ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

নবম-দশম শ্রেণির পড়াশোনা

প্রকাশিত: ০৭:২৮, ২০ মার্চ ২০১৮

নবম-দশম শ্রেণির পড়াশোনা

M.Sc. (First Class 1st), B.Sc. (First Class 9th) Achieved: Best Teacher Award, Lecturer in Zoology, Arambagh High School & College, Arambagh, Motijheel, Dhaka -1000. চতুর্থ অধ্যায়: জীবনীশক্তি সুপ্রিয় শিক্ষার্থীবৃন্দ, প্রীতি ও শুভেচ্ছা রইল। ইতোপূর্বে তোমরা জীবনীশক্তি, জীবনীশক্তিতে অঞচ এর ভূমিকা, সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া, ঈ৩ গতিপথ বা ক্যালাভিন চক্র ও ঈ৪ গতিপথ বা হ্যাচ ও স্ল্যাক চক্র সম্পর্কে জেনেছো। আজকের আলোচনা: সালোকসংশ্লেষণের প্রভাবসমূহ ও এর গুরুত্ব সালোকসংশ্লেষণের প্রভাবকসমূহ : সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া কতগুলো প্রভাবক দ্বারা প্রভাবিত হয়। প্রভাবকগুলো কিছু বাহ্যিক ও কিছু অভ্যন্তরীণ। প্রভাবকের উপস্থিতি, অনুপস্থিতি, পরিমাণের কম-বেশি সালোকসংশ্লেষণের পরিমাণও কম-বেশি থাকে। প্রভাবকগুলো নি¤œরূপ : ক. বাহ্যিক প্রভাবকসমূহ: আলো, কার্বন ডাই-অক্সাইড, তাপমাত্রা, পানি, অক্সিজেন, খনিজ পদার্থ ও রাসায়নিক পর্দাথ প্রভৃতি। খ. অভ্যন্তরীণ প্রভাবকসমূহ: ক্লোরোফিল, শর্করার পরিমাণ, পটাসিয়াম, এনজাইম প্রভৃতি খ. সালোকসংশ্লেষণের অভ্যন্তরীণ প্রভাবকসমূহ: ক্লোরোফিল: পাতার ক্লোরোফিলের পরিমাণের সাথে সালোকসংশ্লেষণের হারের সরাসরি সম্পর্ক বিদ্যমান। কারণ একমাত্র ক্লোরেফিলই আলোকশক্তি গ্রহণ করতে সক্ষম। আমরা জানি, পুরাতন ক্লোরোপ্লাস্ট নষ্ট হয়ে যায় এবং নতুন ক্লোরোপ্লাস্ট সংশ্লেষিত হয়। নতুন ক্লোরোপ্লাস্ট এবং ক্লোরোপ্লাস্টের উপাদান সৃষ্টির হারের উপর সালোকসংশ্লেষণের হার নির্ভরশীল। সালোকসংশ্লেষণ ক্ষমতা রক্ষা করার জন্য ক্লোরোপ্লাস্টের বিভিন্ন উপাদান দ্রুত ও প্রচুর পরিমাণে পুনঃগঠিত হওয়া প্রয়োজন। তবে কোষে খুব বেশি পরিমাণ ক্লোরোফিল থাকলে এনজাইমের অভাব দেখা দেয় এবং সালোকসংশ্লেষণ হ্রাস পায়। পাতার বয়স ও সংখ্যা: একেবারে কচি পাতা এবং একেবারে বয়স্ক পাতায় ক্লোরিাফিলের পরিমাণ কম থাকে বলে সালোকসংশ্লেষণ কম হয়। বয়স বাড়ার সাথে সাথে ক্লোরোপ্লাস্টের সংখ্যাও বেশি হয়। মধ্রবয়সী পাতায় সবচেয়ে বেশি সালোকসংশ্লেষণ ঘটে। পাতার সংখ্যা বেশি হলে সালোকসংশ্লেষণ বেশি হয়। শর্করা (ঈ৬ঐ১২ঙ৬) এর পরিমাণ : সালোকসংশ্লেষন চলাকালীন সময়ে শর্করার পরিবহন কম হলে তা সেখানে জমা হয়ে থাকে। বিকেলে পাতায় বেশি শর্করা জমা হয় বলে সালোকসংশ্লেষণের গতি মন্থর হয়। পটাসিয়াম (ক): পটাসিয়ামের অভাবে সারোকসংশ্লেষণের পমিাণ বেশ কমে যেতে দেখা যায়। কারণ, সম্ভবত এ প্রক্রিয়ায় পটাসিয়াম অনুঘটক হিসেবে কাজ করে। এনজাইম: সালোকসংশ্লেষণের জন্য প্রচুর সংখ্যক এনজাইমের প্রয়োজন হয়। যেমন: কার্বোক্সিলেজ, ডিকার্বোক্্িরলেজ প্রভৃতি। জীবজগতে সালোকসংশ্লেষণের গুরুত্ব : সালোকসংশ্লেষণে বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জৈব