ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

নিদাহাস ট্রফির অর্জন

প্রকাশিত: ০৪:০৩, ২১ মার্চ ২০১৮

নিদাহাস ট্রফির অর্জন

অতিসীমিত ওভারের ম্যাচ বা টি-টুয়েন্টিতে জয়-পরাজয় নির্ধারণ করতে যদি শেষ বলটি পর্যন্ত খেলতে হয় তাহলে এটা সহজেই অনুমানযোগ্য যে, খেলায় হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলেছে। এখানে দু’দলই সমানে সমান। শুধু ফল পেতে শেষ বলটির দিকে তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে। এ রকম একটি চূড়ান্ত নাটকীয় মুহূর্তে ব্যাটসম্যান চাইবেন সপাটে ব্যাট চালিয়ে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছতে, আর এর বিপরীতে বোলার চাইবেন কী করে ব্যাটসম্যানকে ঘায়েল করা যায়। ঘায়েল যদি নাও করা যায় অন্তত তাকে যেন ফাঁকি দেয়া যায়। বোলারের বেলায় ফুটবলের পেনাল্টি কিকের মতোই যেন ব্যাপারটা। সামনে দ-ায়মান প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়কে ঘুণাক্ষরে বুঝতে দেয়া যাবে না তিনি কীভাবে কোন্ গতিতে কী ধরনের বল ছুড়ে দিচ্ছেন। বাংলাদেশ ভারত ফাইনাল ম্যাচে যেহেতু শেষ বলে ছক্কা হলেই কেবল ভারত ট্রফি জিতে যায় তাই ছক্কা ঠেকানোই ছিল প্রথম বিবেচনা। এখানেই বাংলাদেশ দল পরাস্ত হয়েছে। আবার তার আগের ওভারে রুবেলের মতো অভিজ্ঞ খেলোয়াড় ২২ রান দিয়েছেন, এটা অবিশ্বাস্য! আগের তিন ওভারে তিনি রান দিয়েছিলেন মাত্র তের। তার পরও রান চেক দেয়ার কৌশল কাজে লাগানোর কী উদ্যোগ নেয়া হয়েছিলÑ এমন প্রশ্ন ওঠাটা অস্বাভাবিক নয়। পাঁচ পাঁচবারের মতো বিভিন্ন টুর্নামেন্টের ফাইনালে খেলেও শেষ পর্যন্ত হেরে যাওয়ার ধারাবাহিকতা থেকে বাংলাদেশ কেন বেরুতে পারছে না, সেটি নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করতে হবে সবার আগে। তবু আমরা স্বীকার করায় কুণ্ঠিত নই যে, শেষ পর্যন্ত টাইগাররা হার না মানা এক লড়াকু চরিত্র বজায় রেখে, প্রতিপক্ষের ঘাম ঝরিয়ে তাদের ¯œায়ুর ওপর চাপ প্রয়োগ করে মানসম্পন্ন ক্রিকেটই উপহার দিয়েছে। নিদাহাস ট্রফির প্রথম থেকে না হোক, কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বাংলাদেশ দুর্দান্ত খেলেছে। ফাইনালের হারটিকেও আমরা জয়তুল্যই আখ্যা দিতে চাই। এই টুর্নামেন্ট থেকে যেমন আমাদের বেশ কিছু ইতিবাচক অর্জন ঘটেছে, তেমনি কিছু কিছু ক্ষেত্রে দলের দুর্বলতাগুলোও সামনে চলে এসেছে। যেমন, প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়কে রান আউট করার জন্য উইকেটে বল ছোড়ার বেলায় আমাদের আরও উন্নতি সাধন করতে হবে। পার্টনার কী অবস্থায় আছে, রান নেয়ার কোন প্রস্তুতি তার আছে কি নেই, বল বিপজ্জনক সীমা অতিক্রম করেছে কিনাÑ এসব উইকেটের অপর প্রান্তে থাকা খেলোয়াড়কে অবশ্যই ভাবতে হবে। এতে পেশাদারিত্বের অভাব থাকলে তার অনিবার্য পরিণতি হলো পার্টনারশিপ ভেঙ্গে যাওয়া। যেমন ভেঙ্গে গেছে ঠিক আগের ম্যাচের নায়ক মাহমুদউল্লাহ এবং ফাইনালে সবচেয়ে বেশি রান করা সাব্বিরের জুটি। সাব্বিরের ভুলে রান আউট হয়ে সাজঘরে ফিরে যান মাহমুদউল্লাহ। এটাও ম্যাচের বাঁক পরিবর্তনের বিন্দু বা টার্নিং পয়েন্ট। তাছাড়া মুশফিকুর রহিম যখন চাহালের গুগলি ঠিকঠাক না পড়তে পেরে ক্যাচ তুলে দেন, তাতে নিদাহাস ট্রফিতে স্পিনারদের বিপক্ষে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের দুর্বলতা আরেকবার প্রকাশ পায়। স্পিনারদের বিপক্ষে বাংলাদেশকে রান তুলতে কতটা বেগ পেতে হয়েছে, ৫ ম্যাচে ৬.৮৯ ইকোনমি সেটিই বলছে। অথচ বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের বিপক্ষে পেসারদের ইকোনমি সেখানে ৯.৫৬। যাহোক, ক্রিকেট যে অনিশ্চয়তার খেলা সেটি বাংলাদেশের শেষ দুটি খেলা দেখে নিশ্চয়ই ক্রিকেটভক্তরা আবারও অনুধাবনে সক্ষম হবেন। আমরা চাই, অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল আরও পরিণত ও দায়িত্বশীল হয়ে উঠুক। যাতে জয় মুঠোর মধ্যে এসেও কব্জির দুর্বলতায় ক্যাচের মতো ফসকে না যায়। দারুণ লড়াকু দল হিসেবে বাংলাদেশ যেন তার সুনাম বজায় রাখে।
×