ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দারিদ্র্য বিমোচনে গুরুত্বারোপ

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ২২ মার্চ ২০১৮

দারিদ্র্য বিমোচনে গুরুত্বারোপ

ইন্টারন্যাশনাল ফান্ড ফর এ্যাগ্রিকালচার ডেভেলপমেন্ট (ইফাদ)-এর ৪১তম পরিচালনা পর্ষদের বার্ষিক অধিবেশনে যোগ দিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী গিয়েছিলেন ইতালির রোমে। সেখানে মূল বক্তা হিসেবে তিনি দেশের ক্ষুধা ও দারিদ্র্য দূর করতে গ্রামীণ অর্থনীতিতে বিনিয়োগের জন্য উন্নয়ন সহযোগীদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন। দারিদ্র্য বিমোচন তথা স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার জন্য শুধু শহর-নগর নয়; বরং গ্রামীণ অর্থনীতিতেও বিনিয়োগ একটি প্রধান বিবেচ্য বিষয় হওয়া বাঞ্ছনীয়। বিশ্বব্যাপী অংশীদারিত্ব ও সহযোগিতা ছাড়া এটি অর্জন করাও সম্ভব নয়। এই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে বাংলাদেশ এবং ইফাদ দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ছয়টি জেলার দুস্থ মানুষের অবকাঠামো উন্নয়ন ও বাজার সম্প্রসারণে ৯২ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলার বা ৯১ কোটি ২০ লাখ ৩০ হাজারের একটি ঋণ চুক্তিও সম্পাদন করেছে। এর আওতায় ২০-১৮-২০২৪ পর্যন্ত গৃহীত প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হলে জেলাগুলোয় ৩ কোটি ৩০ লাখ মানুষ উপকৃত হবে বলে আশা করা যায়। এখানে উল্লেখ করা আবশ্যক যে, বর্তমান সরকারের আমলেই উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি জেলায় দুস্থ ও অভাবগ্রস্ত এলাকায় বহুকথিত ‘মঙ্গা’ দূর করা সম্ভব হয়েছে। বর্তমানে দেশে প্রায় ২৪ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে রয়ে গেছে। সরকারের লক্ষ্য ২০২৪ সালের মধ্যে এই হার ১০ শতাংশে নামিয়ে আনা। এর আগে ঢাকায় অনুষ্ঠিত উন্নয়ন ফোরামের ২০১৮ সালের বৈঠকেও প্রধানমন্ত্রী দাতা দেশ ও সংস্থাগুলোর প্রতি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্র অর্জনে যথাসময়ে অর্থছাড়সহ সহযোগিতার হাত সম্প্রসারণের আহ্বান জানিয়েছেন, যা হবে জাতিসংঘ নির্দেশিত এসডিজি অর্জনে সহায়ক। গার্মেন্টস শিল্পে দেশের সুখ্যাতি বিশ্বজোড়া আয়ও অসামান্য। এ খাতে কয়েক লাখ নারীর কর্মসৃজন হয়েছে। নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ ঈর্ষণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে বিশ্বে। প্রাথমিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্য কর্মসূচীসহ নারী এবং শিশু মৃত্যুর হার প্রতিরোধেও বাংলাদেশের সাফল্য প্রশংসনীয়। জিডিপি প্রবৃদ্ধি ইতোমধ্যে ৭.৫ শতাংশ অর্জিত হয়েছে। বেড়েছে মাথাপিছু আয়। নিম্ন মধ্য আয়ের দেশ থেকে ২০২১ সাল নাগাদ মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার লক্ষ্যে ধাবমান বাংলাদেশ। প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ৮ শতাংশ অতিক্রম করা। সেটা অতিক্রম করতে হলে ইউএনডিপি উল্লিখিত ৬৬ শতাংশ কর্মক্ষম জনশক্তিকে কাজে লাগাতে হবে। অদক্ষ জনশক্তিকে রূপান্তরিত করতে হবে দক্ষ জনশক্তিতে। জোর দিতে হবে কারিগরি শিক্ষা সম্প্রসারণের ওপর। বাড়াতে হবে শিক্ষার মান। জ্ঞান-বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষার ওপর সবিশেষ গুরুত্বারোপ করতে হবে। নারী-পুরুষের সমতা অর্জনের দিকে নজর দিতে হবে। সর্বোপরি কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য জোর দিতে হবে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ ও শিল্পায়নের ওপর। বর্তমানে কৃষি ও শিল্পক্ষেত্রে যে অবস্থা বিরাজ করছে তাতে বৈচিত্র্য ও বহুমুখিতা কম। সেক্ষেত্রে ধান-চালের পাশাপাশি কৃষির বহুমুখীকরণ তথা অর্থকরী ফসল উৎপাদনে মনোযোগী হতে হবে। ভারি ও বহুমুখী শিল্পায়ন করতে হবে। তথ্যপ্রযুক্তি, ব্যাংক-বীমাসহ কারিগরি উৎকর্ষ অর্জনের ক্ষেত্রে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে দেশেই। একটি আধুনিক ও বিজ্ঞানমনস্ক কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী তৈরি বর্তমান সময়ের দাবি। পরিহার করতে হবে ধর্মীয় কূপম-ূকতা। অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও অগ্রগতি অর্জন এবং তা অব্যাহত রাখতে হলে সুশাসনসহ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অপরিহার্য। সেক্ষেত্রে এই দিকটির দিকেও নজর দিতে হবে সরকারকে। শহর-নগর-বন্দরের পাশাপাশি সমান সুযোগ ও মনোনিবেশ করতে হবে দারিদ্র্য বিমোচনসহ গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়নে। তাতে করে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির সুফল প্রায় সবাই উপভোগ করতে সক্ষম হবে।
×