ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ওয়াশিংটন ‘ভয়ঙ্কর’ সুন্দর!

প্রকাশিত: ০৬:৪০, ২১ মার্চ ২০১৮

ওয়াশিংটন ‘ভয়ঙ্কর’ সুন্দর!

ওয়াশিংটন সুন্দর। প্রথম শুনলে মনে হবে, আমেরিকার রাজধানী দর্শনে মুগ্ধ কোন বাঙালীর মুখ থেকে বেরিয়ে আসা বাক্য এটি। আসলে তা নয়। অদ্ভূত নামের অধিকারী একজন ভারতীয় ক্রিকেটার! শ্রীলঙ্কায় সদ্যসমাপ্ত নিদাহাস টি২০তে আলো ছাড়িয়ে যিনি তুলে নিয়েছেন টুর্নামেন্টসেরার পুরস্কার। বাংলাদেশকে হারিয়ে তার দল জিতেছে শিরোপা। ফাইনালসহ পাঁচ ম্যাচে ৮ শিকারের পথে ডানহাতি অফস্পিনারের বোলিং ২/২৮, ০/২৩, ২/২১, ৩/২২ ও ১/২০। ‘টুর্নামেন্টটা আমাদের জন্য একেবারে পারফেক্ট। তরুণ ক্রিকেটারদের পরিণত ক্রিকেট দেখে অবাক হলাম। এই বয়সে ওয়াশিংটন সুন্দর যে খেলাটা খেলল সেটায় পরিণতবোধ স্পষ্ট। দেখে কে বলবে, যে ওর বয়স মাত্র ১৮। আগামী দিনে এই সাফল্য আরও আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেবে। ওর মতো প্রতিভাবানরা ভারতকে এক সময় নিয়মিতই ম্যাচ জেতাবে।’ মন্তব্য আসরে ভারতের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক রোহিত শর্মার। আর উচ্ছ্বসিত ওয়াশিংটন বলেন, ‘সিরিজসেরার এই ট্রফিটা আমার কাছে অনেক কিছু। আমার বয়স ১৮ বছর। এই বয়সে এত বড় একটা ট্রফি আগামী দিনে ভাল খেলতে অনুপ্রেরণা যোগাবে। এখন আমি এই ট্রফি দেখব, আর বলব আরও ভাল খেলতে হবে। আমাকে আগামী দিনে আরও কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে। আর আমি সেটা নিতে প্রস্তুত। শ্রীলঙ্কার টুর্নামেন্টে বল করাটা খুব উপভোগ করেছি। কোচ, অধিনায়ক, সাপোর্ট স্টাফরা আমাকে খুব সাহায্য করেছেন। আমি সব সময় ব্যাটসম্যানের মাইন্ড রিড করে বল করেছি। বারবার ভেবেছি ব্যাটসম্যান কী ভাবছে। টুর্নামেন্টে পাঁচটা ম্যাচেই এই কাজটা করেছি। বেশিরভাগ বলেই সেটা সফল হয়েছি। এটাই সবচেয়ে ভাল লাগার। ফাইনালে দীনেশ ভাই দারুণ খেলে এই টুর্নামেন্টটা আরও স্মরণীয় করে দিয়েছেন।’ ২০১৭ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) রাইজিং পুনে সুপারজায়ান্টসের হয়ে আলোচনায় আসেন ১৭ বছর বয়সী স্পিনার। ওয়াশিংটন সুন্দরের নামকরণের রহস্য উদঘাটনে নামে স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম। মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের বিপক্ষে ৩ উইকেট নিয়ে পুনেকে ফাইনালে পৌঁছে দেয়ার পর তাঁকে নিয়ে আগ্রহের পারদটা চড়েছে বেশ। কেউ ধারণা করছিলেন হিন্দু এই স্পিনারের পরিবারের কোন কর্তাব্যক্তির প্রিয় শহর হয়তো ওয়াশিংটন। কেউ এক ধাপ এগিয়ে মা-বাবা দুজনের একজনকে বানিয়ে দিয়েছিলেন খ্রিস্টান! আসল রহস্যটা জানিয়েছেন সুন্দরের বাবা এম সুন্দরই। তিনি নিজে একসময় ছিলেন ক্রিকেটার। কিন্তু গরিব হওয়ায় ক্রিকেটের দামি সরঞ্জাম কিনতে যেমন হিমশিম খাচ্ছিলেন, তেমনি সমস্যায় পড়ছিলেন চেন্নাইয়ে নিজের বাড়ি থেকে দূরের মাঠে অনুশীলনে যেতেও। সে সময়ই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন সেনাবাহিনীর সাবেক এক কর্তা পি ডি ওয়াশিংটন। ১৯৯৯ সালে সেই ওয়াশিংটন মারা যাওয়ার বছরই জন্ম তাঁর একমাত্র ছেলের। কৃতজ্ঞতা থেকেই ছেলের