ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলিশ এড়িয়ে চলুন

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ২২ মার্চ ২০১৮

বাংলিশ এড়িয়ে চলুন

‘বাংলিশ’ শব্দটি আমার দেয়া না হলেও অনেকের কাছে এটি একটি পরিচিত শব্দ। এটি হলো এ রকম একটি ভাষা, না বাংলা না ইংলিশ, এই দুয়ে মিলে ‘বাংলিশ’। আর ঠিক এই ভাষাটিই ব্যবহার করে চলেছে আমাদের দেশের বহু বেসরকারি টিভি ও এফএম রেডিওর উপস্থাপকরা। তারা নিজেরাই বাংলা ভাষাকে মিশ্রিত করে উচ্চারণ করছে আবার তারাই অন্যদেরকে শুদ্ধ বাংলার চর্চা করতে বলছে, কথাটা কেমন বেমানান হয়ে গেল না? আমি ইংরেজী ভাষার প্রতি অবহেলা করছি না, বহুকাল ধরে ইংরেজরা যখন ভারতীয় উপমহাদেশকে শাসন করেছে, তখন অনেক ইংরেজী শব্দই অবলীলায় বাংলার মধ্যে ঢুকে গেছে। সমস্যা এ রকম কিছু শব্দ নিয়ে নয়, সমস্যা হলো গোটা বাংলা ভাষাকে ইংরেজী-হিন্দি দ্বারা মিশ্রিত করে ভিন্ন একটি ভাষার সৃষ্টি করলে। কোন এক এফএম রেডিওর উপস্থাপক অনুষ্ঠান শুরুর সময় বলছে, ‘ওহ প্রিয় ষরংঃবহবৎ ুবং বিষপড়সব নধপশ আমি আছি তোমাদের সঙ্গে,।’ আবার অনুষ্ঠান শেষ করার সময় বলছে, ‘ংড় শুনতে থাকুন বন্ধু ধিরঃ ধহফ পড়সব নধপশ লঁংঃ ঃরসব,’ ইত্যাদি। তাদের মধ্যে হয়ত ইতোমধ্যে একটি প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গিয়েছে। কে কত বাংলা-ইংরেজী মিশ্রিত বলতে পারবে। কর্তৃপক্ষ তারটাই বেশি উপযুক্ত বলে মনে করছে। তার কথা দর্শক বেশি শুনবে বলে মনে করে এবং তারা এটিকে একটি আধুনিক ভাষ্য হিসেবে মনে করে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে কি তারা এভাবে ভাষার আধুনিকায়ন করছে? নাকি বাংলা ভাষাকে বিকৃতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে? স্বভাবতই দেশের সাধারণ মানুষ গণমাধ্যমের কথাগুলোকেই অনুসরণ করে থাকে, তথাপি তারাই যদি এত গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে থেকে ভুলের পথে হাঁটে, তাহলে গোটা বাংলা ভাষাভাষী মানুষ তো তাদের দ্বারা প্রভাবিত হতেই পারে। আমরা তো ১৯৫২ সালের কথা কখনও ভুলে যেতে পারি না। যে জাতি ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছিল সেই জাতিরই মানুষ হয়ে আমরা কিভাবে বাংলা ভাষাকে অন্য একটি ভাষার সঙ্গে মিশিয়ে বাংলিশ বানিয়ে দিই? সত্যিই বড় অবাক লাগে। ইংরেজী ভাষাকে অবশ্যই আমরা আলাদাভাবে শিখব কিন্তু সেটি বাংলার মধ্যে ব্যবহারের মাধ্যমে কেন? বাংলা ভাষা হলো আমার জাতির অস্তিত্ব। আমি কেন আমার অস্তিত্বকে মিশ্রিত করব? সমগ্র বিশ্বে বাংলাভাষার মাধ্যমে বাঙালী জাতির প্রকাশ পায়। আজ সারা বিশ্বে বাংলা ভাষাভাষী রবীন্দ্রনাথ-নজরুলকে নিয়ে গবেষণা হচ্ছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইতোমধ্যে বাংলা ভাষার চর্চা শুরু“হয়ে গিয়েছে। তাহলে স্বজাতির মানুষ হয়ে আমরা কেন নয়। তাই আসুন, আমরা সকলেই মিশ্রিত বাংলা ভাষাকে পরিহার করি। বাংলাকে আমরা সারা বিশ্বের মানুষের কাছে পৌঁছে দেই। এতে আমাদের জাতি আরও সমৃদ্ধি পাবে। আমাদের বাঙালী সংস্কৃতি আরও উঁচুতে উঠবে। পৃথিবীর মানুষের কাছে আরও গর্ব করে বলতে পারি যেন, এটি আমার বাংলা ভাষা, এটি আমার মাতৃভাষা, তোমরা দেখ, তোমরা শেখ। কবি সৈয়দ শামসুল হকের ‘আমার পরিচয়’ কবিতার লাইন দিয়ে শেষ করব, ‘এসেছি বাঙালী ক্ষুদিরাম আর সূর্যসেনের থেকে, এসেছি বাঙালী জয়নুল আর অবন ঠাকুর থেকে। এসেছি বাঙালী রাষ্ট্রভাষার লাল রাজপথ থেকে।’ লাল রাজপথ থেকে আসা এ ভাষাকে যেন আমরা বিকৃত না করি এটুকুই সকলের কাছে আমার আবেদন। গণবিশ্ববিদ্যালয়, সাভার, ঢাকা থেকে
×