ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

ভেড়ার খামার

প্রকাশিত: ০৬:০৫, ২০ মার্চ ২০১৮

ভেড়ার খামার

একটি প্রাপ্তবয়স্ক ভেড়ার ওজন ১৫ থেকে ২০ কেজি হতে পারে। প্রতিটি ভেড়া থেকে বছরে গড়ে ১ থেকে দেড় কেজি পশম পাওয়া যায়, যা দিয়ে উন্নতমানের শীতবস্ত্র নির্মাণ করা যায়। ভেড়ার উৎপাদন বাড়ার হার শতকরা ১২ ভাগ; যা গরু, ছাগল, মহিষের চেয়ে অনেক বেশি। এদের বাসস্থানের ব্যয়ও কম। রোগব্যাধিও কম। এমন গুণাবলীর প্রাণীটির এদেশে তেমন কদর নেই। অথচ তিন দশক আগেও এদেশে ভেড়া পালন করা ও তার মাংস বিক্রির রেওয়াজ ছিল। অকস্মাৎ ভেড়া দিনে দিনে যেন বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। লালন-পালনে তেমন ব্যয় না হলেও এই প্রাণীটি গুরুত্ব হারিয়েছিল বলা যায়। অথচ ভারতের উত্তরাঞ্চলে ভেড়ার বহু খামার রয়েছে। অনেকের আয়ের উৎস এই ভেড়া। বাংলাদেশেও ভেড়ার উৎপাদন বাড়ানো যেত। গরু পালন ব্যযবহুল যেখানে, সেখানে ছাগল ও ভেড়া পালন অত্যন্ত সহজ হলেও ভেড়া নিয়ে ভাবনাটা যেন স্তিমিত ছিল প্রায়। এখন আবার ভেড়ার জগত গড়ে উঠছে গ্রাম-গঞ্জে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে অসংখ্য নারী ভেড়া পালনে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। এতে আয়ের পরিমাণ বাড়ছে। সচ্ছলতাও দেখা দিচ্ছে, গ্রামীণ নারী-পুরুষের পাশাপাশি শিক্ষিত তরুণরা গড়ে তুলছেন ভেড়ার খামার। এতে দূর হচ্ছে একদিকে বেকারত্ব, অপরদিকে স্বাবলম্বী হয়ে ওঠার পথ খুলে গেছে। সঙ্গে অর্থনৈতিক উন্নতিও হচ্ছে প্রসারিত। বর্তমানের বাস্তবতা হচ্ছে বাণিজ্যিকভাবে ভেড়া পালনের সার্বিক সুযোগ এখনও রয়েছে এদেশে। ভেড়ার খামার গড়ে তোলা মানেই কর্মসংস্থান এবং আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার এক সুবর্ণ সুযোগ হাতের মুঠোয় নিয়ে আসা। গরু-ছাগল পালনের পাশাপাশি এখন ভেড়া পালনে নানারকম তৎপরতা চালানো হচ্ছে। কত কম খরচে ভেড়ার বিস্তার ঘটানো যায় তার চর্চাও অব্যাহত রয়েছে। তাই বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠছে ভেড়ার খামার। প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মতে, দিন দিন এই খামারের প্রতি মানুষকে আগ্রহী করে তুলছেন তারা। প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। লাভজনক হিসেবে মানুষ তাতে এগিয়ে আসছেন। দেশের উত্তর, দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ব্যাপকভাবে খামার প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। তুলনামূলক কম পুঁজিতে গড়ে তোলা ২০ থেকে ৩০টি ভেড়ার একটি খামারে বছরে আয় ৫০ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত হচ্ছে। ভেড়ার মাংস ও পশমের চাহিদা বহির্বিশ্বে বেশি থাকায় তা রফতানির নতুন দিগন্তও উন্মোচিত হতে যাচ্ছে। সারাদেশে এখন তিন হাজার ছয় শ’ বত্রিশটি ভেড়ার নিবন্ধিত খামার রয়েছে। এর বাইরেও অনেকে অল্প পরিসরে ২-৪টি বা ১০-১২টি করে ভেড়া লালন-পালন করছেন। দেশের প্রাণিজ আমিষের উৎপাদন এবং জাতীয় অর্থনীতিতে অবদানের কথা বিবেচনা করে সরকারীভাবে ৩১ কোটি ৭৩ লাখ টাকা ব্যয়ে সমাজভিত্তিক ও বাণিজ্যিক খামারে দেশী ভেড়ার উন্নয়ন ও সংরক্ষণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ২০১২ সালের জুলাই মাসে শুরু হওয়া এই প্রকল্পটি চলতি বছরের ৩০ জুন শেষ হচ্ছে। ইতোমধ্যে দেশে তিনটি ডেমনেস্ট্রেশন খামার স্থাপন করা হয়েছে। এই খামারের মাধ্যমে উৎপাদিত বাড়ন্ত ভেড়ি ও পাঁঠা খামারিদের মধ্যে নির্ধারিত সরকারী মূল্যে বিতরণ করা হবে। এভাবে খামারিদের মধ্যে বিতরণ করা হলে মানুষের উৎসাহ বাড়বে ভেড়া উৎপাদনে। ৬৪ জেলার ৪৮০ উপজেলায় এই প্রকল্প বাস্তবায়নে নানামুখী তৎপরতা স্বল্প পুঁজির উদ্যোক্তাদের অনেকেই লাভের মুখ দেখছেন। একটি ভেড়ি বছরে দুইবার এবং প্রতিবারে ২ থেকে ৩টি বাচ্চা প্রসব করে। ছাগলের চেয়ে এদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি এবং বাচ্চার মৃত্যুর হারও অত্যন্ত কম। এরা কষ্ট সহিষ্ণুও। জাতীয় আয় ও সংখ্যার দিক থেকে দেশে প্রাণিসম্পদের মধ্যে ভেড়ার স্থান চতুর্থ। প্রতিকূল পরিবেশে শুকনা খড় এবং শস্যের অবশিষ্টাংশ খেয়েও জীবনধারণ করে থাকে। গরু যে ঘাস খেয়ে যায় পেছন পেছন উচ্ছিষ্ট ঘাস খায় ভেড়া। বাড়তি খাবার প্রয়োজন হয় না। দেশে বর্তমানে ভেড়ার সংখ্যা প্রায় ৩৬ লাখ। ভেড়ার মাংস খাদ্য তালিকায় উঠে এলে গরু ও ছাগলের মাংসের ওপর চাপ কমে আসবে। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে আয় বাড়বে। সুতরাং ভেড়ার খামার গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজন আরও প্রচার ও পুঁজি বিনিয়োগ। কোনভাবেই বিষয়টি অবহেলার নয়। বরং অগ্রগতির এক উপকরণ বলা যায়।
×