নামের সঙ্গে ওয়াশিংটন জুড়ে দেয়ার কথা জানিয়েছেন বাবা, ‘আমি ভীষণ গরিব ঘরের ছেলে। বড় ক্রিকেটার হতে চেয়েও পারিনি। তবে আমাদের বাড়ির সামান্য দূরে থাকা পি ডি ওয়াশিংটন স্যার সাহায্য করেছিলেন ভীষণ। আমার ছেলের জন্মের সময় বেশ বিড়ম্বনা হয়েছিল। অনেকে বলছিল ছেলের নাম যেন কোন ভগবানের নামে রাখি। কিন্তু সেই বছর ওয়াশিংটন স্যার মারা যান। আমার জীবনে তিনি এসেছিলেন ভগবান হয়ে। তাই ছেলের নাম রাখি তাঁর সঙ্গে মিলিয়ে। যদি দ্বিতীয় ছেলে থাকত তাহলে ওর নামও রাখতাম ওয়াশিংটন জুনিয়র।’ ১৭ বছর বয়সে স্পিন জাদুতে আইপিএলে তারকাই হয়ে ওঠেন ওয়াশিংটন সুন্দর। ওদিকে অধিনায়ক বিরাট কোহলিসহ পাঁচ-ছয়জন তারকা ক্রিকেটারকে বিশ্রামে রেখে তরুণ একটা দল নিয়ে এই সাফল্যে যারপরনাই খুশি ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক রোহিত, ‘ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং তিনটি বিভাগেই আমরা ভাল খেলেছি। টুর্নামেন্টে প্রথম ম্যাচে হারের পর, পরপর চারটে ম্যাচ খেলে যেভাবে আমরা জিতলাম সেটার জন্য দরকার কতছিন চরিত্রের, কঠিন মানসিকতার। সেই কঠিন চরিত্র আর মানসিকতার ছাপটাই দীনেশ কার্তিকের আজকের ইনিংসটায় ফুটে উঠল। আর যেই হোক আমি অন্তত কার্তিকের ইনিংসটা দেখে একেবারে অবাক হইনি। আমি জানি কার্তিক হলো ফাইটার, এমন একটা মঞ্চে ওর জন্য একেবারে পারফেক্ট। শেষ বলে ছক্কা মারার পর মনে হয়েছিল এখানে আসার ঠিক পরে ও বলেছিল, টুর্নামেন্টেটা কঠিন হবে, তবে আমরা যদি কঠিন চরিত্রের পরিচয় দিতে পারি আমরা জিতব। ঠিক তেমনটাই ও করে দেখাল।’ ফাইনালে ছক্কা হাঁকিয়ে জয়ের নায়ক দীনেশ কার্তিককে নিয়ে অধিনায়ক আরও বলেন, ‘আমি সব সময় কার্তিককে ব্যাক করি। কারণ ওর ক্ষমতা নিয়ে আমি দারুণ রকম ওয়াকিবহাল। দীর্ঘদিন ধরে ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছে, ওর অভিজ্ঞতাটা কাজে দিল। আসলে অভিজ্ঞতা এমন একটা জিনিস যেটা কঠিন সময়ে সবচেয়ে বেশি কাজে দেয়। আমাদের টার্গেটটা খুব বেশি ছিল না, আবার কমও ছিল না। এই রানটা তাড়া করতে হলে আমাদের শুরুটা ভাল করতে হত। সেটা হয়েছিল। কিন্তু আমরা নিয়মিত উইকেট হারিয়ে নিজেদের কাজটা শক্ত করে দিই। শেষাবধি অবশ্য কার্তিকই কাজটা শেষ করে এল। ওর ইনিংসটা সত্যি অসাধারণ।’ কার্তিক কী বলেন, ‘আমার লক্ষ্যটা ছিল খুবই সোজা। ক্রিজে নেমে প্রত্যেকটা বলই মারতে হতো। সেটাই করেছি। নেটেও আমি এ ধরনের অনুশীলন করে আসছি। এই সুযোগ তো বারবার আসবে না। সেটা কাজে লাগাতে পেরে খুব ভাল লাগছে।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘জয়ের পর সতীর্থদের উল্লাসে আমি আপ্লুত। গোটা সিরিজে ভাল করেছি তাইবাংলাদেশের বিপক্ষে ফাইনাল না জিততে পারলে খুবই খারাপ লাগত। এই পিচে ব্যাট করা অতটা সহজ নয়। মুস্তাফিজুরের বোলিংকেও কৃতিত্ব দিতে হবে।’ প্রথমসারির পাঁচ-ছয়জনকে বিশ্রামে রেখে নিদাহাস ট্রফিতে দ্বিতীয় সারির দল পাঠিয়েছে ভারত। বলতে গেলে সবাই নতুন। এই দল নিয়েই এই সিরিজে সবকটি ম্যাচ জিতেছে রোহিত-বাহিনী। কিন্তু টাইগারদের প্রশংসা না করে উপায় ছিল না। কী দুর্দান্ত এক ম্যাচ জিতল ভারত! ম্যাচের শেষ বলটি পর্যন্ত ছিল টান টান উত্তেজনা।
×