ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ফাইনালে হারের এ অভিজ্ঞতা আগামীতে কাজে লাগাতে চান মুশফিক

আক্ষেপ নিয়েই দেশে ফিরল বাংলাদেশ দল

প্রকাশিত: ০৬:২৯, ২০ মার্চ ২০১৮

আক্ষেপ নিয়েই দেশে ফিরল বাংলাদেশ দল

মোঃ মামুন রশীদ ॥ এবার নিদাহাস ট্রফিতে বাংলাদেশ দলকে নিয়ে খুব বেশি প্রত্যাশা ছিল না। কারণ ঘরের মাটিতে শ্রীলঙ্কার কাছে সবগুলো সিরিজে বাজে হার। আর নিদাহাস ট্রফিতে প্রতিপক্ষ হিসেবে এবার স্বাগতিক ছিল লঙ্কানরা এবং সঙ্গে ফর্মের তুঙ্গে থাকা ভারতীয় দল। কিন্তু অবিশ্বাস্য দুটি জয় ছিনিয়ে এনেছিলেন মুশফিকুর রহীম ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। সেজন্যই তাই আরেকবার কোন বৈশ্বিক ক্রিকেট প্রতিযোগিতার ফাইনালে উঠতে পেরেছে বাংলাদেশ দল। কিন্তু আগের খেলা চারটি ফাইনালের মতোই ভাগ্য পরিবর্তন হয়নি, শিরোপা হাতছাড়া হয়েছে নাটকীয়তায় ভরপুর এক ম্যাচে হারের মাধ্যমে। কিন্তু এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে পরবর্তী যেকোন ফাইনালে শিরোপা জেতার প্রত্যয় ব্যক্ত করলেন মুশফিক। সোমবার সকালে শ্রীলঙ্কা থেকে দেশে ফিরেছে বাংলাদেশ দল। বিমানবন্দরে নেমে সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সময় এ প্রত্যয় জানান মুশফিক। ২০০৯ সালে প্রথমবার কোন বৈশ্বিক আসরের ফাইনালে উঠেছিল বাংলাদেশ দল। সেবার ঘরের মাটিতে আয়োজিত ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্টের ফাইনালে শ্রীলঙ্কার কাছে জিততে জিততেও ২ উইকেটে হেরে যায় দল। এরপর ২০১২ সালে এশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে মাত্র ২ রানে হেরে স্বপ্নভঙ্গ হয়। ২০১৬ সালে টি২০ এশিয়া কাপের ফাইনালেও বাংলাদেশ দল হেরে যায় ভারতের কাছে। এবার দেশের মাটিতে জানুয়ারিতে আবার শ্রীলঙ্কার কাছে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে হেরে শিরোপা হাতছাড়া। কোনভাবেই যেন ফাইনাল জুজু পিছু ছাড়ছে না বাংলাদেশ দলের। সর্বশেষ রবিবার শেষ হওয়া শ্রীলঙ্কার মাটিতে হওয়া ত্রিদেশীয় টি২০ আসর নিদাহাস ট্রফিতে শেষ বলে প্রতিপক্ষের ছক্কা চ্যাম্পিয়ন হতে দেয়নি বাংলাদেশকে। এটি ছিল বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশ দলের প্রথম ফাইনাল। বেদনায় মলিন হয়েছে টাইগার টিম। এমনকি পুরো দেশ শিউরে উঠেছে যন্ত্রণায়। দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে দেশে ফিরেছে বাংলাদেশ দল সোমবার সকালেই। দলকে ফাইনালে তোলার পেছনে ৩৫ বলে ৭২ রানের একটি ম্যাচজয়ী ইনিংস বাংলাদেশকে দিয়েছিল নিদাহাস ট্রফিতে প্রথম জয়। সেই মুশফিক বললেন,‘খারাপ লাগাই তো স্বাভাবিক। জয়ের এত কাছে এসে ট্রফি হাতছাড়া হওয়াটা ভয়াবহ রকমের মানসিক যন্ত্রণার। তবে আগামীতে এমন পরিস্থিতি এলে আমরা যেন মানসিক স্থিতিটা শক্ত রাখতে পারি, এটাই লক্ষ্য থাকবে। এবার ফাইনালে হারার কষ্টটা মনে রাখব, এখান থেকে যেন আমরা সামনে এগিয়ে যেতে পারি সে চেষ্টাই করব।’ শেষ ওভারে ভারতের প্রয়োজন ছিল ১২ রানের। আর সেই রানটা আটকানোর দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে বল হাতে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়েছেন অনিয়মিত বোলার সৌম্য সরকার। প্রথম ৫ বলে ৭ রান দিয়ে ১ উইকেট তুলে নিয়ে প্রায় শিরোপার গন্ধ পেতেই শুরু করেছিল টাইগাররা। কিন্তু শেষ বলে দিনেশ কার্তিকের দুর্দান্ত ছয়ে হারতেই হয়েছে। কিন্তু সৌম্যকে দোষটা দিতে চান না মুশফিক। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটা শুধু একজনের জন্য হয়েছে, এটা আমি মনে করি না। বোলাররা মিলে কয়েকটা রান কম দিলেই হয়ে যেত কিংবা ব্যাটসম্যানরা যদি আরও ১০টা রান বেশি করত তাহলেও সমস্যা হতো না। এটা দলগত খেলা। একজনের ব্যর্থতা মানে সবারই ব্যর্থতা। আমরা চেষ্টা করব ভুলগুলো কাটিয়ে উঠতে। সৌম্যর এটাই প্রথম অভিজ্ঞতা। পরে আবার যখন সুযোগ আসবে, আশাকরি তখন এরচেয়ে ভাল করবে।’ একেবারে জয়ের দ্বারপ্রান্তে গিয়ে হারের এমন ঘটনা এ নিয়ে কয়েকবারই দেখা গেল। এবারও ভারতকে হারানোর সুযোগ হাতছাড়া হওয়াতে বেশ হতাশই মুশফিক, ‘আমাদের সুযোগ ছিল, কিন্তু হাতছাড়া করেছি। ভারতকে হারানোর সুযোগ বারবার আসে না। এই টুর্নামেন্টে দুবার সুযোগ পেয়েছিলাম। কিন্তু হাতছাড়া করলাম। ভবিষ্যতে সুযোগ পেলে কাজে লাগানোর আপ্রাণ চেষ্টা করব।’ এক অমানিশার মধ্যে ডুবে গিয়েছিল বাংলাদেশ দল। বিশেষ করে গত বছর অক্টোবরে দক্ষিণ আফ্রিকা সফর খুব বাজেভাবে শেষ করার পর আবার দেশে ফিরে ত্রিদেশীয় সিরিজ, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট ও টি২০ সিরিজ খুব খারাপভাবে হারের পর চরম দুর্দশায় পতিত হয়েছিল দল। কিন্তু নিদাহাস ট্রফিতে সেই পরিস্থিতি থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছে টাইগাররা। দুটি ম্যাচ জিতেছে আর তিনটি ম্যাচ হেরেছে। যে ম্যাচগুলোতে পরাজয় এসেছে সে ম্যাচেও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ক্রিকেট উপহার দিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সন্তুষ্ট মুশফিক বলেন,‘এই কয়টা দিন আমরা যেভাবে ক্রিকেট খেলেছি, ম্যাচ জিতেছি। পুরো বাংলাদেশ দল কৃতিত্ব পাওয়ার যোগ্য। শ্রীলঙ্কার সঙ্গে হোম সিরিজে টি২০ সিরিজে যেভাবে হেরেছিলাম, এরপর ওদের মাটিতে এভাবে জেতা অনেক বড় প্রাপ্তি। পুরো সিরিজে আমরা ধারাবাহিক ক্রিকেট খেলেছি। যেটা আগে করতে পারিনি। এটাই আমাদের এগিয়ে নিয়ে যাবে। আমার বিশ্বাস, এই টুর্নামেন্টের পর ২০ ওভারের ক্রিকেটেও জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী হব আমরা।’ ঘরের মাটিতে শ্রীলঙ্কার কাছে হারের চরম প্রতিশোধ এবার তাদের মাটিতেই নিতে পেরেছে বাংলাদেশ। কিন্তু ভারতের বিপক্ষে পুরনো আক্ষেপটাই থেকে গেছে। তিন ম্যাচেই তাদের কাছে পরাজিত হয়েছে দল। কিন্তু লঙ্কানদের বিপক্ষে এমন শোধ নিতে পারাটা দলের সবার জন্যই সন্তুষ্টির। এ বিষয়ে মুশফিক বলেন,‘যখন আপনি ক্রিকেট মাঠে খেলবেন, সবাই সবার প্রতিপক্ষ। যেহেতু শ্রীলঙ্কাদেশের মাটিতে আমাদের হারিয়ে গেছে, আমাদের মধ্যে অন্যরকম একটা চ্যালেঞ্জ ছিল। আমরা যেন ওদের মাটিতে ওদের হারাতে পারি।সেটা করতে পেরে খুব ভাল লাগছে।’
×