ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রধানমন্ত্রীর কাছে পরিবারের নিরাপত্তা চাইলেন শিক্ষিকা

প্রকাশিত: ০৩:৩২, ২১ মার্চ ২০১৮

প্রধানমন্ত্রীর কাছে পরিবারের নিরাপত্তা চাইলেন শিক্ষিকা

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার ॥ আমি একজন শিক্ষিকা। আমার স্বামী একজন শিক্ষক। আমার ছেলেটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে। একটা রাতও শঙ্কাহীন ভাবে ঘুমাতে পারি না। স্থানীয়রা আমার স্বামী এবং ছেলেটাকে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে প্রতিনিয়ত। তাই এলাকায় যাওয়ার সাহস পাচ্ছি না আমরা। অন্যায় মেনে না নেয়াই কি তাদের দোষ? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কাছে আমি আমার পরিবারের নিরাপত্তা চাই। বুধবার রাজধানীর বাংলাদেশ রিপোর্টারস ইউনিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান টাঙ্গাইল বড়শিলা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম লাভলুর স্ত্রী ও একই বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা শিরিনা আক্তার। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন- শিক্ষক দম্পতির সন্তান ও ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী রাফিজ ইমতিয়াজ। গত ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন এবং জাতীয় শিশু দিবসের অনুষ্ঠানে যোগদানের সময় টাঙ্গাইল জেলার গোপালপুর উপজেলার বড়শিলা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলামকে নিজ বিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে চাকু, চাইনিজ কুড়াল সহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালানো হয়। হামলায় তিনি গুরুতরভাবে আহত হন। পরে স্থানীয় লোকজন তাকে গোপালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় সেখানে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন। বর্তমানে তিনি ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধিন রয়েছেন। সংবাদ সম্মেলনে শিরিনা আক্তার বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলে এইভাবে একটি শিক্ষক পরিবারকে প্রতিনিয়ত মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে থাকতে হবে? বঙ্গবন্ধুকন্যা কী আমাদের এই অসহায় অবস্থায় পাশে দাঁড়াবেন না? আমাদের নিরাপত্তা দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আকুল আবেদন জানাই। প্রধান শিক্ষকের সন্তান রাফিজ ইমতিয়াজ বলেন, পাশের বাড়ির একজনের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার প্রতিবাদ করা, স্কুলের জমিতে সভাপতির বিল্ডিং নির্মাণ, স্কুলের জমিতে মসজিদ ভাঙা এবং সেই জমি অন্যকে প্রদান, স্কুলে অবৈধ ভাবে নিয়োগ বিরোধিতা এবং আইন বহির্ভূত কাজে প্রধান শিক্ষক হিসেবে স্বাক্ষর না করাই ছিল আব্বুর অপরাধ। ডিসেম্বর মাস আগে কমিটির সভাপতি হালিমুজ্জামান তালুকদার আব্বু সহ ৪ জন শিক্ষক ছাড়া স্কুলের বাকি শিক্ষকদের ডেকে বলে এখন থেকে স্কুলে প্রধান শিক্ষকের কোন কথা শোনা যাবে না এবং কথা বলা যাবে না। এবং নানা ভাবে চাকরি ছাড়ার জন্য চাপ প্রদান করতে থাকে। এমনকি হামলার পর বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আব্বুর সাথে যোগাযোগ যেকোন ধরনের যোগাযোগ না করার জন্য হুমকি দেয়া হয়। তিনি আরও বলেন, ঘটনার পরপরই ঘটনাস্থল থেকেই মামলার প্রধান আসামী হারুনর রশিদ তালুকদার (ওরফে হারু মাতুব্বর) এবং ৩ নং আসামী (ইয়াদ আলী) কে গ্রেফতার করা হলেও রাজনৈতিক বলে প্রধান আসামীকে পুলিশ ছেড়ে দেয়। পরবর্তীতে হামলাকারীরা তাদের বিরুদ্ধে মামলা না করার জন্য ভয়ভীতি প্রদর্শন করতে থাকে এবং পুলিশ নীরব ভূমিকা পালন করে। সুতরাং সন্দেহ করা যাচ্ছে যে তাদের পেছনে স্থানীয় শক্তিশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের প্রভাব রয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও মির্জাপুর ইউনিয়ন পরিষদের সভাপতি হালিমুজ্জামান তালুকদারের নির্দেশে তারই বড়ভাই হারুনর রশিদ তালুকদার (ওরফে হারু মাতুব্বর) এর নেতৃত্বে ভাতিজা মামুনর রহমান তালুকদার, আকাশ তালুকদার, মেহেদী হাসান দীপু, ইয়াদ আলী, লিটন, ইসহাক, নাসির সহ বেশ কয়েকজন ভাড়াটে সন্ত্রাসী প্রধান শিক্ষকের ওপর হামলা করেন। আক্রমণের ধরন থেকে স্পষ্ট যে এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাচেষ্টা। গত কয়েকদিন ধরেই তারা বার বার ফোনে এবং সরাসরি হুমকি, ধামকি দিচ্ছে আর শ্বাসাচ্ছে। হাত পা ভেঙ্গে ফেলে রাখবে, মেরে ফেলবে, কাফনের কাপড় রেডি করে রাখছে, স্কুলে কিভাবে থাকে দেখে নিব বলে হুমকি প্রদান করেন বলে দাবি করেন প্রধান শিক্ষকের পরিবার।
×