‘অ্যাকসেস টু হেল্থকেয়ার, লিভলিহুড এন্ড শেল্টার’ শীর্ষক তৃতীয় সেশন। ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ব্র্যাক জেমস পি গ্র্যান্ট স্কুল অব পাবলিক হেল্থ এর ডিন অধ্যাপক ড. সাবিনা ফাইজ রশিদের সভাপতিত্বে প্যানেল আলোচনায় বক্তব্য রাখেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এ এস এম আমানুল্লাহ, ফ্রিল্যান্স পরামর্শক ড. জুলিয়া আহমেদ, স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের ডক্টর অব পেডিয়াট্রিক মেডিসিন, জেন্ডার, এনজিও এন্ড স্টেকহোল্ডার পার্টিসিপেশন ইউনিটের ড. আয়েশা আফরোজ চৌধুরী, ভারতের কর্ণাটকের স্ট্রী জাগ্রোতি সমিতির সেক্রেটারি গীতা মেনন এবং ভারতের আহমেদাবাদের সেন্টার ফর সোশাল জাস্টিস এর রিসার্চ ফেলো তনয় গান্ধী। সেশনের শেষ পর্যায়ে প্রশ্নোত্তর পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। দিনের শেষ সেশন অনুষ্ঠিত হয় বিকেল চারটায়। ‘রাইট টু কনস্টেন্ট এন্ড চয়েজ’ শীর্ষক এ সেশনের সভাপতিত্ব করেন ইন্দো-প্যাসিফিক অ্যাসোসিয়েশন অব ল’, মেডিসিন এন্ড সায়েন্স এর মেডিকো লিগাল এক্সপার্ট অধ্যাপক ড. মো. মুজাহেরুল হক। এই সেশনে প্যানেলিস্ট হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. গীতি আরা নাসরীন, কেয়ার বাংলাদেশ এর উইমেন্স এন্ড গার্লস এমপাওয়ারমেন্ট প্রোগ্রামের পরিচালক হুমায়রা আজিজ। সেশনের শেষ পর্যায়ে প্রশ্নোত্তর পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। দুই দিনব্যাপী এ সম্মেলনে সরকারি কর্মকর্তা, আইনজীবি, গবেষক, সেবা প্রদানকারী, সাংবাদিক, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ, আইনগত সহায়তা প্রদানকারী ও অধিকার সংগঠন, স্থানীয় পর্যায়ের সংগঠন, সমাজকর্মী, প্যারালিগ্যাল এবং স্বাস্থ্যকর্মীসহ প্রায় ২৫০ জন অংশগ্রহণকারী অংশ নিচ্ছেন। আজ মঙ্গলবার সম্মেলনের দ্বিতীয় ও শেষ দিনে আরো চারটি সেশন অনুষ্ঠিত হবে। সকাল সাড়ে নয়টা থেকে শুরু হয়ে শেষদিনের কার্যক্রম বেলা ৩টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত চলবে।
×