ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বাউফলে দেড়শ বছরের সেই পুরানো গাছের নিচে এখনো বসে মহেন্দ্র পাগলের মেলা

প্রকাশিত: ০১:৫৫, ১৯ মার্চ ২০১৮

বাউফলে দেড়শ বছরের সেই পুরানো গাছের নিচে এখনো বসে মহেন্দ্র পাগলের মেলা

নিজস্ব সংবাদদাতা, বাউফল ॥ বাউফল পৌর শহরের ফুলতলার মহেন্দ্র পাগলের আশ্রমের সেই প্রাচীনতম গাছটি গাছটি (স্থানীয় ভাষায় পাহোইর গাছ) আজও মাথা উচু করে দাঁড়িয়ে আছে। কালের স্বাক্ষি হয়ে গাছটি প্রায় এক একর জমি জুড়ে ঢালপালা ছড়িয়ে রয়েছে। গাছটির বয়স কারো কারো মতে দেড়শ-দুই শ’ বছর হবে। আর এই গাছের নীচে আশ্রয় নিয়েছিল এক প্রসিদ্ধ পুরুষ । যার নাম মহেন্দ্র পাগল তার ধর্মীয় জ্ঞাণ,সাধনার বলে প্রায় বিমোহিত হয়ে প্রায় দুসহাশ্রাদ্ধিক শিষ্য তার কাছ থেকে দিক্ষা নেন। গড়ে উঠে এখানে সনাতন ধর্মীয় উপসনালয় । এই গাছের তলায় গড়ে উঠেছে রাধাকৃষ্ণ মন্দির,নাট মন্দির। তিথি অনুযায়ি প্রতিবছর চৈত্র মাসের ১০ তারিখ রাত বারটায় অধিবাসের মধ্য দিয়ে শুরু হয় এ ধর্মীয় মেলাটি। এইদিনে শতশত ভক্তপ্রাণ হিন্দু ধর্মালম্বী সম্প্রদায়ের নারী ও পুরুষ বিভিন্ন মানত করে মনোবাসনা পূর্ণকরার আশে। এ কারণে মহেন্দ্র পাগলের তীরধাম হয়ে ওঠে পূণ্যার্থীদের পদচারণায় মুখরিত । মেলা বসে তার নামে ৫দিন ব্যাপি । তীরধাম নামে পরিচিত হয় মহেন্দ্র পাগলের বিশ্বকল্যাণ গীতাশ্রম এক এক করে প্রায় ৪৯ বছর ধরে পাগলের নামে কীর্ত্তন,পালাগান,বাউলগান,কবিগানসহ নানা আয়োজনে বসে ধর্মীমেলা । হিন্দু ধর্মালম্বী সম্প্রদায় এই বৃক্ষকে মনোবাসনা পূর্ণ করার আশায় শ্রদ্ধা করে তৈল,সিঁদুর,সুতা,মোমবাতি আগর বাতি দিয়ে শ্রদ্ধা করে পুজা আর্চনা করেন তারা । দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সাধূ সন্যাসীদের আগমণ ঘটে । শুধু বিক্ষকে ঘিরে পুজার্চনাই নয় । বাউফল নওমালা সড়কের পাশে ডাল পাতায় পরিপূর্ণ গাছটি উপজেলাগামী জনবীড়ল স্থানে পথচারীদের আশ্রয়স্থল হিসাবেও সে ছায়া দিচ্ছে । এ মেলাটি সাধারণত ১০ চৈত্র থেকে ১৫ চৈত্র পর্যন্ত থাকে । এই গাছ সম্পর্কে বাউফল কেন্দ্রীয় কালিবাড়ির সভাপতি ও সাবেক পৌর প্রশাসক জীবন কৃষ্ণ সাহা বলেন, বাবা মায়ের মুখে শুনছি গাছটির কথা । এখন তাঁর বয়স প্রায় ৮৯ বছর । তারমতে প্রায় দেড়শ বছর হবে । পৌর শহরের প্রবীণ ব্যবসায়ি ও সমাজসেবক ছোট কর্তা নামে সবারই পরিচিত সত্য রঞ্জন সাহা বলেন,মন্দ্রে পাগল ছিলেন একজন সিদ্ধ পুরুষ যাতপাত বলে তার কিছু ছিলনা । তার সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি আচার্য একটি ঘটনা উল্লেখ করেন। বাকের গঞ্জের গোবিন্দপুর খেয়া ঘাটে ছিল মহেন্দ্র পাগল বরিশাল গামী একটি একতলা লঞ্চকে তাকে নিয়ে যাওয়ার জন্যে বলেছিলেন। কিন্তু লঞ্চটির চালক তা শুনেনি । পড়ে ওই লঞ্চটি তেতুলিয়ার গভীর পানিতে আটকে যায় । পরে তার বিষয়টি বুঝতে পেরে অনুরাধ করে তাকে লঞ্চে তুললে পুণরায় লঞ্চটি চলতে শুরু করে । এ ঘটনা এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে গোবিন্দপুর তার নামে একটি আশ্রম হয় । এ রকম বেশ কিছু অলৌকিক ঘটনার বর্ণনা দিলেন তিনি। গাছটি তো সে ছোট বেলা থেকে একই আকাড় দেখে আসছেন জানান। তছির নামের এক পাগল ভক্ত বলেন, সংসার ভালো চলছিনা একদিন খালের ঘাটে গোসল করতে এস পাগলকে তার করুণ পরিণতির কথা স্মরণ করে কিছু টাকা নিয়ে ভাসমান মুদি দোকান নিয়ে বাজারে গেলেন, ওইদিনই দেখতে পেলেন তার দোকানের মালামাল লুফে নিয়েছিল লোকজন । এর পর থেকে তছির ওই পাগলা বাবার ভক্ত হয়ে যায় । ওই এলাকার মতি বিবি বলেন, মোরা হেই ছোটবেলা অইতে হুনছি এ্যাহানে অনেক মানুষ মানব করতে আসে । এ ছাড়া এই বিস্তৃত গাছের দৃষ্টি নন্দন প্রাকৃতিক সৌন্দার্য পাখিদের কলকাকলি মুখরিত শীতল পরিবেশ বিমুগ্ধ চিত্তকে বিস্ময় ও আনন্দে আভিভুত করে আগত ধর্মপ্রাণ হিন্দু দর্শনার্থীদের। মহেন্দ্র পাগলের এই ধর্মী মেলা দেখতে হলে দেশের ধর্মপ্রাণ হিন্দু সম্প্রদায়ের বাউফলের বগা ফেরি ঘাট ও লোহালিয়া খেয়াঘাট পার হয়ে বাউফল পৌর শহরের ৫নং ওয়ার্ডের ফুলতলা বিশ্বকল্যাণ গীতাশ্রম মহেন্দ্র পাগলের মেলা বললেই হবে।
×