ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

এলডিসি উত্তরণ ॥ রফতানি ও বিদেশি ঋণ প্রবাহ বাড়বে

প্রকাশিত: ২২:০৩, ২১ মার্চ ২০১৮

এলডিসি উত্তরণ ॥ রফতানি ও বিদেশি ঋণ প্রবাহ বাড়বে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ উন্নয়নশীল দেশ হওয়াতে বাংলাদেশের রফতানি ও বিদেশি ঋণ প্রবাহ কমার কোনও আশংকা নেই। বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেছেনম, আমরা উন্নয়নশীল দেশ হলে আমাদের রপ্তানি ও ঋণ কমবে না। বরং দাতাদের সঙ্গে বড় অঙ্কের ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে সুদের হার নির্ধারণে নেগোসিয়েশনের সুযোগ তৈরি হবে। আগে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দাতাদের শর্ত মতে ঋণ নিতে হতো। এছাড়া পোশাক খাতের পাশাপাশি নতুন করে আইসিটি (তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি), চামড়া এবং ওষুধ শিল্প রফতানি খাতে অনেক সম্ভাবনা দেখাচ্ছে। এসব নতুন পণ্য আগামীতে বাংলাদেশের রফতানি প্রবৃদ্ধি আরও বাড়বে। বুধবার স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত হওয়া উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান পরিকল্পনা মন্ত্রী। শেরে বাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এসময় মন্ত্রী আরও বলেন, আমরা আমেরিকা ও ইউরোপের বেশিরভাগ দেশে আমরা বিশেষ কোন শুল্ক সুবিধা ছাড়াই পোশাক রফতানি করি। তাই পোশাক খাতে রফতানি আয় কমার আশঙ্কার কোন কারন দেখছি না। তিনি বলেন, সাধারণত এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশ হলে বেসরকারি ও বিদেশি বিনিয়োগ অনেক বেড়ে যাবে। আমরা আশা করছি, বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও তাই হবে। বিনিয়োগ যতো বাড়বে রফতানিও ততোই বাড়বে। মন্ত্রী বলেন, আমরা এখন আর গরীব নই। স্বাধীনতার তিন বছর পর আমরা এলডিসিতে তালিকাভুক্ত হয়েছিলাম। কিন্তু এরপর পর উন্নয়নশীল দেশে যেতে ৪৩ বছর লাগলো। মন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘের যে তিনটি মানদন্ডের সূচকে এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশ হয়, সে তিনটি সূচকই বাংলাদেশ খুব ভালোভাবে অর্জন করেছে। এখন আমরা ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপিন্স, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, ভারত এবং শ্রীলংকার মতো উন্নয়নশীল দেশের কাতারে প্রবেশ করেছি। এটা গর্ব করার মতো অর্জন। এ অর্জন দেশের সবার। এখন আমাদের স্বপ্ন ২০৪১ সালে আমরা উন্নত দেশের কাতারে চলে যাবো। এটা বাংলাদেশের পক্ষে সম্ভব। মন্ত্রী বলেন, আমরা মাত্র নয় বছর আগে ৫৮তম অর্থনীতির দেশ ছিলাম। এখন আমরা ৪৩তম অর্থনীতির দেশ হয়েছি। এবছরের মধ্যে আরও দুই-তিনটা দেশকে টপকে যেতে পারবো বলে আশা করছি। তিনি বলেন, আমরা নয় বছরে ১৫টি দেশকে পেছনে ফেলেছি। আগামী ২৩ বছরে আরও ২৩টি দেশকে টপকে ২০৪১ সালে আমরা পৃথিবীর সেরা বিশ অর্থনীতির দেশে প্রবেশ করতে পারবো। তবে চলার পথ সবসময় যে মসৃণ হবে সে সতর্কবানী মনে করিয়ে দিয়ে মন্ত্রী বলেন, মানুষ একা হাঁটতে পারে কিন্তু পৃথিবীর কোন দেশ একা হেঁটে উন্নতি করতে পারে না। তাছাড়া অর্থনীতিতে লিফটে চড়ার সুযোগ নাই, উপরে উঠতে হবে সিঁড়ি ভেঙ্গে। এ সময় মন্ত্রী উন্নয়নশীল দেশের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড (জনমিতির সুবিধা) থেকে সুবিধা আদায়ের আশাবাদ ব্যাক্ত করেন। তার মতে, ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের ক্ষেত্রে পৃথিবীতে আমাদের মতো সুবিধায় আর কেউ নেই। আমাদের মোট জনসংখ্যার ৬৭ শতাংশ কর্মক্ষ। এতো বিপুল কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী আর কারো নেই। উন্নত বাংলাদেশের জন্য অবকাঠামো, শিক্ষিত ও দক্ষ জনগোষ্ঠী জ্বালানী ও বিদ্যুৎ এবং বেসরকারি বিনিয়োগকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন জানিয়ে তিনি বলেন, এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ইতিমধ্যেই পায়রা ও মাতাবাড়িতে দুটি দুটি গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ করা হচ্ছে। একইভাবে নয় বছর আগে মাত্র তিন হাজার মেগাওয়াট থেকে বিদ্যুৎ এখন পনের হাজার মেগাওয়াটের বেশি উৎপাদসক্ষমতা আমাদের হয়েছে। আগামী ২০৩০ সালে ৩৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হবে বলে জানান তিনি। তাছাড়া সরকারি বেসরকারি অংশগ্রহণের ভিত্তিতে (পিপিপি) কাজ করলে আমাদের বেসরকারি খাতের চাহিদা পূরণ করতে হবে।
×