ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পায়রা সমুদ্রবন্দর নির্মাণে ব্যয় বাড়ছে তিনগুণ

প্রকাশিত: ০৬:৪৪, ২০ মার্চ ২০১৮

পায়রা সমুদ্রবন্দর নির্মাণে ব্যয় বাড়ছে তিনগুণ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ পায়রা সমুদ্রবন্দর নির্মাণ প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে তিনগুণ হচ্ছে। আগে প্রকল্পটির মূল ব্যয় ছিল ১ হাজার ১২৮ কোটি ৪৩ লাখ টাকা, সেখান থেকে ২ হাজার ২২২ কোটি ৭ লাখ টাকা বাড়িয়ে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৩৫০ কোটি ৫১ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় বাড়ছে ১৯৬ দশমিক ৯২ শতাংশ। শুধু তাই নয় ব্যয় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রকল্পটির মেয়াদও দুই বছর বাড়ছে। ২০১৩ সালের নবেম্বরে শুরু হওয়া প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৮ সালের জুনে। সাড়ে চার বছরে প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা থাকলেও মেয়াদ বাড়ায় এখন সেটি শেষ হবে সাড়ে ছয় বছরে। ব্যয় ও মেয়াদ বাড়ানোর পেছনে পাঁচটি কারণের কথা জানিয়েছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় বলছে, জমির মূল্যের সঙ্গে ঘরবাড়ি-দালানের দাম, গাছপালার দাম, পুকুর খনন, মৎস্য ও মালিকের উপার্জনের ক্ষতিপূরণ বাবদ ও অন্যান্য ব্যয় বাড়ছে। যা আগের দাম উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে (ডিপিপি) যোগ করা হয়নি। এছাড়া মূল ডিপিপি তৈরির সময় শুধু মৌজা রেইট এর ভিত্তিতে জমির ক্ষতিপূরণ ধরা হয়। যা বর্তমানে কয়েকগুণ বেড়েছে। বাড়তি এই ব্যয়গুলো পুনর্গঠিত আরডিপিপিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ব্যয় ও মেয়াদ বাড়ার বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য জুয়েনা আজিজ বলেন, পায়রা দেশের দীর্ঘ প্রতীক্ষিত একমাত্র গভীর সমুদ্রবন্দর। এটি অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এর সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হলে বন্দরটি দেশের অভ্যন্তরে এবং উপ-আঞ্চলিক আমদানি-রফতানি বাণিজ্য প্রসারে ভূমিকা রাখবে। ফলে মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতি হবে। তিনি জানান, অবকাঠামো সুবিধা বাড়াতে প্রকল্পের সংশোধনী প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে এসেছে। মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এটি উপস্থাপন করা হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপার্সন শেখ হাসিনা। পায়রা বন্দর ও এর আশপাশের এলাকায় ভূমি অধিগ্রহণ ও আনুষঙ্গিক উন্নয়ন কার্যক্রম পর্যালোচনা সভা ২০১৭ সালের ৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মুখ্য সমন্বয়ক (এসডিজি বিষয়ক) আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। সভার সিদ্ধান্তে ক্ষতিগ্রস্তদের পেশাগত দক্ষতা বাড়ানোর জন্য ২৫ কোটি টাকা থোক বরাদ্দ অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সংশোধনী প্রস্তাব পর্যালোচনা করে প্রতিটি কম্পোনেন্ট এর বিস্তারিত ড্রইং, ডিজাইন ও পরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়াও ডিপিপিভুক্ত কাজগুলোর ডিজাইন ড্রইং প্রাক্কলনসহ টেন্ডার ডকুমেন্ট প্রস্তুত এবং নির্মাণ কাজ দেখাশোনার জন্য পায়রা সমুদ্রবন্দরের প্রয়োজনীয় জনবল না থাকায় পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করা প্রয়োজন। মূল ডিপিপিতে ৫ দশমিক ৬০ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণের জন্য ২৫৪ কোটি ৮৫ লাখ টাকা করা হয়। পরবর্তীতে বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে এ রাস্তা নির্মাণের জন্য নিয়োগ করা হয়। বিভিন্ন কারণে রাস্তার এলাইমেন্ট পরিবর্তন করার ফলে রাস্তার দৈর্ঘ্য ৪ দশমিক ৯০ কিলোমিটার হয়। ২০১৩ সালের ৫ নবেম্বর জাতীয় সংসদে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ এ্যাক্ট অনুমোদিত হয়। তৃতীয় এ সমুদ্রবন্দরটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৩ সালের ১৯ নবেম্বর উদ্বোধন করেন। বর্তমানে ১৬ একর জায়গার ওপর সীমিত ভৌত অবকাঠামোগত সুবিধাদি যেমন, পল্টুন, ক্রেইন, নিরাপত্তা ভবন, অভ্যন্তরীণ রাস্তা ইত্যাদি উন্নয়নের মাধ্যমে একটি বন্দর টার্মিনাল তৈরি করা হলেও এখনও পণ্য ওঠানামা খালাস করা হচ্ছে না। তবে পূর্ণাঙ্গ পায়রা বন্দর ব্যবস্থা গড়ে উঠা না পর্যন্ত বহিঃর্নোঙ্গরে বাণিজ্যিক জাহাজ আনয়নের মাধ্যমে ২০১৫ সালের ডিসেম্বর থেকে পণ্য খালাসের কার্যক্রম নেয়া হয়েছে। পায়রা সমুদ্র বন্দর প্রকল্পটি পুরো উদ্যোমে চালু করা এবং আমদানি-রফতানি পণ্যেও অবাধ পরিবহনের জন্য একটি প্রশাসনিক ভবন, একটি ওয়্যার হাউস নির্মাণসহ পাইলট বোট, টাগ বোট, বয়া লেইয়িং ভেসেল, সার্ভে বোট এবং নিরাপত্তা যন্ত্রসামগ্রী সংগ্রহ করা হবে। এছাড়া বন্দরের টার্মিনাল থেকে বরিশাল-পটুয়াখালী-কুয়াকাটা জাতীয় মহাসড়ক পর্যন্ত ৪ দশমিক ৯০ কিলোমিটার চার লেন সড়ক নির্মাণ প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। গত ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত ফাস্ট ট্রাক প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রকল্পটির আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৫৩ দশমিক ৪১ শতাংশ। এ সময়ে ব্যয় হয়েছে ৬০২ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। প্রকল্পটির অবকাঠামোগত অগ্রগতি হয়েছে ৪৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ।
×