রাসায়নিক বিক্রিয়া। এ বিক্রিয়ার মাধ্যমেই সূর্যালোক ও জীবনের মধ্যে সেতুবন্ধন সৃষ্টি হয়েছে। নিচের সংক্ষিপ্ত আলোচনা থেকে সালোকসংশ্লেষণের গুরুত্ব উপলব্ধি করা যাবে: বিশ্বজুড়ে এ বিক্রিয়ার ব্যাপকতা লক্ষ করে কোনো কোনো বিজ্ঞানী এ প্রক্রিয়াকে জৈব রাসায়নিক কারখানা নামে অভিহিত করেছেন। সমস্ত শক্তির উৎস হলো সূর্য। একমাত্র সবুজ উদ্ভিদই সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় সৌরশক্তিকে রাসায়নিক শক্তিতে পরিণত করে খাদ্যের মধ্যে আবদ্ধ করতে পারে। কোনো প্রাণীই তার নিজের খাদ্য প্রস্ততি করতে পারে না। আমরা খাদ্য হিসেবে ভাত, রুটি, ফলমুল, মাছ, মাংস, দুধ, ডিম ইত্যাদি যাই গ্রহণ করি না কেন, তার সবই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সবুজ উদ্ভিদ এ খাদ্য প্রস্তুত করে সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায়। কাজেই বলা যায়, পৃথিবীর সকল উদ্ভিদ ও প্রাণীর খাদ্য প্রস্তুত হয় সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায়। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায়, বিশেষ করে ঈঙ২ ও ঈঙ২ এর সঠিক অনুপাত রক্ষায় সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া এক বিশেষ ভূমিক পালন করে থাকে। বায়ুতে অক্সিজেন গ্যাসের পরিমাণ ২০.৯৫ ভাগ এবং ঈঙ২ গ্যাসের পরিমাণ ০.১৩৩ ভাগ। পৃথিবীর উদ্ভিদ ও প্রাণীর স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও জীবনযাপনের জন্য বায়ুতে এ দুটি গ্যাসের পরিমাণ স্বাভাবিক পর্যায়ে থাকতে হয়। এ পরিমাণের তারতম্য ঘটলে বায়ুমন্ডল জীবজগতের জন্য ক্ষতিকর হয়ে উঠবে। আমরা জানি সব জীবেই (উদ্ভিদ ও প্রাণী) সব সময়ের জন্য শ্বসনক্রিয়া চলতে থাকে। শ্বসন প্রক্রিয়ায় জীব ঙ২ গ্রহণ করে এবং ঈঙ২ ত্যাগ করে। কেবল মাত্র শ্বসন প্রক্রিয়া চলতে থাকলে বায়ুমন্ডলে ঙ২ গ্যাসের স্বল্পতা এবং ঈঙ২ গ্যাসের আধিক্য দেখা দিত। কিন্তু সবুজ উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় বায়ুমন্ডল থেকে ঈঙ২ গ্রহণ করে এবং ঙ২ বায়ুমন্ডলে ত্যাগ করে বলে এখনও বায়ুমন্ডলে ঙ২ ও ঈঙ২ গ্যাসের সঠিক অনুপাত রক্ষিত হচ্ছে। তবে বর্তমানে অধিক হারে বন-জঙ্গল ধ্বংস করার ফলে বায়ুমন্ডলে এ দুটি গ্যাসের অনুপাত নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, কাজেই আমাদেরকে অবশ্যই অধিক হারে গাছপালা লাগাতে হবে। মানব সভ্যতার অগ্রগতি অনেকাংশে সালোকসংশ্লেষণের উপর প্রত্যক্ষ বা পরেক্ষভাবে নির্ভরশীল। অন্ন, বস্ত্র শিল্প সামগ্রী (যেমন নাইলন, রেয়ন, কাগজ, সেলুলোজ, কাঠ, রাবার), ঔষধ (যেমন কুইনাইন, মরফিন), জ্বালানি কয়লা, পেট্রোল, গ্যাস প্রভৃতি উদ্ভিদ থেকে পাওয়া যায়। তাই সালোকসংশ্লেষণ না ঘটলে ধ্বংস হবে মানব সভ্যতা, বিলুপ্ত হবে জীবজগত। সুতরাং সালোকসংশ্লেষণ জীবজগতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়া। পরবর্তীতে শ্বসন (Respiration) সম্পর্কে বিশদভাবে আলোচনা করা হবে।
×