ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

আম মুকুলের ম-ম গন্ধ, এবারও বাম্পার ফলনের আশা

প্রকাশিত: ০৬:০১, ২১ মার্চ ২০১৮

আম মুকুলের ম-ম গন্ধ, এবারও বাম্পার ফলনের আশা

ওয়াজেদ হীরা ॥ প্রকৃতির নিয়মে ঋতুরাজ বসন্তে ম ম গন্ধ ছড়াচ্ছে আমের মুকুল। গাছে গাছে মুকুলের সমারোহ। যেখানেই আম গাছ সেখানেই গন্ধ আর শোভা ছড়াচ্ছে মুকুল। অফিস পাড়া থেকে আম বাগান সর্বত্রই একই দৃশ্য। আর বাণিজ্যিকভাবে আম বাগান এলাকা যেন হলুদ বর্ণের এক আস্তর। ইতোমধ্যেই কোন কোন জায়গায় আম গুটি বাঁধতে শুরু করেছে। এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ইতোমধ্যেই আমের ভাল ফলন নিয়ে স্বপ্ন বুনছেন আম চাষিরা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরও আশা করছেন গত বছরের মতো এবারও আমের বাম্পার ফলন হবে। সারাদেশে উৎপাদিত নানা জাতের আম রাজধানীসহ পাওয়া যায় বিদেশেও। আর সেই নানা জাতের আম গাছ এখন মুকুলে ভরপুর। হাড়িভাঙ্গা, খিড়সাপাতি, মোহনা, রাজভোগ, রুপালি, আম্রপালি, ল্যাংড়া, গোপাল ভোগ, সূর্যাপুরী, আসিনিয়া, ছাতাপড়া, ফজলি, চিনি ফজলি, সুরমাই, মিশ্রিভোগসহ দেশি জাতের আমের মুকুলে ভরে গেছে দেশের নানা অঞ্চলের আম বাগানগুলো। বাদ যায়নি বসতবাড়ি আঙ্গিনার ছোট-বড় কিংবা মাঝারি আমগাছও। বিভিন্ন জেলায় আম চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এ বছর বড় ধরনের কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবং আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আমের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। আর আমের ভাল ফলন হলে বাগান মালিকরা যেমন লাভবান হন তেমনি সুলভ মূল্যে ক্রেতারাও আম কিনতে পান বলেও জানান আম চাষে সংশ্লিষ্টরা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের হর্টিকালচার উইংয়ের উপ পরিচালক কৃষিবিদ মোঃ আক্তারুজ্জামান জনকণ্ঠকে বলেন, গত ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে ১ লাখ ৭৪ হাজার ২০৮ হেক্টর জমিতে উৎপাদন হয়েছিল ২১ লাখ ৪৩ হাজার ৪৪৩ মেট্টিক টন আম। এখনো আবহাওয়া অনুকূলে আছে তাই এবছরও স্বাভাবিকভাবে আরও ফলন বাড়বে বলে আশা করছি। কৃষি সম্প্রসারণের বিভিন্ন জেলার একাধিক কর্মকর্তারাও আমের ভাল ফলনের বিষয়ে আশাবাদী। জানা গেছে, আম উৎপাদনে বিশে^ বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। আর মাত্র ৫ বছরের ব্যবধানে দেশে আমের উৎপাদন বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। চাঁপাইনবাবগঞ্জেই দেশের সবচেয়ে বেশি আম উৎপাদিত হয়। তবে একই সঙ্গে রাজশাহী, নওগাঁ ও নাটোরও আমের জন্য বিখ্যাত। মূলত রাজশাহী বিভাগের এই চার জেলা আমের সিংহভাগ যোগান দিয়ে থাকে। চাঁপাইয়ের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, এ বছর শীত বেশি হওয়ায় মুকুল আসতে একটু দেড়ি হয়। তবে দেড়িতে হলেও ইতোমধ্যেই মুকুল বের হয়েছে গাছে গাছে। আর কৃষকরাও বাগান নিয়ে বেশ ব্যস্ত সময় পাড় করছে। অধিক আম বাগান থাকায় এই অঞ্চলে রয়েছে নানা ধরনের কেমিক্যাল ও বালাইনাশক স্প্রের চাহিদা। এ বছর রাজশাহী ও চাঁপাইয়ে বিভিন্ন অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা প্রায় ২৫ কোটি টাকার বালাইনাশক ওষুধ মজুদ করেছেন বলেও জানা গেছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এবছর এই জেলায় দেড়িতে মুকুল এসেছে এটা সত্য তবে আমের ফলনে প্রভাব পড়বে না। এই মুহূর্তে মুকুলের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন জেলার আম চাষী ও বাগান মালিকরা। কৃষি অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, এবার চাঁপাইনবাবগঞ্জের ২৯ হাজার ৫১০ হেক্টর জমিতে আম চাষ হচ্ছে। গত বছরের তুলনায় আম চাষের জমি ৩ হাজার ৩৬০ হেক্টর বেশি। গত মৌসুমে আম উৎপাদন হয়েছিল দুই লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন। জানা গেছে, রাজশাহীতে প্রায় ১৭ হাজার হেক্টর জমিতে আম বাগান রয়েছে। প্রতি হেক্টর জমির বাগান থেকে ১০ থেকে ১২ মেট্রিক টন আম উৎপাদন হয়। সে হিসেবে প্রতি মৌসুমে কমপক্ষে এক লাখ ৭০ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদন হয়। কালবৈশাখির তান্ডব না হলে আমের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি হওয়ার আশা করছেন কর্মকর্তারাও। চাঁপাই ও রাজশাহীকে ছাড়িয়ে দিনাজপুর, রংপুর, পটুয়াখালী, ময়মংসিংহ, টাঙ্গাইলের খোঁজ নিয়ে জানা গেছে আম বাগানের মালিকরা বেশ ব্যস্ত এখন। বাগানের প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখাসহ মুকুল ধরে রাখতে নিচ্ছেন নানা উদ্যোগ।
×