ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

জামালপুরে মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ পৌরবাসী

প্রকাশিত: ২৩:৪৫, ২১ মার্চ ২০১৮

জামালপুরে মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ পৌরবাসী

নিজস্ব সংবাদদাতা, জামালপুর ॥ মশা নিধনে জামালপুর পৌরসভা কর্তৃপক্ষের কোনো কার্যক্রম না থাকায় জামালপুর পৌর এলাকায় মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন পৌরবাসী। পৌরসভার পয়:নিস্কাশনের বংশখাল ভরাট হয়ে মশার সূতিকাঘারে পরিণত হয়েছে। এ ছাড়াও পৌরসভার রাস্তার পাশের ড্রেন পরিষ্কার না করা এবং যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনার স্তূপের কারণে মশার প্রাদুর্ভাব ব্যাপক হারে বাড়ছে বলে পৌরনাগরিকেরা অভিযোগ করেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেড়শ বছরের পুরনো এবং প্রথম শ্রেণির এই জামালপুর পৌরসভার আয়তন ৫৩.২৮ বর্গকিলোমিটার। ১২টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত এই পৌরসভার বর্তমান ১ লাখ ৮০ হাজার ৩৫৮ জন। এতো বড় একটি পৌরসভা হওয়া সত্ত্বেও এখানে নাগরিক সুযোগ সুবিধা বাস্তবায়নে তেমন কোনো উদ্যোগ নেই। অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে পৌরসভার সবগুলো ওয়ার্ডে বর্জব্যবস্থাপনা ভেঙে পড়েছে। শহরের বিভিন্ন স্থানে অনেক ডোবা পরিষ্কার করা হয় না। পৌরসভার পয়:নিস্কাশনের বংশখালটি ভরাট হয়ে গেছে। বংশখালটিকেই এখন মশা উৎপাদনের বড় ধরনের উৎসস্থল হিসেবে মনে করে পৌর নাগরিকেরা। এই বংশখালটির পরিষ্কার করা হয় না। ফলে মশার জন্ম এবং উপদ্রব দুটোই বাড়ছে দিন দিন। মশা নিধনেও নেই কোনো কার্যকর উদ্যোগ। চলতি অর্থ বছরে জামালপুর পৌরসভার বাজেটে মশা ও কুকুর নিধন খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে মাত্র ১ লাখ টাকা। পৌর কর্তৃপক্ষ বলছে এই টাকায় তারা কোনো কাজই করতে পারে না। ফলে পৌরসভার সবগুলো ওয়ার্ডেই মশার উপদ্রব সইতে না পেরে শুধু রাতেই নয়, দিনেও ঘরের ভেতরে মশা তাড়ানোর কয়েল লাগিয়ে রাখতে হচ্ছে। এতে করে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে পড়ছেন পৌর নাগরিকেরা। বাসা-বাড়ি থেকে কর্মস্থল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে হাসপাতাল, এমন কোথাও বাদ নেই, যেখানে মশার উপদ্রব নেই। সর্বত্রই এখন মশার অবাধ বিচরণ। জামালপুর শহরের শাহপুর এলাকার বাসিন্দা মাহমুদুল হাসান মুক্তা বলেন, মশার উপদ্রব এমন বাড়ছে যে রাতে ঘুমানো যায় না। মশা তাড়ানোর কয়েল জ¦ালিয়েও বসে থাকা যায় না। এমনকি দিনের বেলায়ও মশায় কামড়ায়। বড়দের চাইতে শিশুরাই বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। স্কুল শিক্ষক মো. নজরুল ইসলাম বলেন, বেড রুমে মশা, ড্রয়িং রুমে মশা, বাথরুমে মশা। প্রতিনিয়ত আমাদেরকে মশার কামড় খেতে হচ্ছে। মশার উপদ্রব থেকে আমরা পরিত্রাণ চাই। রিকশাভ্যানচালক সুজন মিয়া বলেন, জামালপুরের রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে সর্বত্র এখন মশার দখলে। মশার যন্ত্রণায় আমরা প্রতিদিনই দিনে রাতে মশার কয়েল জ্বালিয়ে রাখি। এতে করে আমাদের ব্যয় বেড়ে গেছে। পৌরসভা থেকে যদি নিয়মিত মশা নিধনের কীটনাশক স্প্রে করতো তাহলে হয়তো মশার উপদ্রব থেকে কিছুটা রক্ষা পাওয়া যেত। জামালপুর পৌরসভার সচিব মো. নূরুল ইসলাম মিন্টু বলেন, জামালপুর পৌরসভার কর্মচারীদের বেতন-ভাতাই যেখানে সরকার ঠিক মতো দিতে পারে না। শুধু মশা নিধন কেন, পৌরসভার ড্রেন, বংশখাল কোনোটাই নিয়মিত পরিষ্কার করা সম্ভব হচ্ছে না। মশা নিধনের জন্য চলতি অর্থ বছরের পৌর বাজেটে ১ লাখ রাখা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এতো বড় একটি পৌরসভা এই টাকায় কি হয়। তাই মশা নিধন কার্যক্রম নিয়মিত পরিচালনা করা সম্ভব হয়ে উঠে না। বিষয়টি পৌর মেয়র ও কাউন্সিলরদের সাথে আলোচনা করে দেখি মশা নিধনের কার্যক্রম চালানো যায় কিনা সে ব্যাপারে খুব শিগগির সিদ্ধান্ত নিবো। জামালপুর পৌরসভার মেয়র মির্জা সাখাওয়াতুল আলম মনি জনকণ্ঠকে বলেন, পৌর নাগিরকদের অসচেতনতার কারণে পৌরসভার সকল ড্রেন ময়লা আবর্জনায় ভরে যায়। যে উদ্দেশে বংশখাল সংস্কার করা হয়, স্থানীয় জনগণ বাসাবাড়ির বর্জফেলে সেই বংশখালটিও ভরে ফেলেছে। এগুলো আর কতো পরিষ্কার করা যায়। এরপরও আমরা মাঝে মধ্যে মশা নিধনের স্প্রে করে থাকি। চলতি মাসে সারা পৌরসভায় মশা নিধন সপ্তাহ কর্মসূচি নিয়ে কীটনাশক স্প্রে করাসহ জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করার চিন্তাভাবনা করছি।
×