ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রিফাত কান্তি সেন

রক্তে ভেজা বর্ণমালা

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ২২ মার্চ ২০১৮

রক্তে ভেজা বর্ণমালা

আধুনিকতা আমাদের জীবনে অনেক কিছুই বদলে দিয়েছে। দিন দিন আমরা আধুনিক হচ্ছি আর ভুলতে বসেছি আমাদের কৃষ্টি, সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য এমনকী প্রিয় ভাষাটিকেও। এই আমরাই ভিনদেশী ভাষায় কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। আমাদের তরুণ সমাজ বিদেশী ভাষাকে গুরুত্বের সঙ্গে প্রাধান্য দেয়। বিশেষ করে ইদানীং রেডিও টেলিভিশনের উপস্থাপকরা নিজেদের আধুনিক হিসেবে প্রকাশ করার জন্য মুখে যে বুলি ব্যবহার করেন সেটা নিয়েও নানা মহলে রয়েছে নানা প্রশ্ন। বাংলার পাশাপাশি ইংলিশ বলতেই তাঁদের স্বাচ্ছন্দ্যবোধ হয়। বাংলা বলতে গিয়েও শুদ্ধ নয় অশুদ্ধের চর্চা যেন ঘটাচ্ছে তাঁরা। যে যেখানে-যেভাবে পারছে সেভাবেই বাংলাকে অশুদ্ধভাবে উপস্থাপন করছে। আবার কারো কারো তো বাংলা বলতেই যেন যত কুণ্ঠাবোধ! ইদানীং খেলায় ধারাভাষ্যকাররাও বাংলিশ এর ব্যবহার ঘটাচ্ছে।এরা আধুনিকতার নামে নিজেদের দক্ষ হিসেবে তুলে ধরতে গিয়ে বাংলাকে বিসর্জন দিচ্ছে। আবার অনেকে দেখি বাংলা বিষয়ে পড়তেই নারাজ। বাংলাকে সহজ ভাষা ভেবে সেটার উপর চর্চা করেন না। আবার অনেকে বলেন বাংলায় পড়ালেখা করে কী হবে? বাংলা পড়ে লাভ কী? গ-মূর্খের মতো কথা। স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা কঠিন। ’৫২-এর ভাষা আন্দোলন আমাদের ইতিহাসে স্মরণীয় একটি ঘটনা। পৃথিবীর একমাত্র জাতি আমরা যারা মায়ের ভাষা রক্ষা করতে বুকের তাজা রক্ত ঝরিয়েছি। এরপরও আমরা যদি আমাদের ভাষার সঠিক ব্যবহার না করি, আমাদের ভাষাকে পিছিয়ে রাখি তবে বুঝতে হবে জাতি হিসেবে আমাদের ঘুণে ধরেছে। আমরা আজও পারিনি ভাষার মর্ম বুঝতে। ভাষার মাস এলেই আমাদের ভাষার প্রতি ভালবাসা দেখা দেয়। যে ভাষার জন্য ৫২ সালে আমরা আন্দোলনে রাজপথে নেমেছিলাম। শহীদ হয়েছিল ছাত্র-জনতা, সে কষ্টার্জিত ভাষার সঙ্গে এমন দুর্ব্যবহার সত্যি মনে ব্যথার দাগ কাটে। পৃথিবীতে সর্বাধিক প্রচলিত ভাষাভাষীর মধ্যে বাংলার অবস্থান চতুর্থ। প্রায় ৩০ কোটি লোক বাংলা ভাষায় কথা বলেন। মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্যসহ পৃথিবীর আনাচে-কানাচে বাংলা ভাষাভাষী লোকের বসবাস। আমাদের মহান নেতা, জাতির জনক, অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতিসংঘের অধিবেশনে বাংলায় ভাষণ দিয়েছিলেন। বর্তমানে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাও জাতিসংঘে বাংলায় ভাষণ দেন। ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে সারা বিশ্বে পালন করা হয় গভীর শ্রদ্ধা আর শহীদদের স্মরণের মধ্যে দিয়ে। যে ভাষাকে বিশ্ববাসী এতটা শ্রদ্ধার দৃষ্টিতে দেখে, সে ভাষাকে কিছু ব্যক্তি অমর্যাদা করছে যা কিনা সত্যি লজ্জাজনক। আমরা যদি আমাদের সম্মান না করি তা হলে বিশ্ব আমাদের সম্মান করবে কী করে? তাই সকলের উচিত বাংলা ভাষার সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা। বাংলিশ ব্যবহার না করা। ইংরেজী একটি আন্তর্জাতিক ভাষা সুতরাং সেটি শেখা যেমন জরুরী তার থেকে জরুরী নিজের ভাষাটা শেখা। চাঁদপুর সরকারী কলেজ থেকে
×