ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মাদারীপুরে ধর্ষণ মামলার স্বাক্ষীরাই জানে না তারা স্বাক্ষী

প্রকাশিত: ০২:২৮, ১৯ মার্চ ২০১৮

মাদারীপুরে ধর্ষণ মামলার স্বাক্ষীরাই জানে না তারা স্বাক্ষী

নিজস্ব সংবাদদাতা, মাদারীপুর ॥ মাদারীপুর সদর উপজেলার শ্রীনদী গ্রামের একটি ধর্ষণ মামলার স্বাক্ষীরাই জানে না তারা স্বাক্ষী ॥ অথচ মিথ্যা ধর্ষণ মামলা মাথায় নিয়ে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে আসামীর পরিবার। এ নিয়ে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। ধর্ষণের সত্যতা নিয়ে শুরু হয়েছে নানা জল্পনা কল্পনা। এদিকে ডাক্তারী রিপোর্টে ধর্ষণের কোন আলামত পাওয়া যায়নি। অথচ ভিলেজ পলিটিক্সের কারণে ধর্ষিতার খাতায় নাম লেখাতে হলো ৮ বছরের একটি অবুঝ শিশুকে। এলাকার একাধিক সুত্রে জানা গেছে সদর উপজেলার শ্রীনদী গ্রামের দেলোয়ার মাতুব্বর একজন টেইলার। তার কাছে জামা-কাপড় তৈরি করতে দেয় একই এলাকার জসীম নামে এক ব্যক্তি। সময়মত জামা-কাপড় ডেলিভারী না দেয়ায় গত ১৮ ফেব্র“য়ারী সকালে দেলোয়ারের সাথে জসিমের হাতাহাতি হয়। পরদিন জানা যায় ৮ বছরের একটি মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগে দেলোয়ার মাতুব্বর (৫০)এর বিরুদ্ধে মাদারীপুর সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। পরে বিষয়টি স্থানীয়দের মধ্যে জানাজানি হয়ে যায়। শুরু হয় নানা ধরণের টালবাহানা। ধর্ষকের বিচারের দাবিতে করা হয় মানববন্ধন ও বিক্ষেভ মিছিল। এদিকে দেলোয়ার মাতুব্বর লোকলজ্জা ও পুলিশের ভয়ে বাড়ি-ঘর ছেড়ে সপরিবারে পালিয়ে যায়। মামলার আসামীর এক সন্তানকে বিয়ে দিলেও অন্য দুই সন্তান পড়াশুনা করতে পারছে না লোকলজ্জায়। এ ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। তদন্ত সাপেক্ষে সঠিক প্রতিবেদন দাখিলের দাবি করছেন এলাকাবাসী। বাদীর স্বজনেরা জানান, মামলার বাদীর এজাহারে উল্লেখিত বর্ণনার সাথে আনুষঙ্গিক বিভিন্ন প্রমাণের কোন মিল না থাকার কারণেই তারা স্বীকার করে যে, ধর্ষণের চেষ্টা মামলা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু গ্রামের কিছু মানুষের কথায় ধর্ষণের মামলা করাটা ভুল হয়েছে। এলাকার একাধিক ব্যক্তি জানান, দেলোয়ার ৩ সন্তানের পিতা। তার বড় মেয়ের বিয়ে দিয়েছে, সেই ঘরে ৭ বছর বয়সের জুঁই নামে এক নাতনি রয়েছে। সে এরকম কাজ করতে পারে না। এ রকম কোন ঘটনা তাদের জানা নাই। দেলোয়ার বড় মেয়ে আঁখি আক্তার বলেন, ‘তারা মিথ্যা একটা মামলা দিয়ে আমাদের মান সম্মান নস্ট করেছে। যে মেয়ের কথা বলা হয়েছে তার মত আমার একটি মেয়েও আছে। আমি মামলাটির সঠিক তদন্ত চাই। আর এরকম ঘৃণিত কোন কাজ আমার বাবা করেন নাই। আমার বাবা যে দোকানে কাজ করে তাতে কোন আলাদা রুম নেই। তাছাড়া দোকানটি আমাদের ঘরের সামনে রাস্তার পাশে।’ ইশিবপুর উচ্চ বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক, কাওছার মাস্টার ও একই এলাকার সদর থানা আওয়ামীলীগের একজন সদস্য মিন্টু হাওলাদার বলেন, ‘এলাকায় ধর্ষণের কোন ঘটনা ঘটে নাই। শুনেছিলাম দেলোয়ার এর সাথে শার্ট তৈরি নিয়ে জসিম নামে একটি ছেলের হাতাহাতি হয়েছে। তাকে আমাদের এখানের স্থানীয় ডাক্তার বাড়ীতে গিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েও আসছে। তখন মেয়েটি খেলা করতেছিল বলে আমরা জানি। আর মামলায় বলা হয়েছে ছোট শিশুটিকে ধর্ষণ করা হয়েছে সকাল ১০টার দিকে। সকালে শুনলাম মেয়ের ভাইয়ের সাথে হাতাহাতি হয়েছে। আর সন্ধ্যায় শুনলাম ছোট ঐ শিশুটিকে বয়স্ক লোকটি ধর্ষণ করেছে। এটা কিভাবে সম্ভব?’ স্থানীয় চিকিৎসক রেজাউল ইসলাম বলেন, ‘আমি যখন জসিমের প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে যাই তখন সেই মেয়েটিকে স্বাভাবিকভাবে হাটাচলা করতে দেখি। তখন জানতাম না কি হয়েছে। আমাকে একধিক বার ফোন দিয়ে বাড়ীতে নিয়েছে, আমি ঐ সময় অনেক ব্যস্ত ছিলাম।’ এদিকে মামলার ২নং স্বাক্ষী সিরাজ বেপারী বলেন, ‘আমি কোন মিথ্যা স্বাক্ষী দিতে পারবো না। আমাকে এ মামলার স্বাক্ষী করা হয়েছে আমি নিজেই জানি না। আমার অনুমতি ছাড়া কেন আমাকে স্বাক্ষী করা হল। আমি এ ঘটনার কিছুই জানি না। অথচ আমাকে ধর্ষণ মামলার স্বাক্ষী করা হয়েছে।’ মামলার ৩ নং স্বাক্ষী রোকন বেপারী ছবি তুলতে নিষেধ করে বলেন, ‘আমি কখনই ছবি তুলিনা। ধর্মের বিধি-বিধান মেনে চলতে চেষ্টা করি। আর এই মামলায় আমাকে স্বাক্ষী করা হয়েছে, তা আমি আগে জানতাম না। পরে মানুষের কাছে শুনেছি। আমি কোন মিথ্যা কথা বলতে পারবো না। যে ঘটনা আমার জানাই নাই তার কি বলবো। কোর্টে গিয়ে স্বাক্ষী দেয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যাওয়া লাগলে যাব; আর বিচারক কিছু জানতে চাইলে সত্যি কথাই বলবো।’ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস.আই দুলাল চন্দ্র সরকার জানান, মামলার তদন্ত চলছে। তদন্ত সাপেক্ষে সঠিক প্রতিবেদন দেয়া হবে। মাদারীপুর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) উত্তম প্রসাদ পাঠক বলেন, ‘বিষয়টি সম্পর্কে আমি বিস্তারিত জেনে নিয়ে সঠিক প্রতিবেদন দেয়ার ব্যবস্থা করবো, যাতে কোন নিরপরাধী ভোগান্তির শিকার না হয়।
×