ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

তেলবিহীন খাবারের ভূমিকা

প্রকাশিত: ০৭:০৫, ২০ মার্চ ২০১৮

তেলবিহীন খাবারের ভূমিকা

জনাব হোসেন, ৫৫ বছর বয়স, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও রক্তে উচ্চ মাত্রায় কোলেস্টরেল রোগে ভুগছেন গত ৬-৭ বছর ধরে। তিনি ৯ বছর ধরে ধূমপান করেন। গত ৩ মাস ধরে উনি পরিশ্রম করলে বা সিড়ি দিয়ে উঠার সময় বুকে চাপ অনুভব করেন। উনার ইসিজি ও ইকো রিপোর্ট স্বাভাবিক, কিন্তু ইটিটি ঝঃধমব-ওও তে পজিটিভ, অর্থাৎ উনার হৃদযন্ত্রের রক্তনালীতে ব্লক থাকার সম্ভাবনা বেশি। উনার এনজিওগ্রাম করার পরামর্শ দেয়া হলো। এনজিওগ্রামে উনার হৃৎপি-ের রক্তনালী জঈঅ তে ৭৫% ব্লক। উনার ব্লকের চিকিৎসার জন্য রিং বসাতে বলা হলো। উনার রিং বসানোর প্রস্তুতি নেই। উনি ওষুধ চিকিৎসা ও অন্যান্য চিকিৎসার ব্যাপারে জানতে চাইলেন। রোগী : হৃৎপি-ে ব্লক দূর করার জন্য রিং চিকিৎসা কতটুকু কার্যকর? ডাঃ মোঃ তৌফিকুর রহমান : হৃৎপিণ্ডে ব্লক দূর করার জন্য রিং চিকিৎসা ১০০ ভাগ কার্যকর। হৃৎপিণ্ডের রক্তনালীতে ব্লক হলে সাধারণত প্রথমে বেলুন দিয়ে ব্লক ফুলিয়ে পরে ওইখানে রিং বসিয়ে দেয়া হয় এবং সাধারণত এক্ষেত্রে ১০০ ভাগ ব্লক দূর হয়। রোগী : ব্লক দূর করার জন্য আর কি কি চিকিৎসা আছে? ডাঃ মোঃ তৌফিকুর রহমান : ব্লক দূর করার জন্য এনজিওপ্লাস্টি, লেসার চিকিৎসা রোটারেশন এবং এমনকি কোন কোন ক্ষেত্রে স্ট্যাটিন জাতীয় ওষুধও কার্যকরী। রোগী : ব্লক ৭০ ভাগের কম হলে কি কি চিকিৎসা আছে? ডাঃ মোঃ তৌফিকুর রহমান : ব্লক ৭০ ভাগের কম হলে আমরা রিং চিকিৎসা বা বাইপাশ চিকিৎসা বা এনজিওপ্লাস্টি চিকিৎসা করি না, সাধারণত সেক্ষেত্রে ওষুধের মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়। রোগী : ওষুধ চিকিৎসার সফলতা কতখানি? ডাঃ মোঃ তৌফিকুর রহমান : ব্লক ৭০ ভাগের কম হলে এবং ওষুধ চিকিৎসা করলে, দেখা যায় আস্তে আস্তে ব্লকের পরিমাণ ও মাত্রা কমতে থাকে। রোগী : ওষুধে কি ব্লক দূর হয়? ডাঃ মোঃ তৌফিকুর রহমান : ওষুধে ব্লক ১০০ ভাগ দূর না হলেও নিয়মিত ওষুধ খেলে বুকে ব্যথা কমার পাশাপাশি ব্লকের মাত্রা ও পরিমাণ কমতে থাকে। রোগী : ব্লক দূর করার জন্য খাবারের ভূমিকা কি কি? ডাঃ মোঃ তৌফিকুর রহমান : ব্লক দূর করার জন্য খাবারের ভূমিকা তেমন নেই। রক্তে চর্বির মাত্রা বেশি থাকলে যদিও ব্লক হওয়ার ঝুঁকি বেশি তথাপি খাবারে চর্বির পরিমাণ রক্তের চর্বির মাত্রাকে মাত্র ১০ ভাগ নিয়ন্ত্রণ করে। বাকি ৯০ ভাগ চর্বি শরীরে লিভারে ও অন্যান্য অঙ্গে বেশি পরিমাণ তৈরি হয় ফলে রক্তে চর্বির মাত্রা বাড়ে। এ কারণে ব্লকের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে খাবারের চর্বির মাত্রার চেয়ে ওষুধের ভূমিকা অনেক। রোগী : চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া কি একদম নিষেধ? ডাঃ মোঃ তৌফিকুর রহমান : চর্বিযুক্ত খাবার কম খাওয়া উচিত বিশেষ করে সম্পৃক্ত চর্বি জাতীয় খাবার যা সাধারণত প্রাণীজ জাতি খাবারে বেশি থাকে, তাছাড়া উদ্ভিদ জাত বিশেষ করে পাম তেল ও নারিকেল তেল বর্জনীয় কারণ তাতে বেশি পরিমাণে সম্পৃক্ত চর্বি থাকে। কিন্তু মাছের তেল বিশেষত সামুদ্রিক মাছের তেল ও উদ্ভিজ তেল যেমন সানফ্লাওয়ার ওয়েল , স্যাপ্লাওয়ার ওয়েল, সংবিলা ওয়েল এ প্রচুর পরিমাণে অসম্পৃক্ত চর্বি থাকে ফলে ওমেগা- ৩ ফ্যাট এসিড বেশি থাকে যা হৃদরোগ প্রতিরোধ করে। তাই তেল বা চর্বিযুক্ত খাবার একদম পুরোপুরি বাদ দেয়া ঠিন নয়। তাছাড়া কিছু ভিটামিন যেমন ভিটামিন এ, ডি, ই, কে যা শুধুমাত্র চর্বির মাধ্যমেই শরীরে প্রবেশ করে। ফলে একদম তেলছাড়া বা চর্বিছাড়া খাবার খেলে শরীরে ওই সমস্ত ভিটামিনের অভাব দেখা দেয়, ফলে অপ্রয়োজনীয় জটিলতা বাড়ে। রোগী : চর্বিযুক্ত খাবার একদম বন্ধ করলে কি কোন অসুবিধা আছে? ডাঃ মোঃ তৌফিকুর রহমান : খাবারে চর্বি ও তেল সম্পূর্ণ বন্ধ করলে খাবারের স্বাদ কমে যায়, খাবারের পরিমাণ কম গ্রহণ করলে অপুষ্টি দেখা দেয় তখন অন্য গুরুত্বপূর্ণ খাবারের উপাদানের অভাব হতে পারে। তাছাড়া যেহেতু কিছু ভিটামিন যেমন ভিটামিন এ, ডি, ই কে শুধুমাত্র চর্বিতে দ্রবনীয় অর্থাৎ শুধুমাত্র চর্বির মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে। সুতরাং এ ভিটামিনগুলোর অভাব দেখা দিতে পারে। তাই দেখা যায় রোগী রাতকানা রোগ, অস্টিওপেরোসিস ও হাড়ে ক্যালসিয়াম কমে হাড় দুর্বল হওয়া ও সহজে ভেঙ্গে পড়া, যৌন দুর্বলতাসহ চামড়ায় রক্তক্ষরণ হতে পারে। লেখক : অধ্যাপক- কার্ডিওলজী, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ঢাকা মোবাইল : ০১৭১৫০২৪৯৯৪, ০১৭৭৭৭৫১২৫১
×