ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মাহিয়ান দ্বীপ

টেনিসের নতুন রানী নাওমি

প্রকাশিত: ০৬:৪১, ২১ মার্চ ২০১৮

টেনিসের নতুন রানী নাওমি

নাওমি ওসাকার বাজিমাত! এক দশকের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ প্রমীলা খেলোয়াড় হিসেবে ইন্ডিয়ান ওয়েলসের শিরোপা জিতলেন তিনি। টুর্নামেন্টের শুরু থেকে দুর্দান্ত খেলেই ইন্ডিয়ান ওয়েলসের শিরোপা উঁচিয়ে ধরলেন জাপানের তরুণ প্রতিভাবান এই তারকা। রবিবার টুর্নামেন্টের ফাইনালে অবাছাই নাওমি ওসাকা ৬-৩ এবং ৬-২ গেমে পরাজিত করেন দারিয়া কাসাতকিনাকে। রাশিয়ার ২০তম বাছাইকে পরাজিত করে জাপানের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে ইন্ডিয়ান ওয়েলসের চ্যাম্পিয়ন হলেন ওসাকা। এটা তার ক্যারিয়ারেরও প্রথম ডব্লিউটিএ শিরোপা। বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে থাকা প্রায় সব খেলোয়াড়ই অংশ নিয়েছিলেন ইন্ডিয়ান ওয়েলসে। মারিয়া শারাপোভা, সেরেনা উইলিয়ামস, ক্যারোলিন ওজনিয়াকি, এ্যাঞ্জেলিক কারবার, সিমোনা হ্যালেপ, গারবিন মুগুরুজা কিংবা এ্যাগ্নিয়েস্কা রাদওয়ানস্কা সকলেই ফেবারিটের তকমাটা গায়ে মেখে নেমেছিলেন ইন্ডিয়ান ওয়েলসের কোর্টে। কিন্তু সবাইকে হতাশায় ডুবিয়ে টুর্নামেন্টের শিরোপা উঁচিয়ে ধরলেন নাওমি ওসাকা। অবাছাই হিসেবেই এই টুর্নামেন্টে খেলতে নেমেছিলেন যিনি! পরিসংখ্যান ঘেঁটে দেখা যায় ইতিহাসের মাত্র চতুর্থ অবাছাই খেলোয়াড় হিসেবে টেনিসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই টুর্নামেন্টের ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছিলেন তিনি। তার আগে সর্বশেষ এই কীর্তি গড়েছিলেন কিম ক্লাইস্টার্স। ২০০৫ সালে অবাছাই খেলোয়াড় হিসেবে ইন্ডিয়ান ওয়েলসের ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছিলেন ক্লাইস্টার্স। দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় পর অবাছাই খেলোয়াড় হিসেবে ইন্ডিয়ান ওয়েলসের ফাইনালে উঠেই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করলেন নাওমি ওসাকা। বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের ৪৪ নম্বর খেলোয়াড় নাওমি ওসাকা এ দিন প্রতিপক্ষকে হারাতে সময় নেন মাত্র ৭০ মিনিট। এমন জয়ের পর স্বাভাবিকভাবেই দারুণ রোমাঞ্চিত ওসাকা। তবে দারিয়া কাসাতকিনার বিপক্ষে ম্যাচের আগে থেকে সতর্ক ছিলেন তিনি। এ প্রসঙ্গে ম্যাচের শেষে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে জাপানি তারকা বলেন, ‘আমি ফাইনালের আগে থেকেই জানতাম যে, প্রতিটি পয়েন্টের জন্যই লড়াই করবে কাসাতকিনা। তাই আমি বিচলিত ছিলাম না মোটেও। বরং কোর্টে তার বিপক্ষে সব সময়ই সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছি।’ জন্ম জাপানে। কিন্তু বয়স যখন তিন বছর তখন থেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন তিনি। যে কারণেই আমেরিকা-জাপানের দ্বৈত নাগরিক ওসাকা। ক্যালিফোর্নিয়ার পরিবেশের সঙ্গে যে তিনি খুব মানানসই সেটাও আর বলার অপেক্ষা রাখে না। কাসাতকিনাকে পরাজিত করার পর ওসাকা বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে ফাইনাল ম্যাচে যে খুব হিট করব সেরকম কোন পরিকল্পনা ছিল না আমার। বরং চেয়েছিলাম সে কী করে তা দেখি...। তার কার্যক্রম দেখেই সিদ্ধান্ত নেয়ার পরিকল্পনা নিয়ে কোর্টে নামী আমি।’ একটা জায়গায় দুই ফাইনালিস্টের দারুণ মিল। ওসাকার মতো কাসাতকিনাও প্রথমবারের মতো এই টুর্নামেন্টের ফাইনালের টিকেট কাটেন। ওসাকা-কাসাতকিনা উভয়েরই বয়স একুশের কম। এর ফলে একটা রেকর্ডও হয়ে যায় তাদের। ১৭ বছরের মধ্যে এবারই প্রথম ফাইনালে খেলা দুই খেলোয়াড়েরই বয়স একুশের নিচে। তাদের আগে ২০০১ সালে একুশ বছরেরও কম বয়সী খেলোয়াড় হিসেবে ফাইনাল খেলেছিলেন কিম ক্লাইস্টার্স এবং সেরেনা উইলিয়ামস। আমেরিকান টেনিসের জীবন্ত কিংবদন্তি সেরেনা উইলিয়ামস এ বছরও অংশ নিয়েছেন এই টুর্নামেন্টে। কিন্তু খুব বেশি দূর এগুতে পারেননি বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের সাবেক এই শীর্ষ তারকা। টুর্নামেন্টের তৃতীয় পর্ব থেকেই ছিটকে যান তিনি। তাও আবার বড় বোন ভেনাস উইলিয়ামসের কাছে হেরে। গত বছর অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে সর্বশেষ কোন মেজর শিরোপা জয়ের স্বাদ পেয়েছিলেন সেরেনা। তার প্রায় ১৪ মাস পর আবারও কোর্টে ফেরেন তিনি। এই সময়ে দ্বৈতে খেললেও মহিলা এককে প্রতিযোগিতামূলক কোন ম্যাচ খেলেননি তিনি। দীর্ঘ বিরতির পর এই ইন্ডিয়ান ওয়েলস দিয়েই কোর্টে ফিরলেন কৃষ্ণকলি। তবে মজার বিষয় হলো, ইন্ডিয়ান ওয়েলসে যখন সেরেনা উইলিয়ামস প্রথমবারের মতো অংশ নেন তখন জন্মই হয়নি দারিয়া কাসাতকিনার। অথচ, এবার সেই টুর্নামেন্টেরই ফাইনাল খেললেন রাশিয়ান তারকা। শুধু তাই নয়, ২০ বছরের এই তরুণী ফাইনালে উঠেন সেরেনার বড় বোন ভেনাস উইলিয়ামসকে পরাজিত করেই। টুর্নামেন্টের শেষ চারে কাসাতকিনা ৪-৬, ৬-৪ এবং ৭-৫ গেমে হারিয়েছিলেন সাত গ্র্যান্ডস্লামের মালিক ভেনাসকে। এর আগে ইউএস ওপেনের চ্যাম্পিয়ন স্লোয়ান স্টিফেন্স এবং অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের চ্যাম্পিয়ন ক্যারোলিন ওজনিয়াকিকেও পরাজয়ের স্বাদ উপহার দেন তিনি। পুরো টুর্নামেন্টে দুর্দান্ত খেলেই টানা দুই টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেললেন কাসাতকিনা। এর আগে দুবাইয়েও ফাইনাল খেলেছিলেন তিনি। তবে ইন্ডিয়ান ওয়েলসের ফাইনালের মতো বড় মঞ্চে কিছুটা বিচলিত ছিলেন রাশিয়ান তারকা কাসাতকিনা। তবে শিরোপাজয়ী ওসাকাকেই কৃতিত্ব দিলেন তিনি। এ বিষয়ে ম্যাচের শেষে কাসাতকিনা বলেন, ‘আমার চেয়ে অনেক বেশি ভাল খেলেছে ওসাকা। তাই যোগ্য খেলোয়াড় হিসেবেই টুর্নামেন্টের শিরোপা জিতেছে সে। তবে আমি মনে করি, ম্যাচের প্রথম দিকে আমরা উভয়ই কিছুটা বিচলিত ছিলাম। এর মূল কারণ, এখন পর্যন্ত খেলা এটাই আমার সবচেয়ে বড় ফাইনাল।’ এ দিকে ইন্ডিয়ান ওয়েলসের পুরুষ এককে চমকে দিয়েছেন জুয়ান মার্টিন ডেল পোত্রো। ফাইনালে রজার ফেদেরারকে হারিয়ে দেন তিনি। অথচ, চলতি মৌসুমের শুরু থেকেই অপ্রতিরোধ্য গতিতে ছুটছিলেন ফেড এক্সপ্রেস। গড়েছিলেন টানা ১৭ ম্যাচে অপরাজিত থাকার রেকর্ড। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে থামিয়ে দিলেন ডেল পোত্রো। ফেড এক্সপ্রেসকে পরাজিত করে ইন্ডিয়ান ওয়েলসের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করলেন আর্জেন্টাইন তারকা। টুর্নামেন্টের ফাইনালে জুয়ান মার্টিন ডেল পোত্রো কঠিন লড়াইয়ের পর ৬-৪, ৫-৭ (৮/১০) এবং ৭-৬ (৭/২) গেমে পরাজিত করেন বিশ্ব টেনিস র‌্যাংকিংয়ের এক নম্বর খেলোয়াড় রজার ফেদেরারকে। সেইসঙ্গে ২০১৮ সালে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে ফেদেরারকে পরাজয়ের স্বাদ উপহার দেন আর্জেন্টাইন তারকা। শুধু তাই নয়, সুইস তারকাকে পরাজিত করে ক্যারিয়ারের প্রথম এটিপি মাস্টার্স ১০০০ লেভেলের শিরোপাও জেতেন ডেল পোত্রো। ২০০৯ সালে ইউএস ওপেনের শিরোপা জিতে বিশ্ব টেনিসের পাদপ্রদীপের আলোয় উঠে এসেছিলেন তিনি। কিন্তু পারফরমেন্সের সেই ধারাবাহিকতা আর ধরে রাখতে পারেননি আর্জেন্টাইন তারকা। ফর্মহীনতা আর ইনজুরির কারণে টেনিস থেকে প্রায় ছিটকেই গেছিলেন তিনি। তবে এ মৌসুমের শুরু থেকেই দুর্দান্ত খেলে যেন আবারও স্বরূপে ফেরার ইঙ্গিত দিলেন ডেল পোত্রো।
×