ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে সার্কেল

প্রকাশিত: ০৭:১৭, ২২ মার্চ ২০১৮

ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে সার্কেল

‘নিজের মতো করে কাজ করার সুযোগ সব সময়ই পাওয়া যায়।’- সত্যজিত রায়ের এই বাণীতে উদ্বুদ্ধ আজ তরুণ প্রজন্মের শিল্পী সমাজ। এই চিরন্তন কথাটি সব শিল্প মাধ্যমের শিল্পকর্মে অবস্থান করে। শিল্পী তার ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গি, বিষয়বস্তু নির্ধারণ ও লেখাপড়ার মধ্য দিয়ে নিজের মেধার বিকাশ ঘটিয়ে যে শিল্প প্রস্তুত করেন তাই একটি স্বতন্ত্র শিল্প হিসেবে নির্মিত হয়। নান্দনিকতা ও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই শিল্পই হয়ে ওঠে এক একটি কালজয়ী নির্মাণ। শান্তনু হালদার একজন প্রতিভাবান নির্মাতা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার ও পারফরমেন্স স্টাডিজ বিভাগ হতে স্নাতকোত্তর শেষ করে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রযোজক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। পাশাপাশি তিনি একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে ইতোমধ্যে নিজেকে প্রমাণ করেছেন। তবে বাণিজ্যিকভাবে এখনও তিনি কোন ছবির কাজ না করলেও প্রামান্য চলচ্চিত্র তৈরিতে তার অবদান অসামান্য। আবহমান বাংলার সংস্কৃতি, ঐতিহ্য তাকে সর্বদা রোমাঞ্চিত করে। মিশ্র সংস্কৃতির আগ্রাসনে আমাদের লোকজ সংস্কৃতি অর্থাৎ আমরা শিকড় থেকে বিচ্যুত হয়ে যাচ্ছি। যুগ যুগ ধরে যে সামাজিক পার্বণ, নৃত্য, গীত, গান, তথা আদি সংস্কৃতি এই ভূখ-ে লালিত হয়ে এসেছে তার সংরক্ষণ বা পরিচর্যার যথেষ্ট অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। অর্থাৎ আমরা আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতিকে নিয়ত হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছি। শান্তনু হালদারের চলচ্চিত্রের বিষয়বস্তু মূলত এই বিশেষ দিকটিকে নির্দেশ করে। তার এই সংস্কৃতিপ্রেম ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেন তার প্রামান্য চলচ্চিত্রে। আবহমান বাংলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ চৈত্র সংক্রান্তি উৎসব। টাঙ্গাইলের ভাদ গ্রামের জনপদের মানুষ এই উৎসবটিকে বিশেষভাবে পালন করে। এই উৎসবের একটি বিশেষ অংশ হলো ‘চড়ক পূজা’। ‘এই চড়ক পূজার কাহিনী অবলম্বনে তিনি নির্মাণ করেন ‘দ্য সার্কেল’ অর্থাৎ আবর্তন ছবিটি। নর ও নারী সত্তার ভাবদর্শন, দেহতত্ত্ব, সর্বপ্রাণবাদ ও কাল সম্পর্কিত দর্শন এই চলচ্চিত্রের মূল উপজীব্য। চলচ্ছবি প্রযোজিত প্রামাণ্য চলচ্চিত্রটি ১৬তম ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে স্পিরিচুয়াল বিভাগে গত ১৯ জানুয়ারি রাশিয়ান কালচারাল সেন্টারে প্রদর্শিত হয়। ২৮ মিনিট ব্যাপ্তিকালের চলচ্চিত্রটির পা-ুলিপি ও চিত্রনাট্য করেছেন নির্মাতা নিজেই। সম্পাদনা করেন রিপন সাহা। ক্যামেরায় ছিলেন খান আল মামুন ইসলাম ও শান্তনু হালদার। ধারা বর্ণনায় লালটু হোসেন। সাব টাইটেল নির্মাণ করেছেন শাহমান মৈশান ও জায়েদ সিদ্দিকী। সদ্য এই চলচ্চিত্রটি দক্ষিণ এশিয়ান শর্ট ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল ২০১৮তে অফিসিয়ালি নির্বাচিত হয়েছে প্রতিযোগিতার জন্য। আগামী ৩০ মার্চ ২০১৮ থেকে ০৯ এপ্রিল ২০১৮ পর্যন্ত কলকাতার নন্দনে অনুষ্ঠিত হবে। এই চলচ্চিত্রটি নিয়ে নির্মাতা নিজে যা বললেন, ‘দশাগ্রস্ত কৃত্যমূলক পরিবেশনার মাধ্যমে উৎসব সংশ্লিষ্ট মানুষ সব নিত্যকার জীবন ভুলে অনিত্যের দিকে যাত্রা করে। এই যাত্রার মধ্য দিয়ে নিত্যকার জীবনের বাঁচার নয়া রসদ খুঁজে পায় ওই উৎসবের মানুষ সব। প্রবহমান আগ্রাসী বৈশ্বয়িক সংস্কৃতির বাজারে আমরা যেভাবে সাঁতার কাটছি, তার বিপরীতে উল্টো ¯্র্েরাতে সাঁতার কাটায় ‘দ্য সার্কেল’ প্রামাণ্য চলচ্চিত্রটি।’ এর পূর্বে আমাদের আরেক লোকজ সংস্কৃতি নৌকাবাইচ যা আজ মৃতপ্রায়। অথচ এই সংস্কৃতি নতৃত্ব ও সমাজতত্ত্বের অনুষঙ্গ। নৌকাবাইচে গ্রামীণ সমাজের চিত্র ফুটে উঠত। গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর নিত্যদিনকার আবেগ-অনুভূতি নিয়ে রচিত নানা গান পরিবেশন হতো নৌকাবাইচে। এই নৌকাবাইচ নিয়ে তরুণ নির্মাতা শান্তনু হালদারের আরেকটি প্রামান্য চলচ্চিত্র ‘দ্য ওয়েভ’ ২০১১ সালে জার্মানির ডেলফিক আর্ট মুভি এ্যাডওয়ার্ডে মনোনীত হয়। ১৩৭টি দেশ থেকে বাছাইকৃত ১২টি সিনেমার মধ্যে ‘দ্য ওয়েভ’ স্থান করে নিয়েছিল। আজ চলচ্চিত্রের এই সঙ্কটময় সময়ে এ ধরনের মেধাবী তরুণ নির্মাতাদের এগিয়ে নিতে সংশ্লিষ্ট সকলকে উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন। মেধার যথাযথ ব্যবহারের পরিবেশ সৃষ্টি করাই একমাত্র লক্ষ্য হাওয়া উচিত।
×